Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

উন্মুক্ত সীমান্তে হিমশিম রক্ষীরা

সতর্ক-বার্তাই সার। ভারত-ভুটান সীমান্তে চোরাপথে নানা ধরনের অবৈধ কারবার ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন সীমান্তের রক্ষীরা। এই সীমান্তে চেক পোস্টের সংখ্যা মাত্র ৪টি। তাই একরকম বিনা নজরদারিতে রয়েছে মাইলের পর মাইল সীমান্ত। কাঁটাতারের বেড়া পর্যন্ত নেই।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:১৪
Share: Save:

সতর্ক-বার্তাই সার। ভারত-ভুটান সীমান্তে চোরাপথে নানা ধরনের অবৈধ কারবার ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন সীমান্তের রক্ষীরা।

এই সীমান্তে চেক পোস্টের সংখ্যা মাত্র ৪টি। তাই একরকম বিনা নজরদারিতে রয়েছে মাইলের পর মাইল সীমান্ত। কাঁটাতারের বেড়া পর্যন্ত নেই। সেখান দিয়ে অবাধে চলে চোরা কারবার। সীমান্তে রয়েছে নদীও। সেখানেও নজরদারি নেই। ভারত-ভুটান, ও নেপাল সীমান্তে পাহারায় থাকা সশস্ত্র সীমা বলের (এসএসবি) অবশ্য দাবি, নজরদারি চলছে বলেই নিয়মিত সন্দেহভাজনরা ধরা পড়ছে। বাজেয়াপ্ত হচ্ছে নানা জিনিস। এসএসবি-র শিলিগুড়ি ফ্রন্টিয়ারের আইজি কুলদীপ সিংহ বলেন, ‘‘আমরা সীমান্তে সব সময় সতর্ক আছি। সমস্ত চৌকিগুলি নজরদারি জোরদার রয়েছে। সীমান্ত লাগোয়া বাসিন্দাদের উন্নতিকল্পে নানা প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা নানা কাজ হচ্ছে। গত এক বছরে বহু ধরপাকড়, উদ্ধারও হয়েছে।’’

তবে এটাও এসএসবির কর্মীরা মানছেন, নজর এড়িয়ে চোরাকারবার চলছে বেশ কয়েকটি এলাকায়। তা নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। যে কারণে, সম্প্রতি এসএসবি, পুলিশ, সেনা, আধা সামরিক বাহিনী, কেন্দ্র এবং রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের মধ্যে সমন্বয় বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই সীমান্তে নজরদারি আরও আঁটোসাটো করার দাবি করেছে এসএসবি। বাহিনীর অধীনে নেপাল ও ভুটানের বিস্তীর্ণ খোলা সীমান্ত রয়েছে।

শিলিগুড়ি ফ্রন্টিয়ারের অধীনে নেপাল সীমান্ত বিহারের আরারিয়া থেকে পশ্চিম সিকিম পর্যন্ত আনুমানিক ২১০ কিলোমিটার খোলা সীমান্ত রয়েছে। আবার নাথুলার নীচের অংশ থেকে কালিখোলা অবধি প্রায় ২১৫ কিলোমিটার ভুটান সীমান্ত রয়েছে। ফ্রন্টিয়ারের ১১টি ব্যাটালিয়ন সীমান্তের দায়িত্বে আছে। প্রতি ব্যাটালিয়নের মধ্যে ১৮টি করে সীমান্ত চৌকি রয়েছে। সাড়ে তিন কিলোমিটার পরপর সাধারণত চৌকিগুলি থাকে। ভুটানের ফুন্টশেলিং, চামুর্চিতে সরকারি গেট এবং নেপালের পানিট্যাঙ্কি ও মিরিকের পশুপতিতে চেকপোস্ট রয়েছ। এই চারটি এলাকাই সরকারি ভাবে পারাপারের জন্য চিহ্নিত। কিন্তু তার পরেও নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি ও বিহারের দেবীগঞ্জ সীমান্ত লাগোয়া বিভিন্ন গ্রাম, নদী দিয়ে অবাধে যাতায়াত চলে বলে অভিযোগ। তেমনিই, স্থানীয় সূত্রে জানা যায় শালকুমার, বীরপাড়া, কালিখোলা মতো এলাকাগুলি দিয়ে চলে ভুটানে অবাধে যাতায়াত।

পুলিশ সূত্রের খবর, শুধু চোরাচালান নয়। এই সীমান্ত দিয়ে অবাধে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলির যাতায়াতও চলছে বলে অভিযোগ। নির্ধারিত চেকপোস্টগুলিতে তল্লাশি জোরদার হতেই চোরাপথ দিয়ে পাচার, যাতায়াত বাড়তে শুরু করেছে। সুপারি থেকে বিদেশি পণ্য যেমন ঢুকছে, তেমনই চলছে গরু থেকে লাল চন্দনের মতো বহুমূল্য কাঠের পাচারও। গত এক বছরে এসএসবি সীমান্ত থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মতো অরণ্যজাত সামগ্রীই আটক করেছে। খোলা সীমান্তের পারাপার রুখতে গ্রামের বাসিন্দাদের নানা প্রকল্পে সামিল করে খবরাখবরের জোগান বাড়লেও চোরাকারবার পুরোপুরি রোখা যায়নি। কারণ, দুই সীমান্তের বহু এলাকার বাসিন্দাদের জীবিকা সীমান্তের উপরই নির্ভরশীল। আবার এর আড়ালেই চলছে বেআইনিভাবে নেপাল, ভুটানে মানুষকে ঢুকিয়ে দেওয়ার কারবারও। সম্প্রতি শিলিগুড়ির বাইক এবং গাড়ি চুরির তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বেশ কিছু দুষ্কৃতী ঘটনার পরেই নেপাল, ভুটানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এসএসবি-র হাতে বিভিন্ন সময়ে ধরপাকড়েও সেই ছবি সামনে এসেছে।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের খবর, আইএসআই, আইএস থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন সংগঠনের সক্রিয়তা সামনে রেখে গত এক মাসে উত্তরবঙ্গে ৫টি সতর্কবার্তা এসেছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়ানোরও নির্দেশ রয়েছে সতর্কবার্তাগুলিতে। আর তাতেই নতুন করে খোলা এবং অবাধ নেপাল ও ভুটানের সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্ধেগ ছড়িয়েছে পুলিশ এবং এসএসবি অফিসারদের মধ্যে। উল্লেখ্য, এসএসবি-ই ওই দুই সীমান্তের নজরদারির দায়িত্বে রয়েছে।

বিশেষ করে, চলতি মাসে শিলিগুড়ির বেংডুবি থেকে পাক চর হিসাবে সেনার এক হেড কনস্টেবল ফরিদ খানের গ্রেফতার এবং ভুটানের গেলেফু সীমান্তের এনডিএফবি ক্যাম্প ধ্বংসের পরে চিন্তা বেড়েছে গোয়েন্দাদের মধ্যে। তাঁরা জানাচ্ছেন, নেপাল বরাবরই বিভিন্ন সংগঠনের আত্মগোপনের ঘাঁটি বলে পরিচিত। আর ভুটানের ঘন জঙ্গলে বিভিন্ন সংগঠনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের একাধিকবার হদিশ মিলেছে। ধরপাকড়, গ্রেফতার হলেই এই দুই সীমান্তে নানা সক্রিয়তা বেড়ে যায়। বর্তমানেও কেএলও, এনডিএফবির কিছু লোকজন অসম থেকে পালিয়ে ভুটান এবং নেপালে রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবরও রয়েছে। আবার ভুটান লাগোয়া অসম চিরাং জেলার দাওখানগর থেকে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের চাঁই আসিফ ওরফে বুড়াভাই-এর গ্রেফতারের পর সীমান্তবর্তী এলাকায় জেএমবি-র গতিবিধিও গোয়েন্দাদের নজরে আসতে শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state news national news bsf
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE