ফাইল চিত্র।
বিজেপির অঙ্ক বলছে, রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র পাওয়ার সম্ভবনা তাদের যথেষ্ট। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সেই অঙ্ক আদৌ মিলছে কি? প্রশ্নটা উঠছে দলের কর্মীদের ভিতরেই।
বিজেপির অঙ্ক বলছে, রানাঘাটে শুধু মতুয়া ভোট রয়েছে তা-ই নয়, ওই কেন্দ্রের প্রায় অর্ধেকের বেশি ভোটার পূর্ববঙ্গ থেকে আসা। উগ্র হিন্দুত্বের তাস খেলে তাঁদের ভোট নিজেদের টানতে পারবে বলে আশা করছেন জেলা নেতাদের বড় অংশ। এই কেন্দ্রে মুসলিম ও খ্রিস্টান মিলিয়ে সংখ্যালঘু ভোটার মাত্র আট শতাংশ মতো। ফলে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক এই কেন্দ্রে তৃণমূলকে আদৌ সুবিধা দিতে পারবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা।
বিজেপি নেতত্বের এই অঙ্ক কিন্তু উড়িয়ে দিতে পারছেন না তৃণমূলের জেলা নেতারাও। তাঁদেরও আশঙ্কা, বিজেপি এবং আরএসএস সত্যিই উগ্র হিন্দুত্বের তাস খেলে, বেশ কিছু ভোটারের ‘বিপথগামী’ হওয়ার সম্ভবনা আছে। হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ইতিমধ্যেই আগের চেয়ে শক্তিবৃদ্ধি করেছে। রানাঘাট, ফুলিয়া, বাদকুল্লায় তারা একক ভাবে রামনবমী পালন করেছে। বেশ কয়েক জন সক্রিয় নেতার বাস এই কেন্দ্রে। একেবারে তৃণমূল স্তরে সংগঠন গড়তে শুরু করেছেন তাঁরা বহু আগে থেকেই। উগ্র হিন্দুত্ববাদী কোনও মুখকে এ বার রানাঘাট কেন্দ্রে প্রার্থী করার জন্যও সঙ্ঘের একটা অংশ থেকে দাবি উঠতে পারে বলে খবর।
কিন্তু এত গেল নিছকই অঙ্কের হিসাব। তা বাস্তবায়িত করতে কতটা সক্ষম বিজেপি? যে সংগঠনিক শক্তি ও ঐক্যের প্রয়োজন, এই কেন্দ্রে কি তা কি আদৌ আছে তাদের?
দলেরই একটা অংশ মনে করছে, তারা আদৌ সেই জায়গায় নেই। তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলকে হাতিয়ার করে বিজেপি জয়ের স্বপ্ন দেখছে বটে, কিন্তু তারা নিজেরাই গোষ্ঠী কোন্দলে জর্জরিত। দলের একাংশের দাবি, জগন্নাথ সরকার দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হওয়ার পরে সংগঠন শক্তিশালী হওয়ার বদলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দুর্বল হয়েছে। এই মুহূর্তে অন্তত অন্তত ছ’টি গোষ্ঠী সেখানে সক্রিয়। প্রাক্তন জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দীর গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা দিব্যেন্দু ভৌমিক থেকে জেলা পর্যবেক্ষক তথা রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোজ বিশ্বাস, কৃষ্ণগঞ্জ উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী মানবেন্দ্র বিশ্বাস, মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ নিশীথ বিশ্বাস, নিরঞ্জন বিশ্বাসেরা তাঁর কট্টর বিরোধী। এবং এঁরা প্রায় সকলেই জগন্নাথকে সরিয়ে নিজেরা সভাপতি হতে সক্রিয়। নিশীথের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব তো মারপিট এবং মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে।
তার উপরে, গত প্রায় চার মাস ধরে দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা কমিটির অস্তিত্ব নেই। দলীয় সূত্রের খবর, মাস চারেক আগে জগন্নাথ জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে নিজের মত করে একটা খসড়া কমিটির প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। যা এখনও অনুমোদন পায়নি। নিচুতলার প্রশ্ন, এই পরিস্থিতিতে দলের নেতারা জয়ের খোয়াব দেখছেন কী করে? শুধু মাত্র তৃণমূলের ঘরোয়া কোন্দলেই কি সব জাদুর মতো হাতে এসে যাবে?
জগন্নাথ অবশ্য গোষ্ঠীকোন্দল ও সে কারণে সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা মানতে রাজি নন। তাঁর দাবি, “মাঝে সামান্য মতপার্থক্য হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তা মিটে গিয়েছে। ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করে আমরা রানাঘাট কেন্দ্র ছিনিয়ে নেব।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের টিপ্পনী, “বিজেপি স্বপ্নের পোলাওয়ে যত খুশি ঘি ঢালুক! কে মাথা ঘামাচ্ছে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy