Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অনশন, অবস্থানে সরগরম বিশ্বভারতী

জবরদখল হওয়া জায়গা ফেরত পেতে প্রতীকী অনশনে বসার সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সোমবার শান্তিনিকেতন রোডে কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটের সামনে ১২ ঘণ্টার অনশনে বসলেন তিনি।

দ্বৈরথ: অনশন-মঞ্চে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সহ অন্যেরা। (ডান দিকে) পাল্টা অবস্থানে কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। শান্তিনিকেতনে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

দ্বৈরথ: অনশন-মঞ্চে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সহ অন্যেরা। (ডান দিকে) পাল্টা অবস্থানে কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। শান্তিনিকেতনে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ০১:২৬
Share: Save:

এমন দৃশ্য আগে দেখেনি শান্তিনিকেতন! এক দিকে বিশ্বভারতী। অন্য দিকে, ব্যবসায়ীরা। দু’পক্ষই অনড় নিজের নিজের জায়গায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চান, দখল উচ্ছেদ ও সৌন্দর্যায়ন। আর দীর্ঘদিনের কারবার ছেড়ে অন্যত্র যেতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। এই নিয়েই সংঘাত দু’তরফে।

জবরদখল হওয়া জায়গা ফেরত পেতে প্রতীকী অনশনে বসার সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সোমবার শান্তিনিকেতন রোডে কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটের সামনে ১২ ঘণ্টার অনশনে বসলেন তিনি। তাতে শামিল হলেন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক, অধ্যাপিকা ও কর্মীরা।

উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এ দিনই দোকান বন্ধ রেখে অবস্থানে বসলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

বিশ্বভারতীর জায়গা কয়েক জন ব্যবসায়ী দোকান গড়ে জবরদখল করে রয়েছেন বলে অভিযোগ। বিশ্বভারতীর তরফ থেকে দোকান ব্যবসায়ীদের সরে যাওয়ার জন্য কয়েক দিন আগে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। প্রচার করা হয় মাইকেও। অভিযোগ, তার পরেও দোকান ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে সরে যাননি।

সেই জায়গা দখলমুক্ত করতেই প্রতীকী অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ উপাচার্য সহ বিশ্বভারতীর অধ্যাপক, কর্মীরা প্রথমে ছাতিমতলায় পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। তার পরে উপাসনা মন্দির ঘুরে পদযাত্রা করে পৌষমেলার মাঠের প্রবেশপথের সামনে অনশন মঞ্চে পৌঁছন। মঞ্চ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম সামলাতে দেখা যায় উপাচার্য এবং কর্মসচিবকে।

বিদ্যুৎবাবু বলেন, ‘‘যে জমি ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছেন, তা ফিরে পেতে চাই।’’ তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বভারতী চত্বরের সৌন্দর্যায়ন এবং ১৬ অগস্ট উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সফরের কথা ভেবেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। উপাচার্যের কথায়, ‘‘আমরা তাঁদের উৎখাত করছি না। তাঁদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্বভারতী ব্যবসায়ীদের জন্য প্রায় তিন একর জমি দিয়েছে। সেখানে কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেট তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভাবেই এই সমস্যার সমাধান করা হোক।’’

উপাচার্য জানিয়েছেন, জমি দেওয়ার বিষয়টি চিঠি দিয়ে শান্তিনিকেতন-শ্রীনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ সহ অন্য দফতরগুলিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ দিন রাত ৮টা নাগাদ অনশন ভাঙেন উপাচার্য।

শান্তিনিকেতন-শ্রীনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘দিন কুড়ি আগে একটি চিঠি পেয়েছি। যে জমি দেওয়া হয়েছে সেটি একটি নয়নজুলির জায়গা।

আমরা বলেছিলাম সেখানে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দেওয়া সম্ভব নয়। উনি বলেছিলেন, জায়গাটি পুনর্বাসনযোগ্য করে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনও সেখানে কিছু করা হয়নি। ওঁরাই ঠিক করুন কী চান।’’

বিশ্বভারতীর অনশন মঞ্চের কিছুটা দূরেই এ দিন মঞ্চ গড়ে পূনর্বাসনের দাবিতে অবস্থানে বসেন কবিগুরু হস্তশিল্প ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা। তাঁরা দাবি করেন, পুনর্বাসন না দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের উচ্ছেদ করা যাবে না।

সংগঠনের সম্পাদক আমিনুল হুদা বলেন, ‘‘এই বাজার ৩০-৪০ বছর ধরে বসছে। একে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তার জন্য আমাদের বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে হলেও প্রস্তুত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE