Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Jiaganj

খুনের পর থেকে নিখোঁজ বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া ব্যবসায়ী, কিন্তু ‘জেহাদি’ তত্ত্বেই অনড় বিজেপি

দশমীর দিন জিয়াগঞ্জে নিজের বাড়িতেই খুন হয়েছেন বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং শিশুপুত্র।

সপরিবারে বন্ধুপ্রকাশ। —ফাইল চিত্র

সপরিবারে বন্ধুপ্রকাশ। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৯ ২১:৩০
Share: Save:

নতুন তথ্য জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে। খুন হয়ে যাওয়া প্রাথমিক শিক্ষকের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা ধার নিয়েছিলেন সাগরদিঘির এক ব্যবসায়ী। শিক্ষক এবং তাঁর গোটা পরিবার খুন হয়ে যাওয়ার পর থেকে সেই ব্যবসায়ীর খোঁজ মিলছে না। খবর পুলিশ সূত্রে। বিজেপি অবশ্য ‘জেহাদি’ যোগের তত্ত্বে অনড়। রাজ্য নেতারা হইচই শুরু করেছিলেন আগেই। এ বার জেলা বিজেপির গলাতেও একই সুর। সে সবের মাঝেই শুক্রবার বহরমপুরে মিছিল করলেন শিক্ষকরা। পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানালেন।

দশমীর দিন জিয়াগঞ্জে নিজের বাড়িতেই খুন হয়েছেন বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং শিশুপুত্র। বন্ধুপ্রকাশের বাড়িতে যিনি দুধ দিতেন, তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন যে, পিছনের দরজা দিয়ে আততায়ীকে পালিয়েও যেতে দেখেছেন। তবে পুলিশ এখনও কাউকে ধরতে পারেনি।

বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি থেকে একটি ডায়েরি এবং একটি নোটবুক উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ডায়েরির পাতায় বন্ধুপ্রকাশের কিছু লেখা থেকে স্ত্রীয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপড়েনের কথা জানা গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। বন্ধুপ্রকাশের পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে একটি বিবাদের কথাও জানতে পেরেছে পুলিশ। খুনের নেপথ্যে এই সব বিষয়ের কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে গত কয়েক দিন ধরেই তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: আপনি সবার মুখ্যমন্ত্রী, জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডে মমতার দিকে আঙুল তুলে টুইট অপর্ণার​

শুক্রবার উঠে এসেছে একটি নতুন তথ্য। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাগরদিঘি বা জিয়াগঞ্জে অনেকের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন ছিল ওই প্রাথমিক শিক্ষকের। কারও কারও থেকে তিনি প্রয়োজন মতো টাকা ধার নিতেন। অনেককে আবার তিনি নিজে টাকা ধারও দিতেন। সাগরদিঘির বাসিন্দা এক বন্ধু তথা ব্যবসায়ীকে বন্ধুপ্রকাশ ৬ লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন বলে খবর পেয়েছে পুলিশ। বন্ধুপ্রকাশের গোটা পরিবার খুন হয়ে যাওয়ার পর থেকে সেই ব্যবসায়ী নিখোঁজ বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

বিজেপি নেতারা অবশ্য সে সব তত্ত্ব মানতে নারাজ। বন্ধুপ্রকাশ পাল যে হেতু আরএসএস সদস্য ছিলেন, সে হেতু ‘জেহাদি’দের হাতে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে খুন হতে হয়েছে— বিজেপি এই রকম একটা তত্ত্ব খাড়া করছে। দলের জাতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র আগেই টুইট করে এই অভিযোগ তুলেছিলেন। পরে কখনও দিলীপ ঘোষ, কখনও রাহুল সিংহ, কখনও সায়ন্তন বসু এই একই অভিযোগ তুলেছেন।

বিজেপির এই তত্ত্বকে গুরুত্ব দিচ্ছে না জেলা পুলিশ। তৃণমূল বলছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার যোগসূত্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে বিজেপি। দক্ষিণবঙ্গ আরএসএস-এর মুখপাত্রও জানিয়েছেন যে, বন্ধুপ্রকাশের স্বয়ংসেবক পরিচয়ের সঙ্গে তাঁর খুন হওয়ার কোনও যোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করছেন না। একই কথা বলতে শুরু করেছেন জেলার প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং অপরাধী বা অপরাধীদের শাস্তি চেয়ে বহরমপুর শহরে এ দিন একটি মিছিল করেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। কোনও নির্দিষ্ট সংগঠনের ব্যানারে এই মিছিল হয়নি। তবে কয়েকশো শিক্ষক এ দিনের মিছিলে যোগ দেন। মিছিল শেষে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের সঙ্গে দেখা করে স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানান তাঁরা। বন্ধুপ্রকাশের খুনের ঘটনায় রাজনৈতিক রং যাতে লাগতে না পারে, তা নিশ্চিত করার অনুরোধও তাঁরা জানান পুলিশ সুপারকে।

আরও পড়ুন: বাংলায় কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি নিয়ে রাষ্ট্রপতি-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে যাচ্ছে বিজেপি​

কিন্তু বিজেপি আপাতত সে সব কথায় কান দিচ্ছে না। দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতাদের পরে মুখ খুলতে শুরু করেছেন জেলা নেতারাও। বিজেপির উত্তর মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজিত দাস এ দিন আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘কী কারণে খুন হতে হল বন্ধুপ্রকাশ পালকে, তা আমরা জানি না। তা জানা বা খুঁজে বার করা পুলিশের কাজ।’’ কিন্তু তার সঙ্গেই সুজিত দাসের প্রশ্ন, ‘‘এই ঘটনার পিছনে জেহাদিদের বা বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের হাত নেই, এ কথা তদন্ত শেষ হওয়ার আগে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে কেন?’’

জেলা বিজেপির ওই নেতার দাবি, ‘‘মুর্শিদাবাদে জেহাদি কার্যকলাপ কী পরিমাণে বেড়েছে, তা অনেকেই কল্পনা করতে পারেন না। গ্রামে গ্রামে জেহাদিরা ছড়িয়ে পড়েছে। যে শিক্ষকরা বিজেপি বা সঙ্ঘের দিকে ঝুঁকেছেন, তাঁদের অনেকের উপরেই ইতিমধ্যে হামলা হয়ে গিয়েছে। তাই বন্ধুপ্রকাশ পালের হত্যাকাণ্ড নিয়েও আমাদের সংশয়ে থাকতেই হচ্ছে।’’

রঘুনাথগঞ্জে সম্প্রতি প্রকাশ হালদার নামে এক শিক্ষকের উপরে হামলার কথা তুলে ধরছেন বিজেপি কর্মীরা। স্কুলের মধ্যে ‘জয় শ্রীরাম’ বলাকে কেন্দ্র করে গোলমাল হয়েছিল। পরের দিন বড়সড় মিছিল নিয়ে স্কুলে ঢুকে ওই শিক্ষকের উপরে হামলা করা হয় বলে বিজেপি কর্মীদের দাবি। কিন্তু তাতে কি প্রমাণ হয় যে, বন্ধুপ্রকাশ পালকেও খুন হতে হয়েছে আরএসএসের সদস্য হওয়ার কারণেই? সরাসরি জবাব দিচ্ছেন না জেলা বিজেপির সভাপতি। বলছেন, ‘‘তদন্ত হতে দিন। কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, এখনই বলা সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jiaganj BJP RSS Crime Jiaganj Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE