Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাইরে থেকে লোক এনেই চলে না, চর্চা বিজেপিতে

উপনির্বাচনে দলের ভোট বেড়েছে। সামনে এ বার পুরভোট। তার আগে সাংগঠনিক ফাঁক-ফোকর নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়ে গেল রাজ্য বিজেপি-তে। সংগঠনের ভিত ছাড়া বাংলায় বড় শক্তি হয়ে ওঠার স্বপ্নপূরণ যে কঠিন, এ বারের উপনির্বাচন থেকেই বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ফলপ্রকাশের পরে দলের নেতা-কর্মীদের ঘরোয়া আলোচনায় ইতিমধ্যেই উঠে আসতে শুরু করেছে কিছু সমস্যার কথা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

উপনির্বাচনে দলের ভোট বেড়েছে। সামনে এ বার পুরভোট। তার আগে সাংগঠনিক ফাঁক-ফোকর নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়ে গেল রাজ্য বিজেপি-তে।

সংগঠনের ভিত ছাড়া বাংলায় বড় শক্তি হয়ে ওঠার স্বপ্নপূরণ যে কঠিন, এ বারের উপনির্বাচন থেকেই বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ফলপ্রকাশের পরে দলের নেতা-কর্মীদের ঘরোয়া আলোচনায় ইতিমধ্যেই উঠে আসতে শুরু করেছে কিছু সমস্যার কথা। যেমন, নেতা-কর্মীদের একাংশ বলছেন, বনগাঁ লোকসভা এবং কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভায় নির্বাচনী প্রচারে দলের পুরনো কর্মীদের যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তার মাসুলও দিতে হয়েছে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “সংগঠনকে বড় করতে গেলে নিশ্চয়ই লোক দরকার। কিন্তু যাকে পারব ডেকে এনে দায়িত্ব দিলে লোকে সে সব ভাল চোখে নেয় না। এই পথে চলতে গিয়ে তৃণমূলের কী দশা হয়েছে, দেখাই যাচ্ছে!” এই পরিস্থিতিতে সংগঠনকে মজবুত করার উপায় খুঁজতে আজ, বুধবারই বিজেপির বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠক বসছে।

দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ স্বীকার করছেন, উপনির্বাচনে তারকা-প্রচার হলেও নিচু তলায় সংগঠনে ঠিক মতো নজর দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে লোক আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কিছু নেতাকে। শুধু লোক আনতে পারলেই সাফল্য পাওয়া যাবে, অনেক ক্ষেত্রে সেটাই ধরে নেওয়া হয়েছিল! আবার উপনির্বাচনের আগে এমন কিছু কিছু ব্যক্তিত্বকে এমন এমন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, যাঁরা ওই কাজের জন্য উপযুক্ত কি না, খতিয়ে দেখাই হয়নি! তার উপরে দলের একাংশ বলছে, স্থানীয় স্তরে বনগাঁ ও কৃষ্ণগঞ্জে প্রচারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকে অন্য দল থেকে সদ্য এসেছেন। বিজেপির কর্মপন্থার সঙ্গে তাঁদের তেমন পরিচয় হয়নি। তাঁদের কারও কারও ভাবমূর্তিও স্বচ্ছ নয়। তার ফলে, স্থানীয় ভোটারদের অনেকে তাঁদের দেখে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আবার সম্পূর্ণ অন্য ক্ষেত্র থেকে যাওয়া কিছু নেতা-কর্মী দুই নির্বাচনী কেন্দ্রের স্থানীয় রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য ধরতে পারেননি। এ সব দেখে গোড়া থেকে দলের সঙ্গে থাকা কিছু লোক কিছুটা নিষ্ক্রিয় থেকেছেন।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের যুক্তি, হিন্দি বলয় যেমন তাঁদের কাছে মূল ভিত্তি, পূর্ব ও দক্ষিণ ভারত তা নয়। তাই পশ্চিমবঙ্গের মতো ‘নন-বেস এরিয়া’য় সাফল্য পেতে গেলে বাড়তি পরিশ্রম করতে হবে। সংগঠন ছাড়া তা অসম্ভব। উপনির্বাচনে জয় অধরা থাকার পরে দলের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের একাংশও বলছেন, তারকাদের দেখতে ভিড় হয়। কিন্তু একক ভাবে ভোট তাঁরা টানেন না। ভোট করতে হয় সংগঠন দিয়ে। উপনির্বাচনে শুধু তারকা, বাইরে থেকে কেন্দ্রীয় নেতা নিয়ে আসতে গিয়ে স্থানীয় স্তরে মানুষের কাছে পৌঁছনোর কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে।

সাংগঠনিক খামতি কাটাতে এখন কোন পথে যাবে বিজেপি? দলের রাজ্য নেতাদের একাংশের মত, নতুনদের দলে টানতে গিয়ে পুরনো কর্মীদের পিছনে ঠেলে দিলে চলবে না। পাশাপাশি, সদস্য বাড়িয়ে বুথ স্তরে সংগঠন মজবুত করতে হবে। এমনিতেই ৩১ মার্চ পর্যন্ত গোটা দেশে বিজেপির সদস্যকরণ অভিযান চলবে। এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে বিজেপির ২০ লক্ষ সদস্য হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ৫০ লক্ষ। এক রাজ্য নেতার কথায়, “সারা বছর মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার জন্য দলীয় কর্মী দরকার। এত দিন রাজ্যে বিজেপির অবস্থা ভাল ছিল না। দল ভোটে লড়লেও জেতার স্বপ্ন দেখত না। এখন আমরা জেতার জন্য লড়ছি। তাই মন দিয়ে সংগঠন গড়তে হবে।”

বিজেপি নেতৃত্বের আরও বক্তব্য, তৃণমূল এখনও সন্ত্রাসের রাস্তা ছাড়েনি। কল্যাণী এবং গয়েশপুরে শাসক দলের সন্ত্রাসের ফলে ভোটাররা স্বাধীন ভাবে নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারেননি। তবু কল্যাণীতে কিছুটা সংগঠন গড়ে ওঠায় তৃণমূলের ভোট সেখানে কিছুটা কমানো গিয়েছে। সর্বত্রই এ ভাবে সংগঠনে জোর দেওয়ার কথা এখন উঠে আসছে দলের অন্দরে।

বনগাঁয় সুব্রত ঠাকুরকে প্রার্থী করায় বিজেপি-র অন্দরে ক্ষোভ ছিলই। সেখানে ফল আশানুরূপ না হওয়ায় ওই ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি পড়েছে। বনগাঁয় মতুয়া ভোট নির্ধারক শক্তি। তাঁরা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের অধিকার দাবি করছেন। আর সেটা বিজেপি-র অনেক দিনের আন্দোলনের বিষয়। আবার সীমান্ত অঞ্চল হিসাবে অনুপ্রবেশ সেখানে অন্যতম সমস্যা। বিজেপি বরাবরই অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সরব। কিন্তু এত রকম ‘ইতিবাচক’ দিক থাকা সত্ত্বেও প্রার্থী বাছাই ভুল হওয়ায় ওই কেন্দ্রে দল তৃতীয় হয়েছে বলে মনে করছেন বিজেপি-র একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ওই জেলারই বসিরহাট দক্ষিণের উপনির্বাচনে শমীক ভট্টাচার্য জিতে এসেছেন। এখান থেকেই স্পষ্ট, ভাল প্রার্থী থাকলে উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত এলাকায় জয় সম্ভব।

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ অবশ্য বারেবারেই বলছেন, উপনির্বাচনে দলের অগ্রগতি অব্যাহত। অল্প সময়ে দলের ভোট অনেক বেড়েছে। তাঁর অনুগামীরাও বলছেন, উপনির্বাচনে লড়াই হয়েছে একেবারে ঠিক পথে। এ বার তাঁদের লক্ষ্য সিপিএমকে একেবারে শেষ করে দেওয়া! রাহুলবাবুর ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “সিপিএমকে শেষ করে দিতে পারলে তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের মুখোমুখি লড়াই হবে! তখনই জেতা সহজ হবে।”

তবে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, রাহুল-শিবিরের এই সমীকরণটা কি কিঞ্চিৎ অতি-সরলীকরণ হয়ে গেল না? তাঁদের মতে, বড় লড়াইয়ে নামার আগে এই প্রবণতা আদৌ ভাল লক্ষণ নয়। কারণ তা আত্মতুষ্টির জন্ম দেয়। আর কে না জানে, আত্মতুষ্টিই শেষ পর্যন্ত ডেকে আনে সর্বনাশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

by election result bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE