Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Online Class

‘স্মার্টফোন কোথায় যে অনলাইনে ক্লাস করব’, সোনাঝুরির হাটে ফল বেচছে সুরজিৎ

রোজ সকালে ১১টা নাগাদ মায়ের সঙ্গে সোনাঝুরির হাটে পৌঁছে যাওয়া। কাঁধে করে টেবিল নিয়ে গিয়ে মা পেতে দেন। বিকেল সাড়ে ৪টে-৫টা পর্যন্ত থেকে যা উপার্জন হয়, বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে তুলে দেওয়া।

অতিমারির শৈশব: সোনাঝুরির হাটে ফল বিক্রি করছে সুরজিৎ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

অতিমারির শৈশব: সোনাঝুরির হাটে ফল বিক্রি করছে সুরজিৎ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

বাসুদেব ঘোষ
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:১৩
Share: Save:

সোনাঝুরির হাটে গেলেই চোখে পড়ছে দৃশ্যটা। ছোট্ট টেবিলের উপরে শসা ও পেয়ারার পসরা। সঙ্গে চাটনি। অপটু হাতেই দিব্যি শসা-পেয়ারার মাখা বানিয়ে দিচ্ছে সে। রুমালের আড়ালে কচি মুখের কপালে ঘাম জমেছে। ফল বিক্রি করছ কেন, জানতে চাওয়ায় বলল, ‘‘সারা দিনে যা বিক্রি হয়, তাতে সংসারে কিছুটা হলেও সুবিধা হচ্ছে।’’ স্কুলের ক্লাস করছ না? শসার খোসা ছাড়াতে ছাড়াতেই জবাব এল, ‘‘স্মার্টফোন কোথায় যে অনলাইনে ক্লাস করব?’’

রোজ সকালে ১১টা নাগাদ মায়ের সঙ্গে সোনাঝুরির হাটে পৌঁছে যাওয়া। কাঁধে করে টেবিল নিয়ে গিয়ে মা পেতে দেন। বিকেল সাড়ে ৪টে-৫টা পর্যন্ত থেকে যা উপার্জন হয়, বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে তুলে দেওয়া। বোলপুরের গোয়ালপাড়া তনয়েন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সুরজিৎ বাগদির আপাতত এটাই রুটিন। দু’মাস হল এই কাজে নেমেছে। প্রথম দিকে শান্তিনিকেতন থেকে সোনাঝুরি হাট যাওয়ার রাস্তার ধারে টেবিল পেতে বসত সুরজিৎ। এখন হাট খোলায় সেখানে যাচ্ছে। পর্যটক সংখ্যায় অল্প হলেও আসতে শুরু করায় বিক্রিও কিছুটা বেড়েছে। কোনও দিন ২০০, কোনও দিন ৩০০ টাকার বিক্রিও হচ্ছে।

বোলপুরের শ্যামবাটি বিহারিপাড়ার বাসিন্দা সুরজিতের বাবা কংস বাগদি পেশায় রাজমিস্ত্রি। তাঁর স্ত্রী রেখা গৃহ-পরিচারিকা। লকডাউন এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে কংসবাবুর আয় তলানিতে ঠেকেছে। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেকে স্মার্টফোন কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। পড়াশোনার ব্যাপারে স্কুল একমাত্র ভরসা। স্কুলই যখন বন্ধ, তখন ক্লাস করবে কী করে?’’

আরও পড়ুন: অতীত ভুললে ভবিষ্যৎ অন্ধকার, বার্তা শুভেন্দুর

আরও পড়ুন: রাতভর ধর্নায় রুটি চিকেন, ফলের রস

টানা লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা শিক্ষক মহলের একাংশের। অনলাইন ক্লাস চালু থাকলেও অনেকেরই স্মার্টফোন না-থাকায় ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না বলে স্বীকার করে নিয়েছেন সুরজিতের স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুপ্রতীক মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘বেশির ভাগ গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বহু পরিবারই তাদের সন্তানদের কাজে পাঠাচ্ছে। এতে পড়ুয়াদের পড়াশোনা তো হচ্ছেই না, স্কুলছুটের সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে।’’

কিন্তু, এ ভাবে আয়ের মুখ দেখা গরিব পরিবার স্কুল খুললে কি আর সুরজিৎকে পড়তে পাঠাতে পারবে? সুরজিতের মা বলছেন, ‘‘আগে স্কুল খুলুক, তখন দেখা যাবে। এই পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে আমাদের। এ ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। না হলে কে চায় ওইটুকু ছেলেকে ব্যবসায় নামাতে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Online Class Smartphone Online Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE