Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

তপ্ত আবহে আজ বিজেপির বন্‌ধ, প্রস্তুত শাসকও

এ বার ইসলামপুরে গুলিতে দুই ছাত্রের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজ্যে সকাল ছ’টা থেকে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ করতে বিজেপির চ্যালেঞ্জ আর তা রুখতে প্রশাসন এবং শাসক তৃণমূলের প্রস্তুতি মিলিয়ে সাজ সাজ রবে দীর্ঘদিন পরে বন্‌ধের রাজনীতি বড় মাত্রা পেয়েছে।

উত্তেজনা: এবিভিপি সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। মঙ্গলবার ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

উত্তেজনা: এবিভিপি সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। মঙ্গলবার ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৯
Share: Save:

আজ, বুধবার বিজেপি’র ডাকা ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্‌ধ ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়েছে। ইদানীং কোনও বন্‌ধের ডাকেই জনজীবনে খুব বেশি প্রভাব পড়ে না। কয়েকদিন আগে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কংগ্রেস এবং বাম দলগুলির ডাকা ভারত বন্‌ধেও তেমনই হয়েছে। কিন্তু এ বার ইসলামপুরে গুলিতে দুই ছাত্রের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজ্যে সকাল ছ’টা থেকে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ করতে বিজেপির চ্যালেঞ্জ আর তা রুখতে প্রশাসন এবং শাসক তৃণমূলের প্রস্তুতি মিলিয়ে সাজ সাজ রবে দীর্ঘদিন পরে বন্‌ধের রাজনীতি বড় মাত্রা পেয়েছে। ফিরেছে রাতে বিভিন্ন সরকারি অফিসে দল বেঁধে থেকে পরদিন বন্‌ধ ভাঙার প্রস্তুতি।

বিদেশে থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। বন্‌ধ সফল করতে কোনও জোরজবরদস্তি বরদাস্ত করা যাবে না বলে মঙ্গলবার সব জেলার পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। প্রতিটি জেলায় উপযুক্ত সংখ্যায় পুলিশকর্মী মোতায়ন সহ আপৎকালীন সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে। কোমর বেঁধেছে কলকাতা পুলিশও। পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য।

অন্য দিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বিজেপির কর্মীরা রাস্তায় থাকবেন। কলকাতায় এবং জেলায় সকাল থেকে মিটিং-মিছিল হবে। প্রশাসন এবং তৃণমূল বন্‌ধ বানচাল করতে চাইলে, বিজেপি কর্মীরা তা প্রতিহত করবেন।’’ মঙ্গলবার কলকাতায় এবিভিপির মিছিলে পুলিশের সঙ্গে কর্মীদের ধস্তাধস্তি মনে করিয়ে দিলীপবাবুর মন্তব্য, ‘‘এটা ছবির ট্রেলার। আসল ছবি কাল দেখা যাবে।’’

আরও পড়ুন: বন্ধ রাখলে ভুগতে হবে, স্কুলগুলিকে হুঁশিয়ারি পার্থের​

রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের পাল্টা হুঁশিয়ারি, ‘‘তৃণমূল ইচ্ছে করলে ওদের পিঁপড়ের মতো টিপে মারতে পারে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমাদের কর্মীরা প্ররোচনায় পা না দিয়ে রাজ্য সচল রাখবেন।’’

এই বন্‌ধের বিরোধিতায় সরব সিপিএম এবং কংগ্রেসও। তবে উভয়েই বিজেপির পাশাপাশি বিঁধেছে সরকার এবং তৃণমূলকে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘সবাইকে বলছি, এই বন্‌ধ প্রত্যাখ্যান করুন। মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ থেকে জল ঘোলা করেছেন। আর বিজেপি এখানে সেই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, আজ জেলায় জেলায় অধিকার যাত্রা এবং কলকাতায় ভিক্টোরিয়া হাউস অভিযান উপলক্ষে বামপন্থীরা রাস্তায় থাকবেন।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের বক্তব্য, ‘‘ছাত্রদের উপর গুলি চালনার বিরুদ্ধে যে কোনও প্রতিবাদের প্রতি আমাদের সমর্থন আছে। কিন্তু সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উদ্দেশ্যে বিজেপির বন্‌ধে আমাদের কোনওরকম সমর্থন নেই।’’

এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং সচল রাখতে প্রশাসন প্রস্তুত। প্রতিটি জেলাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্কুল, কলেজ-সহ কোথাও কোনও সহযোগিতার প্রয়োজন হলে পুলিশ প্রস্তুত থাকবে। জোর করে বন্‌ধ করতে গেলে কড়া পদক্ষেপ করবে পুলিশ।’’

এই প্রথম বন্‌ধকে কেন্দ্র করে আগের ও পরের দিন মিলিয়ে মোট তিন দিনের ছুটি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। বন্‌ধের দিন অর্ধ বা পূর্ণদিবস ছুটিও গ্রাহ্য হবে না।

জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে বুধবার কলকাতা জুড়ে মোট চার হাজার পুলিশ মোতায়েন রাখবে লালবাজার। থাকবেন যুগ্ম নগরপাল (সদর) সুপ্রতিম সরকার জানান, সব গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। থাকছে ৪২৭টি পুলিশ পিকেট এবং ২৫টি ডিভিশনাল মোবাইল। থাকছে র‌্যাফ ও বেশি সংখ্যায় হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড।

মঙ্গলবার বেলতলায় পরিবহণ ভবনে বাস, মিনিবাস, অটো এবং ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা। সেখানে বনধের দিনে সরকারের তরফে রাস্তায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে জানিয়ে আশ্বস্ত করা হয়। ভোর ৫টা থেকে পরিবহণ দফতরের কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। পরিবহণমন্ত্রী নিজে সকাল ৮ টা থেকে নিজে কন্ট্রোলরুমে হাজির থাকবেন। কলকাতা এবং শহরতলিতে প্রায় ১২০০ র কাছকাছি বাস রাস্তায় নামবে। চলবে বাড়তি ট্রাম ও ফেরি।

বিজেপি-র ডাকা বনধ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ‘অল ইন্ডিয়া মাইনরিটি ফোরাম’এর মামলার শুনানি মঙ্গলবার হয়নি। এ দিন হাইকোর্টের অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত ও বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ আবেদনকারীকে নির্দেশ দেয়, মামলার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষকে এ দিনের মধ্যে সঠিক পদ্ধতিতে নোটিস পাঠাতে হবে। সব পক্ষ হাজির থাকলে তবেই আদালত মামলা শুনবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC Bandh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE