৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে থমকে রয়েছে লরি। — নিজস্ব চিত্র।
দূরত্বটা বেশি নয়। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে একটা মোড়ের দুপাশে বড়জোর শ’চারেক মিটার। কিন্তু নিয়মিত দুষ্কৃতী সংঘর্ষের দৌলতে মালদহের কালিয়াচকে ওই চারশো মিটার পথ পেরনো এখন বড্ড কঠিন ঠেকছে নিত্যযাত্রী, বাস, ট্রাকের চালকদের। শুক্রবার নওদা-যদুপুর মোড়ে জাতীয় সড়কের উপরেই চলে আধ ঘণ্টা বোমাবাজি, যার জেরে তৈরি হওয়া যানজট কাটতে লাগে ঘণ্টা দু’য়েক।
গত অগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে তিন বার একই জায়গায় এই উৎপাত হয়েছে। ‘পুলিশি-নিষ্ক্রিয়তার সৌজন্যেই’ সামগ্রিক ভাবে এলাকায় দুষ্কৃতী-রাজের বাড়বাড়ন্ত—এমন অভিযোগে ফুঁসছে কালিয়াচক। এলাকাবাসী এবং নিত্যযাত্রীদের মতো তৃণমূলের একাংশও এখন সরব পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে জেলার পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় সে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন, কালিয়াচকে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সুজাপুর এবং কালিয়াচকে এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছে বকুল শেখ বনাম জাকির শেখের। খুন, তোলাবাজি, বোমাবাজি-সহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত বকুলকে গত সেপ্টেম্বর মাসে দল থেকে বার করে দেয় তৃণমূল। অন্য দিকে, জাকির তৃণমূলের টিকিটে পঞ্চায়েত ভোটে জিতে পরে চলে যান কংগ্রেসে। দু’পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক রেষারেষি তো ছিলই, বকুল কোণঠাসা হতে জাকির-গোষ্ঠী এলাকা দখলে আরও তৎপর হয়ে ওঠে বলে দাবি স্থানীয় সূত্রের। তবে বকুল পলাতক হলেও তার অনুগামীরা এলাকার দখল ছাড়তে নারাজ। তা নিয়েই গত মাস তিনেক লাগাতার লড়াই চলছে দু’পক্ষের।
নওদা-যদুপুরে গত ২৭ অগস্ট জাতীয় সড়কে হামলা হয় দুই ব্যবসায়ীর উপরে। সেই হামলার জেরেও যান চলাচল ব্যাহত হয়েছিল। ২ সেপ্টেম্বর একই জায়গায় দু’পক্ষের তাণ্ডবের মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এক ট্রাক মালিক, গুলি লাগে আরও দু’জনের। কোনও ঘটনাতেই কেউ ধরা পড়েনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু নওদা-যদুপুর নয়, গোটা কালিয়াচকেই গত মাস তিনেকে জনা তিনেক খুন হয়ে গিয়েছেন, বিভিন্ন হামলায় জখম হয়েছেন জনা পঁচিশ। এক-দু’টি বাদে বাকি মামলাগুলিতে অভিযুক্তদের একটা বড় অংশ এখনও অধরা।
শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় বোমাবাজি। নওদা-যদুপুরে জাতীয় সড়কের ওই শ’চারেক মিটারের আশেপাশে মিনিট দশেকের মধ্যে অন্তত গোটা ২৫ বোমার শব্দ পেয়েছেন এলাকাবাসী। তার পরে আরও মিনিট কুড়ি চলেছে বোমাবাজি। সে সময়ে ওই
এলাকায় বাজার বসেছিল। বোমাবাজির শব্দে বাজার ভেঙে যায়। ক্রেতা-বিক্রেতারা পালান। জাতীয় সড়কেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নওদা-যদুপুর মোড় থেকে জাতীয় সড়কের দু’প্রান্তেই প্রায় শ’পাঁচেক মিটার দূরত্বে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ট্রাক-বাস-গাড়ি।
মিনিট চল্লিশ পরে পুলিশ গেলে দুষ্কৃতীরা পালায়। মালদহ থেকে বৈষ্ণবনগরগামী এক বাসচালক বলেন, ‘‘বোমাবাজি হচ্ছে বুঝে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিই। এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে এই জায়গাটায়। ফলে, যাতায়াত করতে ভয় লাগে।’’ আবার শিলিগুড়িগামী এক ট্রাকচালকের প্রশ্ন, ‘‘জাতীয় সড়কের উপরে সকাল-সকাল এ ভাবে বোমাবাজি করার সাহস পায় কী করে ওই লোকগুলো! পুলিশ কি কিছুই দেখে না!’’ ঘটনাস্থল লাগোয়া বাজারের একাধিক দোকানদারের ক্ষোভ, ‘‘যা চলছে, এখানে দোকান চালানোই এখন দায়।’’
জাতীয় সড়কের উপরে কারা বোমাবাজি করেছে, তা নিয়ে চাপান-উতোর বেধেছে বকুল বনাম জাকির শিবিরে।
বকুল শেখের ভ্রাতৃবধূ তথা নওদা-যদুপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান ফারহানা বিবির দাবি, এলাকায় অশান্তি ছড়াতে জাকির শেখের দলবল বোমাবাজি করেছে। পক্ষান্তরে জাকিরের দাবি, বোমা ছুড়েছে
বকুলের লোকেরাই।
তবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের কালিয়াচক-১ ব্লক সভাপতি মোজাহার হোসেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ যদি সবই ঠিক করত, তা হলে কালিয়াচকে এই পরিস্থিতি হতো না।’’ সুজাপুরের তৃণমূলের বিধায়ক আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু) বলেন, ‘‘পুলিশকে বলেছি, এলাকায় দ্রুত শান্তি ফেরানোর ব্যবস্থা করতে।’’ মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘পুলিশ ওই এলাকায় নিয়মিত নজরদারি করে। এ দিন একটা গোলমাল হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ দ্রুত সব সামলে দিয়েছে।’’
শুক্রবার রাত পর্যন্ত অবশ্য জাতীয় সড়কে বোমাবাজির ঘটনায় কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy