Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিদ্যুতের তারে ঝুঁকির গেরস্থালি বাবুইয়ের

এলাকায় নারকেল এবং তালগাছ প্রায় উধাও। বাবুই যায় কোথায়? উলুবেড়িয়ার বেলতলায় বেশ কিছু বাবুই পাখি তাই বাসা বেঁধেছে বিদ্যুতের তারেই।

তারে ঝুলছে বাবুইয়ের বাসা। —নিজস্ব চিত্র।

তারে ঝুলছে বাবুইয়ের বাসা। —নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত জানা 
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৯ ০২:৪০
Share: Save:

বিদ্যুতের তারে তার ঘর-বসত। তাতেই দোল খাওয়া, মৃত্যুও!

এলাকায় নারকেল এবং তালগাছ প্রায় উধাও। বাবুই যায় কোথায়? উলুবেড়িয়ার বেলতলায় বেশ কিছু বাবুই পাখি তাই বাসা বেঁধেছে বিদ্যুতের তারেই।

এলাকার লোকজন দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যুতের তারে বাবুইয়ের বাসা দেখছেন। দেখছেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাখির মৃত্যুও। কিন্তু তার পরেও অবস্থা পাল্টায়নি। পরিবেশপ্রেমীরা অবশ্য মনে করছেন, পরিবেশ থেকে যদি গাছপালা কেটে ফেলা হয় এক দিন বাবুই পাখি শুধু বইয়ের পাতায় ছবি হয়েই থাকবে। বন দফতরের উলুবেড়িয়ার রেঞ্জ অফিসার উৎপল সরকার বলেন, ‘‘পশুপাখি সংরক্ষণের জন্য আমরা নিয়মিত প্রচার চালাই। বেআইনি ভাবে গাছ কাটলেও আইনগত ব্যবস্থা নিই। যে এলাকায় বাবুই পাখি বিদ্যুতের তারে বাসা বাঁধছে, সেই এলাকায় নতুন করে কেউ যাতে গাছ না-কাটে, সে জন্য নজরদারি চালানো হবে।’’

বছর ২০-২৫ আগেও বেলতলায় বহু নারকেল এবং তালগাছ ছিল। সেই সব গাছে বাসা বাঁধত বাবুই। কিন্তু ঘরবাড়ি এবং কল-কলকারখানা গড়ে ওঠায় কোপ পয়েছে সেই সব গাছে। নামমাত্র দু’-একটি টিকে রয়েছে। বাবুই তাই ঘরছাড়া হয়ে নতুন আস্তানা খুঁজেছে। এলাকার বছর ত্রিশের যুবক বলরাম সাউ বলেন, ‘‘সেই কবে থেকে এখানে বিদ্যুতের তারে বাবুই পাখির বাসা দেখছি। দেখতে ভালই লাগে। কাছের খড় ও হোগলা বন থেকে ওরা বাসা তৈরির সামগ্রী জোগাড় করে। কষ্ট হয় যখন ঝড়বৃষ্টিতে বাসাগুলো পড়ে যায় বা পাখিগুলো মরে যায়।’’

কেন বিদ্যুতের তারে ঝুঁকির জীবন বেছে নিচ্ছে বাবুই?

বাবুই পাখি টেলিগ্রাফের তারে বাসা বাঁধে না এমন নয়। কিন্তু যেখানেই বাসা বাঁধুক, কাছাকাছি জলাজমির খোঁজ করে তারা। পক্ষীবিদ সুমিত সেন জানান, উত্তর ভারত এবং ওড়িশার রুখু অঞ্চলে গাছের অভাবে তারে তারে ঝাঁক ঝাঁক বাবুইয়ের বাসা দেখা যায়। তিনি মনে করেন, ওই এলাকাতেও হাইটেনশন লাইনের কাছাকাছি যে সব গাছে বাবুই বাসা বাঁধত, তাদের সেই চেনা ঠিকানায় কোপ পড়তেই হাইটেনশন লাইনকে বেছে নিয়েছে তারা। তবে ওই বাসাগুলি অধিকাংশই মকশো হিসেবে তৈরি বলে মনে হয় পক্ষী বিশারদদের। বেশ কয়েকটি বাসা বানিয়ে নির্ভরযোগ্যটিই শেষ পর্যন্ত তার পাকা আবাস হয়। হাইটেনশন লাইনের অধিকাংশ বাসাই বাতিল করে দেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। পক্ষীপ্রেমী ও চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয় খাঁড়া মনে করেন, ‘‘বিদ্যুৎ তরঙ্গে ওদের ডিমেরও ক্ষতি হতে পারে। সব সময় সব ডিম থেকে ছানা না হতে পারে। এমন চললে আস্তে আস্তে বাবুই পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’

পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত জানান, সবাই চায় তার আদি জায়গায় বসবাস করতে। মানুষ থেকে পশুপাখি— সবাই। বাবুইরা নিজেদের পরিবেশে নারকেল বা তালগাছ পাচ্ছে না। কিন্তু সহজে বাসা তৈরির সরঞ্জাম পাচ্ছে। তাই বিদ্যুতের তারকেই বাসা বানানোর জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে। বেশি করে গাছ লাগানো উচিত। তাতে মানুষ, পশুপাখিও বাঁচবে।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Environment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE