প্রতীকী ছবি।
ফেসবুক-বিজেপি আঁতাঁতের অভিযোগ নিয়ে দেশ তোলপাড়।
বিরোধীরা অভিযোগ করছে, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটেও ফেসবুক-সহ সব সামাজিক মাধ্যমকে ‘সোজা’ এবং ‘বাঁকা’ দু’রকম ভাবেই কাজে লাগাবে বিজেপি। তার জন্য গেরুয়া শিবিরের মূল সেনা তাদের আইটি এবং সোশ্যাল মিডিয়া সেল।
রাজ্য বিজেপির আইটি এবং সোশ্যাল মিডিয়া সেলের নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করছেন, কোনও ‘বাঁকা’ পথ তাঁদের নেই। ‘সোজা’ রাস্তায় তাঁরা লক্ষ্যভেদ করবেন। কিন্তু বিরোধীরা আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের ভাষণের ভিডিয়ো তুলে ধরে সুর চড়াচ্ছেন। ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাজস্থানের কোটায় বিজেপির সভায় শাহ বলেছিলেন, ‘‘আমরা জনতাকে যে কোনও বার্তা দিতে পারি, তা মিষ্টি হোক বা টক হোক, সত্য হোক বা মিথ্যা হোক। এটা আমরা পারি, কারণ আমরা ৩২ লাখ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়ে রেখেছি।’’
আরও পড়ুন: ‘ফেসবুকে ভোটের খেলা’, বিস্ফোরক বহিষ্কৃত কর্মী
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে জনসংযোগ এবং জনতার কাছে দলের নীতি, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প এবং রাজ্য সরকারের ‘ব্যর্থতা’ ও ‘অন্যায়’-এর খতিয়ান তুলে ধরাই বিজেপির ‘সোজা’ পথ। কেন্দ্রীয় থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত ধাপে ধাপে বাহিনীও সাজানো। রাজ্য বিজেপির আইটি এবং সোশ্যাল মিডিয়া সেলের নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, রাজ্য এবং প্রতি বিধানসভা, সাংগঠনিক জেলা, মণ্ডল ও বুথে এক জন করে প্রচার প্রমুখ ও সহ প্রচার প্রমুখ আছেন। তাঁদের নিচে রয়েছেন কর্মীবৃন্দ। অনেকটা কর্পোরেট সংস্থার কর্মীশৃঙ্খলের মতো গঠন। ‘নরেন্দ্র মোদী কা নাম, কেন্দ্রীয় সরকার কা কাম’— এই স্লোগান সম্বল করে তাঁরা প্রচার করেন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম-সহ বিভিন্ন মাধ্যমে। যেখানে গত কয়েক মাস ধরে প্রচারের প্রধান বিষয় করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের ভূমিকা, লকডাউন পর্বে রেশনে দুর্নীতির অভিযোগ, আমপান-দুর্গতদের ক্ষতিপূরণ-বঞ্চনা এবং রাজ্যে গণতন্ত্রের ‘দৈন্যদশা’। প্রচারের জন্য বিজেপির রাজ্য, জেলা এবং বিধানসভা স্তরে আলাদা আলাদা ফেসবুক পেজ রয়েছে। আলাদা আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে কেন্দ্র থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: চিহ্নিতকরণে দেরিতেই কি কমছে না আইসিইউ-শয্যা?
রাজ্য বিজেপির আইটি এবং সোশ্যাল মিডিয়া সেলের বক্তব্য, প্রতিটি বিষয়ে প্রচারের অডিয়ো, ভিডিয়ো, ইনফোগ্রাফিক বা লেখা—তৈরি হয় তাদের বা কেন্দ্রীয় স্তরে। তার পর সেগুলি পরিকল্পনা মতো নির্দিষ্ট জেলা, বিধানসভা, মণ্ডল এবং বুথ স্তরে দেওয়া হয় সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর উদ্দেশ্যে।
যেমন পশ্চিম বর্ধমানে বিজেপির শক্তিকেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা স্তরের বিভিন্ন পদাধিকারী এবং দলের সদস্যদের ‘বিজেপি আইটি সেল’ শীর্ষক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করা হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি (আসানসোল) লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, ‘‘প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে দলীয় স্তরে এবং জনসাধারণের মধ্যে সংযোগ নিবিড় করতে আমরা সব সময় উদ্যোগী।’’ পূর্ব বর্ধমানে সাংগঠনিক, বিধানসভা ও মণ্ডল—এই তিন স্তরের প্রতিটিতে আইটি সেলের চার জন করে রয়েছেন। ওই কাজের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। কম্পিউটারে দক্ষ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় দড় হওয়াও প্রয়োজন। আইটি সেলের ওই কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই কর্মীদের ছড়ানো পোস্টে যে সব অপরিচিত ব্যক্তি উত্তর দেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। তথ্য বিনিময় করেন বিজেপির সম মনোভাবাপন্ন সংগঠন এবং নানা সমীক্ষক দলের সঙ্গেও।
আবার মুর্শিদাবাদে বিজেপির দু’টি সাংগঠনিক জেলায় প্রায় ৪০০ জন দলের আইটি সেলে কাজ করছেন। প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান ও স্মার্টফোন রয়েছে এবং বাংলায় লিখতে পারেন, দলের এমন কর্মীদের আইটি সেলে নিয়োগ করা হয়েছে।
তবে এই পথই কি সব? বিরোধীদের অভিযোগ অবশ্য উল্টো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy