Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
NIA

জড়িত রোহিঙ্গারা, তদন্তে আসুক এনআইএ: সন্দেশখালি নিয়ে এ বার অন্য ভাবে সক্রিয় হচ্ছে বিজেপি

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর, উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি-সহ বেশ কিছু এলাকায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল এবং প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে।

সায়ন্তন বসু।

সায়ন্তন বসু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৯ ২২:০৮
Share: Save:

পুলিশ তো নয়ই, সিবিআই-ও নয়। সন্দেশখালি-কাণ্ডে এনআইএ তদন্ত চাইছে বিজেপি। এই দাবি বসিরহাটে গিয়ে এর আগে প্রকাশ্যেই তুলেছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতারা। তবে এ বার আর ভাষণে নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যোগাযোগ করে এনআইএ-কে নিয়ে আসার কথা ভাবা হচ্ছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। সন্দেশখালির ঘটনায় রোহিঙ্গা যোগ রয়েছে বলে বিজেপির দাবি এবং চাইলে সেই সূত্র ধরেই এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

তৃণমূলের যে নেতাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি করছে বিজেপি, সন্দেশখালির সেই শেখ শাজাহানের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের দাবি, ভেড়ি এলাকায় নিজের দাপট বহাল রাখতে শাজাহান আশ্রিত দুষ্কৃতী বাহিনী সব সময় সক্রিয় এবং সেই বাহিনীতে রোহিঙ্গাদেরও ঢোকানো হয়েছে। আর গত ৮ জুন সন্দেশখালিতে ঘটে যাওয়া রক্তাক্ত সংঘর্ষে অভিযোগের আঙুলটা শাজাহান-বাহিনীর দিকেই উঠেছে। এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার জন্য এই অভিযোগই যথেষ্ট বলে মনে করছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা।

মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে এবং ভারতে ঢোকার চেষ্টায় ছিল। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রায় অবাধেই ঢুকতে দিয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার স্পষ্ট জানিয়েছিল যে, রোহিঙ্গাদের জন্য এ দেশের দরজা খোলা নয় এবং তাদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে না। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া যাবে না, প্রত্যেকটা রাজ্যকেও সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর, উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি-সহ বেশ কিছু এলাকায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল এবং প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: উলুবেড়িয়ায় রেলের ওভারব্রিজের কাজের জন্যে বাতিল দূরপাল্লার এবং লোকাল ট্রেন

বিজেপি তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে সরব হতে শুরু করে। এ বার সন্দেশখালির গোলমালে রোহিঙ্গা যোগ থাকার তত্ত্ব স্থানীয়দের একাংশের মধ্যে থেকেই উঠে আসায় বিজেপি আরও বড় অস্ত্র হাতে পেয়ে গিয়েছে। একে সন্দেশখালি সীমান্তবর্তী এলাকা। তার উপরে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে সেই এলাকায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ। সব শেষে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ এবং সে সংঘর্ষে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের নাম জড়িয়ে যাওয়া। সব দিক থেকেই সন্দেশখালির পরিস্থিতিকে জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে উদ্বেগজনক হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব বলে বিজেপি নেতাদের একাংশ মনে করছেন। সেই যুক্তিতেই এনআইএ তদন্তের দাবি তোলা হচ্ছে।

কিন্তু শুধু স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতেই কি এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিয়ে দেবে কেন্দ্র? বিজেপি নেতারা বলছেন, শুধু দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে তাঁরা রোহিঙ্গা যোগের খবর পাননি। স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনও ৮ জুনের সংঘর্ষে রোহিঙ্গা যোগের বিষয়ে নিশ্চিত এবং প্রশাসনের কর্তারা প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও প্রশাসনিক সূত্র মারফত সে খবর তাঁদের কাছে পৌঁছচ্ছে বলে বিজেপি নেতাদের দাবি। সেই সব তথ্য প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও বিজেপির অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে।

রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু আগেই বসিরহাটে গিয়ে এনআইএ তদন্তের দাবি তুলেছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি ফের আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘সন্দেশখালির ঘটনায় আমরা এনআইএ তদন্তই চাইছি। বিজেপি কর্মীদের উপরে যে ভয়ঙ্কর আক্রমণ ওখানে হয়েছে, যে ভাবে বিজেপি কর্মীদের খুন করা হয়েছে এবং লাশ গায়েব করে দেওয়া হয়েছে, তাতে শেখ শাজাহানের আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের হাত রয়েছে বলে নানা সূত্র থেকে আমরা খবর পাচ্ছি। সুতরাং এনআইএ তদন্তই হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করছি।’’ এই দাবি নিয়ে তাঁরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যোগাযোগ করছেন কি না, তা নিয়ে অবশ্য সায়ন্তন বসু কোনও মন্তব্য এ দিন করতে চাননি।

আরও পড়ুন: রাস্তা আটকে পুজো নয়, নির্দেশ দিচ্ছে নবান্ন

বিজেপির একটি অংশ আবার সিবিআই তদন্ত নিয়েও আলোচনা করছে। সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু থেকেই যে ভাবে বিজেপির উপরে দায় চাপাচ্ছেন, তাতে রাজ্য পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করতে পারবে বলে বিজেপি নেতারা বিশ্বাস করেন না। তাই সিবিআই তদন্তের দাবি অনেকে তুলছেন। কিন্তু সিবিআই তদন্তের নির্দেশ রাজ্য সরকার যে দেবে না, তা নিয়ে সংশয় কমই। সে ক্ষেত্রে আদালতে গিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ আদায় করতে হবে। সেই নির্দেশ শেষ পর্যন্ত সম্ভব হবে, নাকি আটকে যাবে, সে বিষয়ে বিজেপি নেতারা নিশ্চিত হতে পারছেন না।

শুক্রবার ন্যাজাটে যাচ্ছেন বিজেপির রাজ্য নেতারা। সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভারতী ঘোষের নেতৃত্বে সেখানে জনসভা হবে। সেই জনসভা থেকে ফের এনআইএ তদন্তের দাবি তোলা হতে পারে বলেও বিজেপি সূত্রের খবর।

(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেবাংলায় খবরপেতে চোখ রাখুন আমাদেররাজ্যবিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE