বিস্ফোরণে ভেঙে গিয়েছে তৃণমূল পার্টি অফিস।
সকাল সকাল সবে ভিড় জমতে শুরু করেছে মকরামপুর বাজারে। তার মধ্যেই বড়সড় বিস্ফোরণ। মুহূর্তেই ভেঙে পড়ল তৃণমূল পার্টি অফিস। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। আরও দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাতে মৃত্যু হয় তাঁদের এক জনের। বিস্ফোরণে ভেঙে গিয়েছে আশেপাশের কয়েকটি বাড়িও। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর নারায়ণগড়ে মকরামপুর তৃণমূল পার্টি অফিসে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘটনার সময় পার্টি অফিসের ভিতরে তৃণমূলের মকরামপুর অঞ্চল সভাপতি লক্ষ্মী শীট এবং এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা সূর্যকান্ত অট্ট ছিলেন। পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁরা পার্টি অফিসের একটি ঘরে বৈঠক করছিলেন। ওই ঘর লাগোয়া রান্নাঘর আছে। বৈঠক চলাকালীন সেই রান্নাঘরেই বিস্ফোরণ ঘটে। যদিও তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিজেপির দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।
স্থানীয়েরা জানান, বিস্ফোরণের তীব্রতা ছিল এতটাই যে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রান্নাঘর-সহ পার্টি অফিসের অনেকটা অংশই ভেঙে যায়। পার্টি অফিসের ছাদ উড়ে গিয়েছে। এমনকি, আশেপাশের কয়েকটি বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণের আকস্মিকতা কাটার পরই স্থানীয়েরা উদ্ধার কাজে হাত লাগান। পার্টি অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন খড়্গপুর গ্রামীণ থানা এলাকার মলকার বাসিন্দা সুদীপ্ত ঘোষ নামে এক তৃণমূল কর্মী। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। আরও ৫ জনকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাঁদের কলকাতায় পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাতারাতি বদলে গেল স্কুল সার্ভিসের ওয়েট লিস্ট, শীর্ষে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া নেতার মেয়ে!
এই ঘটনায় এলাকাবাসীরা খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, যে এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটেছে তা অত্যন্ত ব্যস্ত এলাকা। বাজার, স্কুল, হাসপাতাল রয়েছে আশেপাশেই। আর কিছু পরে এই বিস্ফোরণ ঘটলে পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে পারত বলে মনে করছেন তাঁরা।
কিন্তু কী ভাবে এই বিস্ফোরণ? এখনও পর্যন্ত কোনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। তবে প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার ফেটেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতিও গ্যাস সিলিন্ডার থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন। তাঁকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সকালে বিস্ফোরণ ঘটেছে। নানারকম খবর শুনতে পাচ্ছি। আমাদের কর্মী মারা গিয়েছেন। গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে গিয়েছে বলে শুনেছি। দলীয় স্তরে খোঁজ নিচ্ছি। প্রশাসনকেও খোঁজ নিতে বলেছি।’’ অন্যদিকে এদিন বিকেলে তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বিস্তারিত তথ্য এখনও আসেনি। তবে বিজেপি মস্তান নামিয়ে, ভয় দেখিয়ে এরকম করছে।’’
এই বিস্ফোরণের পিছনে অবশ্য অন্য কারণ দেখছে বিরোধীরা। শুধুমাত্র গ্যাস সিলিন্ডার ফাটার কারণেই এত বড় বিস্ফোরণ মানতে নারাজ তাঁরা। নারায়ণগড়ের তৃণমূল বিধায়ক প্রদ্যোত ঘোষও মকরামপুর পার্টি অফিসে বিস্ফোরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের তত্ত্বে বিশ্বাস রাখছেন না তিনিও। আনন্দবাজার ডিজিটালকে বিধায়ক বললেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই পার্টি অফিসে ঠিক কী হচ্ছিল, অবিলম্বে তদন্ত করে দেখতে বলেছি। দরকার হলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের আনা হোক। কিসের থেকে এত বড় বিস্ফোরণটা হল, তা খুঁজে বার করার চেষ্টা করা হোক।’’ দলীয় কার্যালয়ে যে দুষ্কৃতীরা জড়ো হয়ে থাকতে পারে, বিধায়কের কথায় সে ইঙ্গিতও রয়েছে। কোনও অসামাজিক কার্ষকলাপের কথা তিনি সরাসরি বলেননি। কিন্তু বলেছেন, ‘‘কারা পার্টি অফিসে জড়ো হয়েছিল, এই কাণ্ডের পিছনে কারা রয়েছে, অবিলম্বে খুঁজে বার করতে বলেছি পুলিশকে।’’
ছবি: এএনআইয়ের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে।
দুই বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, 'বাংলার' খবর পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy