Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
রণক্ষেত্র সোদপুর/১

ট্রেনের নীচে মৃত্যু বৃদ্ধের, বিক্ষোভে অচল স্টেশন

আনাজপাতি ও মুদির দোকানের জিনিসপত্র কিনে রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরছিলেন বৃদ্ধ। সোদপুর স্টেশনের কাছে গ্যালপিং ট্রেন ধাক্কা মেরে তাঁর প্রাণ কেড়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল।তার পরেই গ্যালপিং ট্রেন আসার কথা ঘোষণা করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলে স্টেশনমাস্টারের ঘরে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়ে অবরোধ শুরু দেয় ক্ষিপ্ত জনতা।

অবরোধ। বৃহস্পতিবার, সোদপুরে। ছবি: নিজস্ব চিত্র

অবরোধ। বৃহস্পতিবার, সোদপুরে। ছবি: নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১৯
Share: Save:

আনাজপাতি ও মুদির দোকানের জিনিসপত্র কিনে রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরছিলেন বৃদ্ধ। সোদপুর স্টেশনের কাছে গ্যালপিং ট্রেন ধাক্কা মেরে তাঁর প্রাণ কেড়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল।

তার পরেই গ্যালপিং ট্রেন আসার কথা ঘোষণা করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলে স্টেশনমাস্টারের ঘরে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়ে অবরোধ শুরু দেয় ক্ষিপ্ত জনতা। অবরোধের সঙ্গে সঙ্গে দফায় দফায় ভাঙচুর, ইটবৃষ্টিতে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় স্টেশন এলাকা। ওই দুর্ঘটনা-বিক্ষোভের জেরে বৃহস্পতিবার সকালের ব্যস্ত সময়ে প্রায় তিন ঘণ্টা থমকে থাকে ট্রেন। নাকাল হন যাত্রীরা। রেলের বক্তব্য, এ ভাবে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। তবে তিনি রেলের নিয়ম না-মেনে লাইন ধরে হাঁটছিলেন। সেই জন্যই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ এক নম্বর লাইনে আপ গ্যালপিং কৃষ্ণনগর লোকালের ধাক্কায় মৃতের নাম দিলীপ দত্ত (৭৫)। তিনি সোদপুর স্টেশনের কাছে নিউ কলোনির বাসিন্দা। রেললাইনের ধারে বসা আনাজ বিক্রেতাদের কাছ থেকে মালপত্র কিনে ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু স্টেশনের ওভারব্রিজে না-উঠে তিনি লাইন পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তখনই আচমকা ট্রেনটি হুড়মুড়িয়ে এসে পড়ায় দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, তখন এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে অজস্র যাত্রী ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁদের অনেকেই ওই বৃদ্ধকে বাঁচাতে ছুটে যান। কিন্তু ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। কিছু ক্ষণের মধ্যে ভিড় বেড়ে যাওয়ায় পাশের লাইনেও দাঁড়িয়ে পড়েন অনেকে। দু’নম্বর ডাউন লাইনে আসা একটি ট্রেনকে থামানোর চেষ্টা করে জনতা। কিন্তু ট্রেনটি না-থামায় জনরোষের আগুনে ঘি পড়ে। শুরু হয়ে যায় ইটবৃষ্টি। ক্ষিপ্ত জনতার একাংশ ঢুকে পড়ে স্টেশনমাস্টারের ঘরে। সেখানে সিগন্যালের যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর চলে টিকিট কাউন্টারেও। এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে রাখা টিকিট বিক্রির দু’টি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র উল্টে ফেলে দেওয়া হয়।

পুলিশ ও আরপিএফ বৃদ্ধের দেহ উদ্ধার করতে গেলে বিক্ষোভ বেড়ে যায়। পুলিশকে লক্ষ করেও ইটপাটকেল ছোড়া হতে থাকে। লাইনের উপরে পড়ে থাকা দেহটিকে ঘিরে চলে বিক্ষোভ-অবরোধ। পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। পুলিশের বড় বাহিনী পৌঁছে যায়। পুলিশ ও রেলকর্মীরা জনতার সঙ্গে আলোচনায় বসেন। দীর্ঘ আলোচনার পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। দেহটি তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।

বিভিন্ন কারণে অবরোধের জেরে গত সপ্তাহেও মেন লাইনে তিন দিন দীর্ঘ ক্ষণ ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে নিত্যযাত্রীদের বিরাট একটা অংশ সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারেননি। আবার এ দিনও অবরোধে আটকে পড়েন তাঁরা। এ দিন ট্রেন থমকে যেতেই বিটি রোডে ভিড় আছড়ে পড়ে। শহরতলির বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন আটকে পড়ায় এক সময় বিটি রোড জনসমুদ্রের চেহারা নেয়। বাস, ভ্যান, অটো, টোটোয় ভিড় উপচে পড়ে। সুযোগ বুঝে অনেক গাড়িচালক সামান্য দূরত্বেও মাথাপিছু ৫০ টাকা ভাড়া নিতে শুরু করেন। যাত্রীরা আপত্তি বা প্রতিবাদ করার পরিস্থিতিতে ছিলেন না। বাড়তি ভাড়া কবুল করে কোনও মতে গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন তাঁরা।

দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেও রেলকর্তাদের টনক নড়াতে অবরোধ দরকার ছিল বলে সওয়াল করেন বিক্ষোভকারীদের অনেকে। তাঁদের অভিযোগ, এক নম্বর লাইনে যে গ্যালপিং বা ‘থ্রু’ ট্রেন আসছে, তা ঘোষণা করা হয়নি। ঘোষণা করা হলে ওই বৃদ্ধের প্রাণ যেত না। যাত্রীদের অভিযোগ, সোদপুর স্টেশনে ঘোষণার ব্যবস্থা এত নিম্ন মানের যে, কিছুই বোঝা যায় না। মৃতের ছেলে মানস দত্তের অভিযোগ, ‘‘রেলের গাফিলতিতেই বাবার মৃত্যু হয়েছে। রেলকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’’

গ্যালপিং ট্রেনের কথা ঘোষণা না-করার কথা অস্বীকার করেছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র। তিনি বলেন, ‘‘রেললাইন দিয়ে চলাচল করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এর সঙ্গে ঘোষণার কোনও সম্পর্ক নেই।’’ অনেক বিক্ষোভকারীর বক্তব্য, রেললাইনে হাঁটা না-হয় ঠিক নয়। কিন্তু রেল যে এ দিন ওই গ্যালপিং ট্রেনের কথা ঘোষণাই করল না, তার বেলা?

রেল সূত্রের খবর, দুর্ঘটনা ও বিক্ষোভ-অবরোধের জেরে এ দিন ন’‌জোড়া ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। তিনটি এক্সপ্রেস ট্রেন চলেছে তিন ঘণ্টা দেরিতে। এবং ১৬ জোড়া ট্রেন চলেছে গড়ে দেড় ঘণ্টা দেরি করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Old Man Station Train Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE