অপেক্ষা: এই জমিতেই সিল্ক হাব হওয়ার কথা। ফাইল ছবি
কথা ছিল, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ হবে শ্রীরামপুরের সিল্ক হাব গড়ার কাজ। শেষ হওয়া দূর অস্ত্, তিন বছর পেরিয়েও একটি ইট পড়েনি!
শ্রীরামপুরের তারাপুকুর, রাজ্যধরপুর, পিয়ারাপুর, নওগাঁ, মরাদান, বৌবাজার-সহ আশপাশে সিল্ক প্রিন্টিংয়ের ছোটবড় বহু কারখানা রয়েছে। নানা কারণে ব্যবসার হাল খারাপ হয়েছে। বিশেষত ছোট ব্যবসায়ীদের কপালে হাত পড়েছে। বেশ কয়েক হাজার শ্রমিক এই কাজে যুক্ত। ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকেই শিল্পে আঁধার ঘনিয়েছে। পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝে উঠতে না-পেরে কেউ ব্যবসা ছোট করে দিয়েছেন, কাউকে শ্রমিক ছাঁটাই করতে হয়েছে। পরিবেশ পরিস্থিতির চাপে কেউ ব্যবসাই গুটিয়েই ফেলেছেন।
অথচ, সিল্ক প্রিন্টিং ব্যবসার উৎকর্ষের জন্য মাহেশ মৌজায় বেশ কয়েক একর জমিতে সিল্ক-হাব তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। ২০১৪ সালে প্রকল্পটির কথা ঘোষণা করা হয়। সব কারখানাকে ওই শিল্পতালুকে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথমে ঠিক ছিল, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প দফতর ওই কাজ করবে। পরে ঠিক হয়, ওখানে ‘সিল্ক অ্যান্ড হ্যান্ডলুম পার্ক’ গড়বে শিল্পোন্নয়ন নিগম। পরে আবার ঠিক হয়, ক্ষুদ্র শিল্প দফতরই হাব গড়বে।
হাব তৈরি নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, শীঘ্রই প্রস্তাবিত প্রকল্পের জমি ঘেরা হবে। পূর্ত দফতরের শ্রীরামপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সুমিত দাস জানান, প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ একর জায়গায় পাঁচিল ঘেরা হবে। সে জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় জানান, সংশ্লিষ্ট দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী পুরসভা পদক্ষেপ করছে।
শ্রীরামপুর ‘সিল্ক প্রিন্টার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর চিফ এগ্জিকিউটিভ তথা শ্রীরামপুর পুরসভার কাউন্সিলর পিনাকী ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘দফতর বদল-সহ প্রশাসনিক নানা কাজের জন্য দেরি হলেও আমরা আশাবাদী। হাব হলে ব্যবসা চাঙ্গা হবেই।’’ সংগঠনের সম্পাদক প্রদীপ বণিকের বক্তব্য, ‘‘সীমানা-প্রাচীরের টেন্ডার হওয়ায় প্রকল্প নিয়ে আমরা আশান্বিত। জিএসটি-র জন্য বাজার খারাপ হয়েছে। হাব তৈরি করে আধুনিক পরিকাঠামো করে বাজার চাঙ্গা না করা গেলে এই শিল্প বাঁচবে না।’’
কিন্তু সিল্ক হাব তৈরি হলেও কতটা ঘুরে দাঁড়ানো যাবে, তা নিয়েও সন্দিহান ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ। প্রায় আঠেরো বছর এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রসেনজিৎ মজুমদার। তাঁর কারখানায় ৪০-৪৫ জন কর্মী ছিলেন। গত দু’মাসে অর্ধেকেরও বেশি কর্মীকে বসিয়ে দিতে হয়েছে। প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘জিএসটি-র প্রভাব পড়েছে। এই প্রজন্মের মেয়েদের শাড়ির প্রতি টান কমায় পরিস্থিতি কঠিন হয়েছে। বহু দিন ধরেই শুনছি, হাব হবে। কিন্তু কবে হবে, জানি না। আর হলেই সবার উপকার হবে? ছোট ব্যবসায়ীদের পক্ষে টিকে থাকা কতটা সম্ভব হবে?’’
অলোক চট্টোপাধ্যায় নামে আর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘জিএসটিতে যা কর চাপছে, সেই অনুপাতে আমরা জিনিসের দাম বাড়াতে পারছি না। আগে সপ্তাহে আমার কারখানায় এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার লেনদেন হত। এখন ৩০ হাজারে নেমেছে। কোনও সপ্তাহে তারও কম। সিল্ক হাবে সবাই এক হতে পারলে তবেই পরিস্থিতি শুধরোবে। দেরি হলেও হাব হবে বলে আশা করছি।’’
এখন শুধুই অপেক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy