Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিপদ কালো প্লাস্টিকেই বেশি, বলছেন বিশেষজ্ঞেরা

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পলিমার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ বিভাগের শিক্ষক সমিতকুমার রায় বলেন, ‘‘কালো ব্যাগগুলিতে যে প্লাস্টিক থাকে, তা ব্যবহারযোগ্য করতে এত বার প্রক্রিয়াকরণ করা হয় যে তার উপরিভাগ পুরোপুরি ভেঙেচুরে যায়।

লাগামহীন: অবাধ ব্যবহার কালো প্লাস্টিকের। মঙ্গলবার, গড়িয়াহাট বাজারে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

লাগামহীন: অবাধ ব্যবহার কালো প্লাস্টিকের। মঙ্গলবার, গড়িয়াহাট বাজারে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৪৭
Share: Save:

কালো রঙের প্লাস্টিকের ব্যাগ বিপজ্জনক। ওই রঙের ব্যাগে খাবার নিয়ে এলে তাতে বিষক্রিয়া হতে পারে। এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

তাঁদের বক্তব্য, কিছু প্লাস্টিকের ব্যাগে ইচ্ছাকৃত ভাবে কালো রং করা হয়। কারণ, বারবার প্রক্রিয়াকরণের ফলে ওই প্লাস্টিকের অবস্থা এমনই হয় যে, কালো রং না করলে ক্রেতারা নিতেনই না। অর্থাৎ প্লাস্টিকের গুণমানের ‘ত্রুটি’ ঢাকতে তাতে কালো রং করা হয়। কিন্তু ওই প্লাস্টিকেই বিপদ লুকিয়ে রয়েছে বলে সতর্ক করে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পলিমার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ বিভাগের শিক্ষক সমিতকুমার রায় বলেন, ‘‘কালো ব্যাগগুলিতে যে প্লাস্টিক থাকে, তা ব্যবহারযোগ্য করতে এত বার প্রক্রিয়াকরণ করা হয় যে তার উপরিভাগ পুরোপুরি ভেঙেচুরে যায়। ওই প্লাস্টিক যদি রং ছাড়াই দেওয়া হত, তা হলে কোনও ক্রেতাই তা নিতেন না। তাই তা রং করা হয়!’’ স্বচ্ছ প্লাস্টিকের ব্যাগগুলি এর তুলনায় সামান্য নিরাপদ বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। কালো রঙের প্লাস্টিকের ব্যাগের ক্ষেত্রে পুনরায় প্রক্রিয়াকরণ ১০-১২ বার ছাড়িয়ে যায়। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘বিশ্বের অন্য দেশে ১০-১৫ শতাংশ প্লাস্টিক খুব বেশি এক থেকে দু’বার পুনরায় প্রক্রিয়াকরণ হয়। সেখানে এ দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ প্লাস্টিকই পুনর্প্রক্রিয়াকরণ হয়। সেই সংখ্যা দশ বার ছাড়িয়ে যায়! কালো রঙের প্লাস্টিক হল প্রক্রিয়াকরণের একদম শেষ ধাপ! তখন আর ওই প্লাস্টিকে কিছু অবশিষ্ট থাকে না!’’

ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের ব্যাগ পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে তাতে বিভিন্ন উপকরণ মেশানো হয়, যা ক্ষতিকারক বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। রাবার শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংগঠন ‘সাউথ এশিয়া রাবার অ্যান্ড পলিমারস পার্ক’-এর টেকনিক্যাল ডিরেক্টর অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ধরা যাক, এক বার প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের পরে তা ফেলে দেওয়া হল। আবার তা ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে ওই ব্যাগের প্রক্রিয়াকরণ হল। সেই পদ্ধতিতে প্রতি বারই প্লাস্টিক গলাতে হয়। এ ভাবে বারবার প্লাস্টিক গলানোর ফলে তার গুণমান শুধু নষ্ট হয় না, তা দুর্বলও হয়ে যায়। তখন সেই প্লাস্টিককে শক্তিশালী করতে তাতে ফের কার্বন ও অন্য উপকরণ মেশানো হয়। অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘গলানো প্লাস্টিককে শক্তিশালী করার জন্য তাতে যোগ করা হয় যে সব উপাদান, পলিব্যাগ তৈরির পরে তা বেরিয়ে খাবারে মিশতে পারে। যা বিপজ্জনক!’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পলিমার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ বিভাগের প্রধান কিশোর সরকার বলেন, ‘‘প্রক্রিয়াকরণের সময়ে ব্যবহৃত কোন উপাদান ব্যাগে রাখা খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে কত পরিমাণ মিশতে পারে, তা কেউই জানেন না। ফলে শুধু কালোই নয়, যে কোনও রঙিন প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার না করাই ভাল। এ ব্যাপারে সরকারকেই নজরদারি করতে হত, কিন্তু সেটা এখানে হয় না বলেই সমস্যা।’’

বিপদ জেনেও কেন এই কালো প্লাস্টিকের ব্যাগ রমরমিয়ে চলছে বাজারে?

তার অন্যতম কারণই হল, এই প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরির খরচ পরিবেশবান্ধব ব্যাগের তুলনায় সস্তা। বাজারেও এ ধরনের রঙিন পলিব্যাগের চাহিদা রয়েছে। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘পরিবেশে মিশে যায় (বায়োডিগ্রেডেবল) এমন ব্যাগের দাম প্রায় ১০ টাকা পড়ে যায়। শুধু ব্যাগের দামই ১০ টাকা দিতে ক’জন রাজি হবেন? তাই এই প্লাস্টিকই রমরমিয়ে চলে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Carry Bags Polythene Environment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE