Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উড়ানে কারা, ফর্দ চায় সিবিআই

২০১১ সালের বিধানসভা এবং ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারে তৃণমূল যে বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিল, তার যাত্রী-তালিকা জোগাড় করছে সিবিআই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:০১
Share: Save:

২০১১ সালের বিধানসভা এবং ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারে তৃণমূল যে বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিল, তার যাত্রী-তালিকা জোগাড় করছে সিবিআই। সংস্থা সূত্রে খবর, সারদা-সহ ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে তদন্তের অঙ্গ এই প্রক্রিয়া।

প্রধানত দু’টি অভিযোগ খতিয়ে দেখছে সিবিআই। এক, ওই দুই ভোটে প্রচারের জন্য ছোট বিচক্র্যাফ্ট বিমান দলের রাজ্যসভার সাংসদ কে ডি সিংহের অ্যালকেমিস্ট সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে সব ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে সিবিআই, তার মধ্যে অ্যালকেমিস্ট-ও রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য একাধিক বার প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, কে ডি-র সঙ্গে তাঁর দলের আর কোনও সম্পর্ক নেই।

দুই, বিমান ও কপ্টার ভাড়া হিসেবে যে টাকা খরচ হয়েছে, দলীয় খরচের হিসেবে তার প্রতিফলন তেমন ভাবে নেই বলে অভিযোগ। সেই খরচের উৎস খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দলের দেওয়া হিসেব, আয়কর বিভাগের নথিও দেখা হচ্ছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। তবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ভোটের খরচের হিসেব দলের তরফে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছিল। সেখানে কোনও অসঙ্গতির অভিযোগ নিয়ে কমিশন বা সিবিআই— কেউ দলের কাছে কিছু জানতে চেয়েছে বলে তো খবর নেই!’’

প্রশ্ন হল, সিবিআই এখন যাত্রী-তালিকা চায় কেন? এক সিবিআই আধিকারিক জানান, প্রচারের কাজে যাঁরা ওই বিমান এবং হেলিকপ্টারে চড়েছেন বলে দল আগে জানিয়েছে, তা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তালিকা থেকে যাচাই করা হবে। আর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তালিকা আদালতের কাছেও অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হবে। যাত্রী-তালিকা তদন্তে প্রয়োজন হচ্ছে কেন? সিবিআই সূত্রের মতে, দলের তরফে ওই বিমানের ব্যবহার ‘কমিয়ে’ দেখানো হচ্ছে কি না, তা যাত্রী-তালিকা পেলে বোঝা যাবে।

কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ছোট বা ‘নন-শিডিউল’ বিমানের যাত্রী-তালিকা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হয়। কিন্তু এই ছোট বিমানসংস্থাগুলির নিজস্ব পরিকাঠামো থাকে না। কলকাতা বিমানবন্দরে ‘ভদ্র’ নামে একটি সংস্থা ছোট বিমানের দেখভাল করে। ছোট বিমানের পাইলটকে যাত্রী-তালিকা প্রথমে জমা দিতে হয় ‘ভদ্র’-র কাছে। তার পর তা যায়বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখানকার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সারা বছর ধরে এমন বহু ছোট বিমান যাতায়াত করে। সকলের যাত্রী-তালিকা জমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তবে লোকসভা বা বিধানসভার মতো বড় নির্বাচনের আগে যে সব ছোট বিমান ওঠানামা করে, তাদের যাত্রী-তালিকা সংগ্রহে রাখার নির্দেশ আমাদের অনেক আগে থেকেই দেওয়া হয়েছে।’’

সিবিআই সূত্রের দাবি, ২০১১ সালের ভোটের আগে হেলিকপ্টার বাবদ তৃণমূলের ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে বলে হিসেব পাওয়া গিয়েছে। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ড্রাফটের মাধ্যমে সেই টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তৃণমূলের পেশ করা দলীয় হিসেবে তার প্রতিফলন সে ভাবে ছিল না বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ। তদন্তকারীরা জানান, সেই বছরেই বিমান ভাড়া বাবদ ৬ কোটি ১০ লক্ষ ৫৬ হাজার ৫৬৬ টাকা খরচ হয়েছে বলে দলের তরফে দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই টাকা তৎকালীন জোটসঙ্গী কংগ্রেস দিয়েছে। হিসেব খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হতে পারেননি, সেই টাকা কবে, কখন কংগ্রেস দিয়েছিল। কারণ, সেই টাকা কংগ্রেস দিয়ে থাকলে তা তৃণমূলের তরফে ‘ডোনেশন’ বা ‘কন্ট্রিবিউশন’ হিসেবে দেখানোর কথা ছিল বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার।

সিবিআই সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে ‘তারকা প্রচারক’-দের জন্য অ্যালকেমিস্টের কাছ থেকে যে বিমান ভাড়া নেওয়া হয়, তার জন্য খরচ হয়েছিল ২ কোটি টাকা। সেই টাকা কবে, কী ভাবে অ্যালকেমিস্ট-কে দেওয়া হয়েছিল, তার প্রতিফলন দলের দেওয়া হিসেবে এখনও তাঁরা পাননি বলে আধিকারিকদের অভিযোগ। ওই ২ কোটি টাকার বাইরে ওই ভোটে বিমান এবং হেলিকপ্টার বাবদ আরও ১৫ কোটি ৪৩ লক্ষ ৪৯ হাজার ৮৫৫ টাকা খরচ হয়েছে বলে আয়কর দফতর তাদের জানিয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি। তখন পবনহংস ছাড়াও ডেকান, এয়ার কিং, প্রিমিয়ার, অ্যাডোনিস এভিয়েশনের কাছ থেকে বিমান-হেলিকপ্টার ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল সেই টাকা কোথা থেকে পেল, তারও স্পষ্ট ছবি এখনও তাঁরা পাননি বলে তদন্তকারীদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Saradha scam CBI সিবিআই
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE