সাত্তোরের নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলছেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
একই ঘরে পাশাপাশি বসে নির্যাতিতা ও নির্যাতনে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার। সামনে বসে বীরভূম জেলা পুলিশের ডিএসপি আব্দুল আজিম।
মাঝে পেরিয়েছে পাঁচ মাস। রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলা সাত্তোরের সেই বিজেপি সমর্থক পরিবারের বধূকে নির্যাতনের ঘটনার আঁচ এখন অনেকটাই স্তিমিত। জেলা পুলিশের বিভাগীয় তদন্তের জন্য শুক্রবার ফের মুখোমুখি হলেন নির্যাতিতা এবং অভিযুক্ত অফিসার কার্তিকমোহন ঘোষ। শুক্রবার সিউড়িতে জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে তাঁরই নির্দেশে অভিযোগকারিণী ও অভিযুক্তদের মুখোমুখি বসিয়ে পাঁচ মাস আগের সেই ঘটনা জানার চেষ্টা করলেন ডিএসপি।
কী হয়েছিল সে দিন? গত ১৭ জানুয়ারি বোমাবাজিতে অভিযুক্ত পাড়ুই থানার সাত্তোরের এক বিজেপি সমর্থককে খুঁজতে বর্ধমানের বুদবুদ থানার কলমডাঙা গ্রামে তাঁর কাকিমার বাপের বাড়িতে যায় বীরভূম জেলা পুলিশের এক বিশেষ দল। ওই কর্মীকে না পেয়ে তাঁর কাকিমাকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ ও তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী অকথ্য অত্যাচার চালায় বলে অভিযোগ। রাজ্য সরকার সিআইডি-কে তদন্তভার দেয়। সিআইডি-র চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসাবে স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের (এসওজি) ওসি কার্তিকমোহন ঘোষ, দুই কনস্টেবল দীপক বাউরি ও কাশীনাথ দাস, ইলামবাজার থানার মহিলা কনস্টেবল আলপনা লোহারের নাম রয়েছে। সিউড়ি সিজেএম আদালতে মামলাও শুরু হয়েছে। যদিও বৃহস্পতিবার প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের দিন অনুপস্থিত ছিলেন নির্যাতিতার স্বামী।
পুলিশ কর্তার পাঠানো চিঠি পেয়ে এ দিন অবশ্য স্বামীকে নিয়ে এসপি অফিসে হাজির ছিলেন নির্যাতিতা। বিভাগীয় তদন্তের জন্য ডাক পাওয়া কার্তিকমোহন ঘোষ (অভিযোগের পরেই তাঁকে ক্লোজ করা হয়) এবং দীপক ও কাশীনাথও ছিলেন। দুপুর ১২টা নাগাদ এসপি অফিসে আসেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ও। নির্যাতিতাকে আইনি পরামর্শ দিতে কলকাতা হাইকোর্টের এক আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন রূপা। কাচের দরজার ভিতরে পুলিশকর্তার বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব কিন্তু সাবলীল ভাবেই দিয়েছেন নির্যাতিতা। দরজার বাইরে থেকে ঠায় তাঁকে সাহস জুগিয়ে গেলেন রূপা।
প্রথম দিকে রূপা ওই ঘরে ঢুকতে চেয়েছিলেন। ডিএসপি বলেন, বিভাগীয় তদন্তের মাঝে তাঁকে ওই ঘরে থাকার অনুমতি দেবে না পুলিশ। এক জন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে ঊর্ধ্বতন পুলিশকর্তা তদন্ত করবেন সেটাই রীতি। এই বিশ্বাস রাখতে হবে। রূপা তখন বলেন, ‘‘আইনজীবীকে অন্তত ঢুকতে দিন।’’ সেটাও মানেননি ডিএসপি। সেখানে তখন সংবাদমাধ্যমেরও ভিড়। বেশ কিছুক্ষণ পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ রায় এবং সিউড়ি থানার আইসি প্রথমে সাংবাদিকদের ও পরে রূপাকে ওখান থেকে সরে যেতে বলেন। ক্ষুব্ধ রূপা দাবি করেন, নির্যাতিতা যে বক্তব্যের উপর সই করেছেন, সেই কপি তাঁকে দেওয়া হোক। পুলিশ সেই দাবিও মানেনি। জেলা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘বাইরের কেউ স্টেটমেন্টের কপি চাইতে পারেন না। এটা এক্তিয়ার বহির্ভূত। তা ছাড়া, পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে নির্যাতিতা এক জন সাক্ষী। তিনি সাক্ষ্য দিতেই এ দিন এসেছিলেন। তিনি কেন আইনজীবী নিয়ে আসবেন? বরং যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁরা প্রয়োজনে আইনজীবীর সাহায্য নিতে পারেন। ’’
পরে রূপা জানান, তিনি কখনওই জোর করে ওই ঘরে ঢুকতে চাননি। শুধু চেয়েছিলেন, নির্যাতিতাকে ধমকে অন্য কিছু বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা পুলিশ করে কিনা, সেটা দেখতে এক জন আইনজীবী ওখানে থাকুন। রূপার কথায়, ‘‘আসলে ঘটনার এত দিন পর বিভাগীয় তদন্ত করতে এগিয়ে আসার পিছেন যে সততা ও নিরপেক্ষতা পুলিশ দেখাতে চাইছে, বিগত কয়েক মাসে বীরভূম পুলিশের ভাবমূর্তি কিন্তু সেটা প্রমাণ করে না।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, পুলিশই তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। যদিও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।
সাক্ষ্য দিয়ে বেরিয়ে নির্যাতিতা বলেন, ‘‘আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সেদিন কী হয়েছে। সব বলেছি। কার্তিক ঘোষও আমার কাছে জানতে চান, তিনি ঘটনার দিন ছিলেন কিনা, পুলিশের গাড়িতে আর কে কে ছিল? আমি ডিএসপি-কে বলেছি, চার্জশিটে নাম থাকা এঁরা তো ছিলেনই, সঙ্গে আরও পুলিশ এবং বাইরের লোক ছিল।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তকারী আধিকারিকে আরও একজন পদস্থ পুলিশ কর্তার হাজির থাকার কথা বলেছেন নির্যাতিতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy