Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সভার মাঝেই ভেঙে পড়ল ছাউনি, বক্তৃতা চালিয়ে গেলেন মোদী!

মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠে মোদীর সোমবারের সভার আয়োজক ছিল বিজেপি। মঞ্চ এবং সামিয়ানা তৈরির জন্য ডেকরেটর ভাড়়া করেছিল তারাই। সামিয়ানার নীচে বসে যতটুকু মালুম হয়েছে, নরম মাটিতে লোহার খুঁটি ঠিকমতো না বসার ফলেই ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে গোটা কাঠামোর।

ছত্রভঙ্গ: কৃষক কল্যাণ সমাবেশের মঞ্চে বক্তা তখন খোদ প্রধানমন্ত্রী। হঠাৎই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে প়ড়ল শামিয়ানা। সোমবার মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ছত্রভঙ্গ: কৃষক কল্যাণ সমাবেশের মঞ্চে বক্তা তখন খোদ প্রধানমন্ত্রী। হঠাৎই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে প়ড়ল শামিয়ানা। সোমবার মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

সন্দীপন চক্রবর্তী
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪৪
Share: Save:

বর্ষার দিনে জনতার মাথা আড়়াল দেওয়ার জন্য পুরো মাঠ মুড়়ে ফেলা হয়েছিল তাঁবুর ঢঙে সামিয়ানা খাটিয়ে। লোহার কাঠামোর উপরে প্লাস্টিকের চাদর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘কৃষক কল্যাণ সমাবেশে’ সেই ছাউনিরই একাংশ ভেঙে পড়়ে বিপত্তি ঘটল। নেমে আসা কাঠামোর আঘাতে এবং হুড়়োহুড়়ির চোটে আহত হলেন ২৪ জন মহিলা-সহ ৯০ জন। কিন্তু আতঙ্কিত মানুষ যখন প্রাণের ভয়ে কাদা মাঠে দৌড়়চ্ছেন, মাত্র এক মিনিট বিরতি নিয়ে আগাগোড়়া বক্তৃতা চালিয়ে গেলেন মোদী! উল্টে শেষ দিকে ঘটনা সম্পর্কে মুখ খুললেন রাজনৈতিক ঢঙে! যা দেখে বিরোধীরা তো বটেই, প্রশ্ন তুলছেন বিজেপি নেতা-কর্মীদেরও একাংশ।

মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠে মোদীর সোমবারের সভার আয়োজক ছিল বিজেপি। মঞ্চ এবং সামিয়ানা তৈরির জন্য ডেকরেটর ভাড়়া করেছিল তারাই। সামিয়ানার নীচে বসে যতটুকু মালুম হয়েছে, নরম মাটিতে লোহার খুঁটি ঠিকমতো না বসার ফলেই ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে গোটা কাঠামোর। এক লহমায় ছাদ নীচে নেমে না এসে ভেঙে পড়়তে কয়েক মিনিট সময় নেওয়ায় বাইরে বেরিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, তাঁরা বেঁচেছেন নেহাতই বরাত জোরে! সেই সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে, জনতার মাথার ছাউনির বদলে প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চ ভেঙে পড়়লে কী হত? লোহার কাঠামোর সঙ্গে জড়়ানো ছিল বিদ্যুতের তার। বৃষ্টিতে সেই তারে কোনও ভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে কী ঘটতে পারত, ভাবতেও শিউরে উঠছেন অনেকে!

ভাষণ শেষ করে মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কনভয়ের অ্যাম্বুল্যান্সেই আহতদের কয়েক জনকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবং এসপিজি-র হস্তক্ষেপে। তবে আহতদের চিকিৎসার বন্দোবস্ত হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফেই। গিয়েছেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার। হাসপাতাল সূত্রে বলা হচ্ছে, আহতদের মধ্যে তিন জনের আঘাত গুরুতর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে বলেছেন, ‘‘মেদিনীপুরের সমাবেশে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। আহতদের চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ আর শাসক তৃণমূলের তরফে বিবৃতি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, এমন দুর্ঘটনার দায়িত্ব উদ্যোক্তাদেরই নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর মতো ‘ভিভিআইপি’র সভায় এমন দুর্ঘটনার জন্য উদ্যোক্তা বা ডেকরেটরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা কী হবে, সেই প্রশ্নের মধ্যেই চর্চায় উঠে এসেছে স্বয়ং মোদীর আচরণ! তাঁর চোখের সামনে ছাউনি ভেঙে পড়়ছে দেখে একটু থেমে তিনি অনুরোধ করেন, ‘‘উপরে যাঁরা উঠেছেন, নেমে আসুন।’’ তার পরেই আবার শুরু বক্তৃতা। লোহার খুঁটি মাটি থেকে উঠে যাচ্ছে দেখে কিছু যুবক উপরে উঠে পড়়েছিলেন চাপ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখার আশায়। ভেঙে পড়়তে দেখে তাঁরাও কোনও মতে ঝাঁপ দেন। এই ঘটনাপর্বে মোদীর বক্তৃতা থামেনি, বিজেপির কোনও প্রথম সারির নেতাকেও মূল মঞ্চ থেকে নেমে জনতার সাহায্যে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। পিছনে মরণফাঁদ আর সামনে প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চ ঘিরে ‘ডি জোন’ প্রহরারত এসপিজি— এই জাঁতাকলে আটকে পদপৃষ্ট হওয়ার উপক্রম হয় অজস্র আতঙ্কিত মানুষের।

মোদী বরং বক্তৃতার শেষ দিকে রাজনৈতিক সুরেই বলেন, ‘‘দিদি দেখে যান, দম কাকে বলে! এত বৃষ্টি, মাঠে জল, প্যান্ডেল ভেঙে এমন দুর্ঘটনা— এত কিছুর পরেও মানুষ রয়ে গিয়েছেন সভা শুনতে। এই লড়়াকু মেজাজকে আমার কোটি কোটি প্রণাম!’’

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চেয়ে ভাষণ বড়় হল? প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রমাণ করলেন, যে কোনও পরিস্থিতিতেই তিনি শুধু ভাষণবাজ!’’ আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন সিপিএম নেতা তরুণ রায়, তাপস সিংহেরা।

হাসপাতালে দাঁড়়িয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই বললেন, হাসপাতালে যাবেন। চিকিৎসায় কোনও অসুবিধা হলে সব রকম সাহায্য দেওয়ার কথাও উনি বলেছেন।’’ বিজেপির একাংশের ব্যাখ্যা, প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা থামিয়ে দিলে আরও বেশি আতঙ্ক তৈরি হয়ে পরিস্থিতি আরও বেগতিক হত।

সব দেখেশুনে তৃণমূলের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েতে কিছু আসন পেয়ে বিজেপির খুব উল্লাস হয়েছিল। এখন মাঠের মাচা নয়, ওদেরই মাজা ভেঙে গিয়েছে!’’

বিপদ মাথায়

• বেলা ১২.৫০

• কাঠামোর ছাউনি ভাঙল

• হুড়োহুড়িতে জখম ৯০

• পুরুষ ৬৬, মহিলা ২৪

• হাসপাতালে ভর্তি ৭৬

• আশঙ্কাজনক ২

সূত্র: মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Canopy Collapse Meeting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE