রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুহি চৌধুরী।ফাইল চিত্র।
সন্ধে সাড়ে ৬টা। ঘরে প্রথমে ডোরবেল বাজাতে সাড়া মিলল না। তার পর আস্তে ঠেলা দিতেই খুলে গেল দরজা। আবছা অন্ধকার ঘরে দেখা গেল চেয়ারে জামাকাপড় মেলা। একটু অপেক্ষার পরে দরজার কাছে উঁকি দিল একটি বিরলকেশ মাথা এবং ক্লিন শেভ্ন মুখ। সঙ্গে সঙ্গে ফের মিলিয়ে গেল আবছা আঁধারে। ‘‘নাড়ুদা, একটু বাইরে আসবেন? সামান্য প্রশ্ন ছিল।’’ সাংবাদিকের অনুরোধের মুখে দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল দরজা। সঙ্গে ভেসে এল অবাঞ্ছিত আগন্তুককে তাড়ানোর ধ্বনি— ‘‘হেই।’’
শিশু পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত বিজেপি নেত্রী জুহি চৌধুরী এখন বেপাত্তা। তবে কলকাতায় রাজ্য বিজেপি দফতরে একটি ঘরে দেখা মিলল জুহির বাবা রবীন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর, যিনি ‘নাড়ু’ নামেই পরিচিত।
সোমবারের মতো মঙ্গলবারেও তিনি বিজেপি দফতরে এসেছিলেন দুঃসময়ে সাহায্য চাইতে। সম্ভবত সাংবাদিকদের এড়াতেই এক ফাঁকে ঢুকে পড়েছিলেন ঘরটিতে। এক দফা নাটকের পরে দরজা বন্ধ করে দেন। একটু পরে দরজা খুলে বেরিয়ে এসে আবার ভিতরে ঢুকে যান তিনি। তার পর মিনিট পাঁচ-সাত সাংবাদিকদের সঙ্গে দরজা নিয়ে চলে ঠেলাঠেলি। তিনি প্রাণপণে দরজা বন্ধ করার চেষ্টা করছেন। এ পারে সাংবাদিকরা ঢোকার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যেই আছড়ে পড়ছে একের পর এক প্রশ্ন— ‘‘এখন কোথায় আছেন জুহি?’’ ‘‘অভিযোগ মিথ্যা হলে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে তা বলছেন না কেন?’’ ‘‘তৃণমূল আপনাকেও গ্রেফতারের দাবি তুলছে। আপনি কী বলবেন?’’ সব প্রশ্নের একটাই জবাব আসে, ‘‘যা বলার, দল বলবে।’’ কিন্তু শিশু পাচারের অভিযোগ তো দলের বিরুদ্ধে ওঠেনি, উঠেছে আপনার ও আপনার মেয়ের বিরুদ্ধে। ফের বন্ধ হয় দরজা।
রবীন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ওরফে নাড়ু
এর পরেই হস্তক্ষেপ করেন দলের কয়েক জন নেতা। তাঁদের নির্দেশেই শেষে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে রাজ্য দফতরের বাইরে রাস্তায় এসে তিনি সব প্রশ্নের মুখোমুখি হন। এবং কথায় কথায় কবুল করেন, অভিযুক্ত হোমের টাকাতেই
বিমানে চড়ে তিনি এবং তাঁর মেয়ে দিল্লি গিয়েছিলেন। ওই হোমের মহিলাদের সাহায্য করতে। কী ভাবে?
আরও পড়ুন: মার্চের শুরুতে অভিষেক ফের ময়দানে
এক প্রশ্নের জবাবে নাড়ুবাবু দাবি করেন, ‘‘আমার মেয়ে নির্দোষ। অভিযুক্ত হোম কোনও অন্যায় কাজকর্ম করে কি না, তা সে জানে না।’’ তা হলে জুহি সামনে আসছেন না কেন? নাড়ুর জবাব, ‘‘যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের উপর অত্যাচারের ছবি দেখে ভয় পাচ্ছে।’’ জুহি কি ওই অভিযুক্ত হোমের মহিলাদের দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন? নাড়ুবাবু বলেন, ‘‘আমরা রাজনীতি করি। কেউ সাহায্য চাইলে করতেই হয়। ওরা সমাজসেবা করে বলে জানতাম। তাই সাহায্য করেছি।’’ তিনিও কি তাঁদের সঙ্গে দিল্লি যান? নাড়ুবাবু বলেন, ‘‘হ্যাঁ গিয়েছিলাম।’’ দিল্লি যাতায়াতের বিমান ভাড়া কে দিল? ‘‘ওই হোমই দিয়েছিল।’’
তদন্তকারীরা বলছেন, কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের এক অনুদান তিনি পাইয়ে দেন চন্দনাদের। ধারণা, গত তিন বছরে কয়েক কোটি টাকার অনুদান পায় হোমটি। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, দিন দশেক আগেও হোম নিয়ে জুহি ওই মন্ত্রকের এক আমলার সঙ্গে বৈঠক করেন। নাড়ু জানান, বিভিন্ন পুরুষ ও মহিলা স্বামী-স্ত্রী সেজে দত্তক নিয়ে ওই শিশুদের বিদেশে নিয়ে যেত। পরে গবেষণায় তাদের গিনিপিগের মতো ব্যবহার করা হতো বলেই নাড়ুর বিশ্বাস।
পাশের ঘরেই যে নাড়ু ‘আত্মগোপন’ করেছেন, সেটা বলতে চাননি বিজেপি নেতারা। কয়েক জনের দাবি ছিল, নাড়ুদা এসেছিলেন। চলেও গিয়েছেন। কিন্তু ওই ঘর থেকে ‘হাত ঘুরিয়ে নাড়ু মেলা’র পরে তাঁদের মুখে অপ্রতিভ হাসি। সাংবাদিকদের প্রশ্ন, ‘‘আপনারা হিন্দু ধর্মের উপাসক নেতা হয়ে এমন মিথ্যে বললেন? ভগবান পাপ দেবে যে!’’ ততোধিক মজা করে এক রাজ্য নেতার জবাব, ‘‘এ রকম সময়ে আমরা ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যাই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy