Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
CBI

সিবিআই নিয়ে দ্বিমুখী কৌশলে মোদী

সারদা-রোজ ভ্যালির তদন্তে হঠাৎই ফের সিবিআই-ইডি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আর তার পরেই রাজ্য রাজনীতিতে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৩৫
Share: Save:

সিবিআই কি শুধু ফোঁস করেই থেমে যাবে? নাকি ছোবলও মারবে?

সারদা-রোজ ভ্যালির তদন্তে হঠাৎই ফের সিবিআই-ইডি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আর তার পরেই রাজ্য রাজনীতিতে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তা হল, লোকসভা ভোটের আগে রাহুল গাঁধী যখন নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সমস্ত বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের এককাট্টা করতে চাইছেন, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর চাপ বাড়াতেই কি সিবিআই ফের সক্রিয়, যাতে তিনি বিরোধী জোট থেকে দূরত্ব রাখেন? তার থেকেও বড় প্রশ্ন হল, এই চাপ বাড়াতে কতটা এগোবে সিবিআই?

দিল্লির পোড় খাওয়া রাজনীতিকরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব দ্বিমুখী কৌশল নিয়েই চলতে চাইছেন। সিবিআই তদন্তের গতি বাড়লে তৃণমূল নেতৃত্বকে চাপে রেখে দর কষাকষি করা সোজা। আবার বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব মমতাকে ততটা চটাবেন না, যাতে তিনি আগ্রাসী হয়ে বিরোধী জোটের সঙ্গে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন। এতে বিজেপিরই বিপদ।

তৃণমূল নেতাদের দাবি, বাংলায় রাজনীতির লড়াইয়ে এঁটে উঠতে না পেরে বিজেপি ফের সিবিআই-কে মাঠে নামাচ্ছে। এক তৃণমূল নেতার অভিযোগ, ‘‘সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে এটা দল ভাঙানোরও চেষ্টা।’’

পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা অবশ্য উল্টোটাই চেয়েছিলেন। যবনিকা পতনই ছিল তাঁদের দাবি। বিজেপি সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগে মোদীর সঙ্গে দেখা করে রাজ্য বিজেপির নেতারা অনুযোগ করেছিলেন, এক সময়ে সিদ্ধার্থনাথ সিংহের ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ যে তৃণমূল-বিরোধী হাওয়া তুলেছিল, সিবিআই তদন্তের ঢিমে গতিতে সেই হাওয়া উধাও। প্রধানমন্ত্রী কোনও জবাব দেননি বলেই বিজেপি সূত্রের দাবি।

বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য সিবিআইকে কাজে লাগানোর অভিযোগ মানতেই নারাজ। দিল্লির বিজেপির সদর দফতরের এক নেতা বলেন, ‘‘সারদা-রোজ ভ্যালিতে তদন্তের নির্দেশ মোদী সরকার দেয়নি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই তদন্ত চলছে। কংগ্রেস ও সিপিএম নেতারাই সেই তদন্ত চেয়ে মামলা করেছিলেন।’’

কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘মোদী সরকার প্রথম থেকেই সিবিআই-ইডিকে বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে। তবে মোদী-অমিত শাহ এই মুহূর্তে যতটা রাহুল-বিরোধিতা করবেন, ততটা মমতা-বিরোধিতা করবেন না— সেটাই স্বাভাবিক। কারণ মোদী-শাহর এখন প্রধান লক্ষ্য রাহুল গাঁধীকে আটকে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফেরা।’’

মাস চারেক আগেও সারদা-রোজ ভ্যালি তদন্তের শীতঘুম নিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র-অধীর চৌধুরীরা দিদিভাই-মোদীভাইয়ের আঁতাতের অভিযোগ তুলেছেন। জুন মাসে কলকাতায় যান মোদীর আস্থাভাজন বলে পরিচিত সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানা। তার পরেই নড়াচড়া শুরু। গত এক দেড় মাসে সিবিআই তৃণমূলের অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে। মমতার আঁকা ছবি কারা কিনেছিলেন, তার খোঁজ হয়েছে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস পালদের নতুন করে ডাক পড়েছে। আইপিএস, আমলাদের বয়ান রেকর্ড করা হচ্ছে। কুণাল ঘোষকে রাজসাক্ষী করার চেষ্টাও হচ্ছে।

এখানেই থেমে থাকবে তদন্ত? না কি পরের ধাপেও যাবে?

অতীতে কংগ্রেস জমানায় মুলায়ম সিংহ যাদবকে বাগে রাখতে সিবিআইকে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। সেই সমাজবাদী পার্টির এক নেতা বলেন, ‘‘আসলে সিবিআই তদন্ত এমনই। গতি কখনও বাড়ে, কখনও কমে। আবার অনেক সময় আদালতের হস্তক্ষেপে তদন্ত এমন জায়গায় পৌঁছে যায়, যখন সিবিআইয়ের হাতেও লাগাম থাকে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CBI Saradha Mamata Opposition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE