ঘটনাস্থল ছেড়ে পালাচ্ছেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। —নিজস্ব চিত্র
আইন ভেঙে পরিস্থিতি জটিল করে তোলার পরিকল্পনা ছিল দলের। তাই পুলিশের অনুমতি না থাকলেও জনসভা করার জন্য জড়ো হন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। পুলিশ বাধা দিলে বাঁশের খুঁটি তুলে তাদের উপর চড়াও হন তাঁরা। পরে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘খুব ভাল হল! অল্প খরচে আমাদের প্রচার হয়ে গেল। আমাদের প্রায় কিছুই করতে হল না। পাকা মঞ্চ না করেও সভা করে ফেললাম। তৃণমূল এবং প্রশাসনই আমাদের প্রচারের ব্যবস্থা করে দিল!’’
পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের সগড়ভাঙায় একটি মাঠে বৃহস্পতিবার বিজেপির জনসভায় বক্তৃতা করার কথা ছিল দিলীপবাবুর। কিন্তু আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট জানায়, ওই সভার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে বিজেপি আগেই জানিয়ে রেখেছিল, অনুমতি না মিললেও সভা হবে। সেই মতোই এ দিন বেলা ৩ টে নাগাদ দলের নেতা-কর্মীরা প্রস্তাবিত সভাস্থলের সামনে জড়ো হন। কিন্তু বেলা ১টা থেকেই ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদীর নেতৃত্বে ওই মাঠে পুলিশ ‘রুট মার্চ’ করছিল। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল মাঠের গেট। মাঠের ভিতরে ছিলেন পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। ওই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতা-কর্মীরা এলাকায় এলেও মাঠে ঢুকতে পারছিলেন না। তখন তাঁরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পুলিশ ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন। শুরু হয় পথ অবরোধ।
ইতিমধ্যে বিজেপির কয়েক জন কর্মী রেলিং টপকে মাঠে ঢুকে পড়েন। নিয়ে আসা হয় ট্রেলারের উপরে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চ। আচমকা তৃণমূল থেকে আসা এক বিজেপি নেতা গেট দিয়ে মাঠে ঢুকতে যান। তাঁকে পুলিশ বাধা দেয়নি। তাঁর সঙ্গে বাইরে থাকা বিজেপি কর্মীরাও মাঠে ঢোকেন। তখন রেলিং টপকে ঢুকে পড়া বিজেপি কর্মীরা গাছের ডাল, পতাকার ডান্ডা হাতে তেড়ে যান সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিকে। বেগতিক দেখে সিভিক ভলান্টিয়ারেরা চম্পট দেন। মারমুখী কর্মীদের কোনও রকমে আটকান স্থানীয় নেতৃত্ব।
বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ দিলীপবাবু ওই মাঠে যান। তিনি বলেন, ‘‘চ্যালেঞ্জ নিয়ে সভাটা করলাম। দেখালাম, আমাদের আটকানো অসম্ভব। পুলিশ, তৃণমূল আইন না মানলে আমরাও আইন মানব না।’’ ওই সভায় পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলীপবাবু আরও বলেন, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়াররা শাসক দলের ক্যাডার। কিন্তু বলছি, ও সব করবেন না। এক জন সিনিয়র আইপিএস ভারতী ঘোষকে ব্যবহারের পরে কী ভাবে তাঁর সর্বনাশ করা হয়েছে, তা তো চোখের সামনেই দেখছেন!’’
আরও পড়ুন: ভাবা হচ্ছে ‘নিরাপদ’ আসনের কথা, ডায়মন্ড হারবারে আর দাঁড়াচ্ছেন না অভিষেক?
কয়েক দিন ধরেই এই সভা নিয়ে চাপানউতোর চলছিল পুলিশ, তৃণমূল ও বিজেপি-র মধ্যে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, মাঠটি যে ট্রাস্টের মালিকানাধীন, সেই ‘মা কালী বাবা ভৈরবনাথ ট্রাস্ট’ মাঠ ব্যবহারের লিখিত অনুমতি দিয়েছে। পুলিশ ও মহকুমা প্রশাসনের কাছে সভার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের চক্রান্তেই গত মঙ্গল ও বুধবার পুলিশ সভামঞ্চ বাঁধার কাজ করতে দেয়নি। তবে বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই জানিয়েছিলেন, সভা হবেই। বুধবার সন্ধ্যায় বিজেপি নেতৃত্ব আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটকেও এ কথা জানান বিজেপি নেতৃত্ব।
তবে অনুমতিহীন সভায় জমায়েতের পরেও পুলিশ সভা করতে দিল কেন, আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ঘটনাস্থলেই কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি কেন, সে সব প্রশ্নও এ দিন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনাকে কয়েক বার ফোন করা হলেও তাঁর জবাব মেলেনি। উত্তর আসেনি এসএমএস এবং হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেরও। তবে ডিসি (পূর্ব) অভিষেকবাবু বলেন, ‘‘সভার অনুমতি ছিল না। সব দিক খতিয়ে দেখে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy