Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রক্ত লাগত তাঁর, শেষ ইচ্ছায় রক্তদান

কুলটির কুলতোড়া গ্রামের ৬১ বছরের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয় দিন দশেক আগে। রবিবার তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল। এ দিনই গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের ঘরে রক্তদানের ব্যবস্থা করেন বাড়ির লোকজন।

ইচ্ছাপূরণ: কুলটিতে রক্তদান শিবির বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের। —নিজস্ব চিত্র।

ইচ্ছাপূরণ: কুলটিতে রক্তদান শিবির বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের। —নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক
কুলটি শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০৩:৪৯
Share: Save:

কিডনির অসুখে ভুগতে শুরু করার পরে বারবার রক্তের দরকার পড়েছিল। প্রয়োজনের সময়ে কখনও খালি হাতে ফেরায়নি ব্লাড ব্যাঙ্ক। তাই মৃত্যুর আগে পরিবারের কাছে এই প্রতিদান ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন বৃদ্ধ। পশ্চিম বর্ধমানের কুলটিতে তাঁর সেই শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী রক্তদান শিবির করলেন পরিজনেরা।

কুলটির কুলতোড়া গ্রামের ৬১ বছরের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয় দিন দশেক আগে। রবিবার তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল। এ দিনই গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের ঘরে রক্তদানের ব্যবস্থা করেন বাড়ির লোকজন। সাহায্য করে আসানসোল জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক ও স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শিবির থেকে ২৫ বোতল রক্ত তুলে দেওয়া হয় ব্লাড ব্যাঙ্ককে। ব্লাড ব্যাঙ্কের চিকিৎসক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গরমে শিবির কম হয় বলে রক্তের আকাল দেখা দেয়। পরিবারটির এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’

ইস্কোর কুলটি কারখানার কর্মী ছিলেন কল্যাণবাবু। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে সমাজসেবার নানা কাজে থাকতেন তিনি। প্রতিবেশীরা জানান, প্রতি বছর গ্রামে রক্তদান শিবির আয়োজনেও বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। তবে গত কয়েক বছর কিডনির অসুখে ভুগছিলেন। তাঁর ভাই সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দাদাকে নিয়মিত রক্ত দিতে হচ্ছিল। আসানসোলে ব্লাড ব্যাঙ্কের পাশাপাশি অনেক স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সাহায্যও পেয়েছিলেন।

সন্দীপবাবু বলেন, ‘‘হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর আগের দিন দাদা আমার হাত ধরে জানান, রক্তের জন্য কোনও সমস্যায় না পড়তে হওয়ার এই প্রতিদান যেন দেওয়া হয়। তাঁর মৃত্যুর পরে একটি শিবির করে বাড়ির লোকজন রক্তদান করুক, এই ইচ্ছার কথা বলেন দাদা।’’ তিনি জানান, শেষকৃত্যের পরে বাড়িতে আলোচনা করে শিবিরের ব্যবস্থা হয়।

এ দিন সকাল থেকে শিবিরের তদারকি করেন কল্যাণবাবুর ছেলে অরিজিৎ ও মেয়ে পায়েল। বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে জনা কয়েক প্রতিবেশীও রক্ত দেন। কল্যাণবাবুর স্ত্রী বুলুদেবী বলেন, ‘‘স্বামীর শেষ ইচ্ছা রাখতে পেরে ভাল লাগছে।’’ আসানসোলের এক রক্তদাতা সংগঠনের কর্তা তপন সরকার বলেন, ‘‘এমন উদ্যোগ অনেককে অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আশা রাখি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE