Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সিবিআই নিয়ে একসুর, তাপসের পাশেই মুকুল

বিরোধীদের বাড়ি দলের ছেলে ঢুকিয়ে ‘রেপ করিয়ে’ দেওয়ার হুমকি দিয়ে একদা দলকে বিড়ম্বনায় ফেলেছিলেন। এ বার মুকুল রায়ের সুরে রোজ ভ্যালি-কাণ্ডে সিবিআই-কে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে দলে অস্বস্তি তৈরি করলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। দলের বিড়ম্বনা বাড়াতে সুযোগ বুঝে তাপসের পাশে দাঁড়ালেন খোদ মুকুলও!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:২২
Share: Save:

বিরোধীদের বাড়ি দলের ছেলে ঢুকিয়ে ‘রেপ করিয়ে’ দেওয়ার হুমকি দিয়ে একদা দলকে বিড়ম্বনায় ফেলেছিলেন। এ বার মুকুল রায়ের সুরে রোজ ভ্যালি-কাণ্ডে সিবিআই-কে সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে দলে অস্বস্তি তৈরি করলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। দলের বিড়ম্বনা বাড়াতে সুযোগ বুঝে তাপসের পাশে দাঁড়ালেন খোদ মুকুলও!

হুমকি-কাণ্ডে স্রেফ ক্ষমা চেয়েই রেহাই পেয়ে গিয়েছিলেন তাপস। এ বারও মুকুল-কাঁটায় জর্জরিত তৃণমূল তাঁর থেকে তাপসকে আলাদা করতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে।

চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে বরাবরই রণংদেহী অবস্থান নিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিবিআই-কে ব্যবহার করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে রাস্তায় নেমে মিছিল করেছে তারা। কলকাতায় সিবিআই দফতরের সামনে অবস্থানে সামিল হয়েছিলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী থেকে বিধাননগর পুরসভার তৃণমূলী পুরপ্রধানও। সিবিআইয়ের ডাক পেয়ে মুকুল কিন্তু প্রতিবাদের পথে হাঁটেননি। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করার কথাই বলেছিলেন প্রকাশ্যে। সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে দল ও রাজ্য সরকারের আদালতে যাওয়ার ব্যাপারেও আপত্তি ছিল তাঁর। পরে জেরা-পর্ব সেরে বেরিয়েও বলেছিলেন, সিবিআই যত বার ডাকবে, তত বারই যাবেন।

মুকুলের সুরেই তাপস এ দিন বলেছেন, “সিবিআই ডাকুক, আমি নিশ্চয়ই কথা বলব। তাঁরা যত বার ডাকবেন, আমি তত বার নিশ্চয়ই যাব।” তাঁর আরও মন্তব্য, “ওঁরা অত্যন্ত ভদ্র। অত্যন্ত ভদ্র ভাবে ওঁদের যা কাজ, তা তো করতেই হবে।” সিবিআই বুধবার ‘ভদ্র ভাবেই’ তাঁদের ফ্ল্যাট ও অফিস তল্লাশি করেছে বলেও জানিয়েছেন তাপস। কৃষ্ণনগরের সাংসদের মুখে এ কথা শুনে এ দিন তাঁকে সমর্থন করেছেন মুকুল। বলেছেন, “এক জন ভারতীয় নাগরিকের যে কোনও তদন্তকারী সংস্থাকেই সর্বতো ভাবে সাহায্য করা উচিত বলে আমি মনে করি।” সিবিআই বা ইডির বিরুদ্ধে দল রাস্তায় নেমে পড়লেও এ ব্যাপারে কী অবস্থান নেওয়া হবে তা নিয়ে দলে কোনও দিন আলোচনাই হয়নি বলেও এ দিন দাবি করেছেন মুকুল।

মুকুল যখন তাপসের পাশে দাঁড়িয়ে দলের অস্বস্তি বাড়াতে চাইছেন, তখন তৃণমূল নেতৃত্ব আবার সারদার চেয়ে ঈষৎ ভিন্ন অবস্থান নিয়েই রোজ ভ্যালি-কাণ্ডে তাপসের বক্তব্যকে খারিজ করে দেননি! বরং দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন তাপসের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেছেন, “এতে কোনও অসুবিধা নেই। সিবিআই-কে সাহায্য করবে না, এমন নির্দেশ তো দেওয়া হয়নি! ব্যক্তিগত ভাবে উনি কোথায় ডিরেক্টর ছিলেন, তার মধ্যে আমরা ঢুকব না। রাজনৈতিক ভাবে কিছু বললে আমরা দেখতাম।” তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা, মুকুলের থেকে তাপসকে বিচ্ছিন্ন করে দিতেই কৌশলে এমন অবস্থান নিয়েছেন পার্থবাবুরা।

সিবিআই-কে সাহায্যের কথা বলার পাশাপাশি, এ দিন রোজ ভ্যালির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছেন তাপস। তাঁর দাবি, “৬ মাসের জন্য ওখানে ছিলাম।” রোজ ভ্যালি থেকে অর্থপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে তাপসের স্বীকারোক্তি, “উনি (রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু) আমাকে বলেছিলেন, আপনাকে এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। এবং কুড়ি হাজার টাকা করে কাটা হবে, ট্যাক্স হিসেবে। সেটা ক’মাস? তিন মাস না চার মাস!” পরে রোজ ভ্যালি কর্ণধারের সঙ্গে তাঁর ফোনালাপের কথা জানিয়ে তাপস বলেন, “গৌতম কুণ্ডু মহাশয় এক জন ভাল প্রযোজক সন্দেহ নেই। তাঁকে আমি এক দিন ফোন করে বলেছিলাম, আমি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব। কারণ তিনি তখন ছবি করছেন।”

বিরোধীরারা অবশ্য তাপসকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। ওই অর্থলগ্নি সংস্থা কোথা থেকে টাকা নিত, তা তিনি জানেন না বলে তাপস দাবি করেছেন। এই দাবি নিয়েই ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর মন্তব্য, “কে কোথা থেকে অনৈতিক ভাবে টাকা নিতেন, তা নাকি উনি জানতেন না! উনি তো তখন ছোট্ট খোকা ছিলেন! তাই জানতেন না! এখন জেনেছেন!”

সারদা নিয়ে তৃণমূল যেমন সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ছিল, রোজ ভ্যালির ক্ষেত্রে এখনও তা হয়নি। শাসক দলের নেতৃত্ব এখন বেশি নজর দিচ্ছেন বাকিদের থেকে মুকুলকে আলাদা করতেই। আর এই অবস্থায় মুকুলের সঙ্গে দলের সম্পর্কের জটিলতা বেড়েই চলেছে। দলের যাবতীয় পদ থেকে তাঁকে অপসারিত করার পরে এ বার দিল্লিতে সাংসদদের নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চা-চক্রের আসরেও মুকুলকে ব্রাত্যই রাখা হচ্ছে।

সোমবার নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করবেন মমতা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গেও তাঁর দেখা করার কথা রয়েছে বলে জানান দলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন। মোদীর সাক্ষাতের পরে সন্ধ্যায় লোকসভায় দলের সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলোর লনে দলীয় সাংসদদের নিয়ে চা-চক্রে বসবেন মমতা। সেখানে ডাকা হচ্ছে না মুকুলকে। আমন্ত্রণ না পাওয়ার কথা স্বীকার করে মুকুল বলেন, “ওই দিন বিকালে দিল্লিতে থাকছিও না।” দিল্লিতে নেত্রীর সঙ্গে মোলাকাত এড়াতে মুকুল বিমানে নয়, ট্রেনে রাজধানী পৌঁছনোর কথাও ভাবছেন!

দিল্লিতে সংসদের সেন্ট্রাল হলেও এ বার সাংসদদের মুখোমুখি হতে পারেন মমতা। পাশাপাশি, সংসদে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে দলের সাংসদদের অবহিত রাখতে প্রত্যেককে ই-মেল, গ্রুপ মেসেজ এবং হোয়াটস-অ্যাপ গ্রুপের প্রযুক্তিতে সড়গড় করতে চান তিনি। কোন বিলে কেন বিরোধিতা বা সমর্থন জানাবে দল বা প্রতিবাদের ধরন কেমন হবে, সে ব্যাপারে আগাম ওয়াকিবহাল করতে সাংসদদের প্রযুক্তি-জালে অভ্যস্ত হওয়ার নির্দেশ ওই চা-চক্রেই মমতা দিতে পারেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

আগামী সপ্তাহে সংসদে জমি অধিগ্রহণ, বিমার বেসরকারিকরণ-সহ কিছু বিলের বিরোধিতা করবে তৃণমূল। তাই দলীয় সাংসদদের হুইপও দেওয়া হবে বলে ডেরেক জানান। তিনি কি হুইপ মানবেন? মুকুলের জবাব, “দলে আছি। হুইপ মানব। অনৈতিক কাজ করব না!” এর পরেই দলের এক শীর্ষ নেতা ও এখন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর নামোল্লেখ না-করে মুকুলের কটাক্ষ, “আমি তৃণমূলের বিধায়ক থাকব আবার অন্য দলের হয়ে কাজ করব এমন কিছু আমি করব না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cbi tapas pal mukul roy tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE