তিনি রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর খুবই ঘনিষ্ঠ। একদা তিনি ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির একটি সমবায় সমিতির ডিরেক্টর। পরে হন অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার অন্যতম কর্তা। সারদা মামলায় অভিযুক্ত সেই সোমনাথ দত্তকে ফের জেরা করল সিবিআই।
তদন্তকারীদের কথায়, সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি টাকা নিয়ে সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের বোনকে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন সোমনাথবাবু। সেই ভর্তির ক্ষেত্রে সোমনাথবাবুর সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা, এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর যোগাযোগ হয়েছিল বলে সিবিআই জানিয়েছে।
সিবিআই সূত্রের খবর, ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল সুদীপ্ত ও দেবযানী গ্রেফতার হন। তার দিন তিনেক আগেই সোমনাথবাবু কাঁথির সেই সমবায় সমিতির ডিরেক্টর-পদে ইস্তফা দেন। সিবিআইয়ের সন্দেহ, ওই সমবায়ে সারদার টাকা সরানো হয়েছিল এবং সেটা সম্ভব হয়েছিল ওই মন্ত্রীর যোগসাজশে। সিবিআই-কে দেওয়া সুদীপ্তের বয়ান অনুযায়ী সারদার আমানতকারীদের কাছ থেকে তোলা টাকা ওই সমবায় সমিতিতে বিনিয়োগ করা হয়েছিল। ওই
সমবায় সমিতির দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন সোমনাথবাবু।
সারদা-কাণ্ডে সোমনাথবাবুকে তিন দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল সিবিআই। এক তদন্তকারীর কথায়, ঘটনার তদন্ত যত এগোচ্ছে, শাসক দলের প্রভাবশালীদের সঙ্গে সারদার নানা যোগসূত্র ততই স্পষ্ট হচ্ছে। প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষকে সম্প্রতি তলব করা হয়েছিল। পরে সোমনাথবাবুকে তলব করে সারদার সঙ্গে অন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগসূত্রের আরও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। শুধু সমবায় সমিতিই নয়। সুদীপ্তের বয়ান অনুযায়ী সারদা কাঁথি এলাকায় একটি আবাসন প্রকল্প তৈরিরও পরিকল্পনা করেছিল। ওই আবাসন প্রকল্পে বেশ কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয় বলে সুদীপ্তের দাবি। তাঁর অভিযোগ, সেই টাকাও খোয়া গিয়েছে।
সিবিআইয়ের কাছে সারদা-প্রধান আরও অভিযোগ করেন, ওই আবাসনের নির্মাণকাজ শুরুর আগেই প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার নির্মাণ যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল চুরি হয়ে যায়। সেই ঘটনাতেও সোমনাথবাবু এবং ওই প্রভাবশালী মন্ত্রীর যোগ ছিল। সেই আবাসন প্রকল্প নিয়ে ওই
মন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে টাকা চেয়ে তাঁর উপরে চাপ সৃষ্টি করছিলেন। সিবিআইয়ের কর্তাদের কথায়, ওই মন্ত্রীর বিষয়ে তিনি প্রশাসনের শীর্ষ স্তরেও নালিশ করেছেন বলে জেরায় জানান সুদীপ্ত।
তদন্তকারীদের দাবি, ২০১২ সালে কালিম্পঙে ডেলো পাহাড়ের বৈঠকে সুদীপ্তকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন সোমনাথবাবুই। ওই বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শাসক দলের অন্য কিছু শীর্ষস্থানীয় কর্তা উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলের পক্ষে দেশ জুড়ে সংবাদমাধ্যমে প্রচার এবং সরকারি উদ্যোগে এই রাজ্যে পর্যটন প্রকল্পে বিনিয়োগ করার জন্য সেই বৈঠকে সারদা-প্রধানকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সিবিআই-কর্তাদের কথায়, ডেলোর বৈঠকের অন্যতম প্রধান সাক্ষী সোমনাথবাবু।
এ বারের জেরা প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে সোমনাথবাবুর সঙ্গে পরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সিবিআই হয়তো কোনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে চাইছে। পুরনো অনেক বিষয়ে ফের আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy