Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
মি়ড ডে মিলের নয়া নির্দেশিকা

খাওয়া বন্ধ হলে মিলবে ভাতা

কোথাও রাঁধুনি আসছে না বলে মিড-ডে মিল বন্ধ থাকে মাসের পর মাস। কোথাও আবার টাকা আসেনি বলে মিড-ডে মিল বন্ধ করে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। মিড-ডে মিল নিয়ে এই যথেচ্ছাচার বন্ধ করতে কড়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০১:১৩
Share: Save:

কোথাও রাঁধুনি আসছে না বলে মিড-ডে মিল বন্ধ থাকে মাসের পর মাস। কোথাও আবার টাকা আসেনি বলে মিড-ডে মিল বন্ধ করে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। মিড-ডে মিল নিয়ে এই যথেচ্ছাচার বন্ধ করতে কড়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, কারণ যা-ই হোক না কেন, স্কুলে মিড-ডে মিল বন্ধ থাকলে পড়ুয়াদের খাদ্য নিরাপত্তা ভাতা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।

ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে পড়ুয়াপিছু খাদ্যশস্য ও রান্নার খরচের বরাদ্দ অর্থ হিসাবে ধরতে হবে। তবে, ছাত্রছাত্রীরা কোনও কারণে মিড-ডে মিলের খাবার খেতে অস্বীকার করলে, এই ভাতা পাওয়া যাবে না। খাবারের গুণগত মান খারাপ —এই কারণ দেখিয়েও ভাতা দাবি করা যাবে না। শহরে অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভাবে তৈরি রান্নাঘর থেকে মিড-ডে মিলের খাবার একাধিক স্কুলে সরবরাহ করা হয়। এক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তা ভাতা দেওয়ার দায় কেন্দ্রীয় ভাবে রান্নাঘর চালানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে নিতে হবে। কোনও স্কুলে টানা তিন দিন বা মাসে পাঁচ দিন মিড-ডে মিল সরবরাহ না করলে রাজ্য সরকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। কোনও কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার জন্য মিড-ডে মিল আটকে গেলে কেন্দ্রকে বিষয়টি জানাতে বলা হয়েছে ও এক মাসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।

মিড-ডে মিল প্রকল্পে সরকারি বা সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল ও মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে প্রায় এক কোটি কুড়ি লক্ষ ছাত্রছাত্রী। প্রকল্পের খরচের সিংহভাগ বহন করে কেন্দ্রীয় সরকার। বিনামূল্যে চাল সরবরাহ করে কেন্দ্রই। খাবার তৈরির জন্য অন্যান্য খরচের ৭৫ শতাংশ বহন করে কেন্দ্র। বাকি ২৫ শতাংশ রাজ্যকে দিতে হয়। সম্প্রতি বরাদ্দের পরিমাণ ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এখন প্রাথমিক পর্যায়ের পড়ুয়া পিছু প্রতি দিনের জন্য বরাদ্দ করা হয় ৩ টাকা ৭৬ পয়সা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ২ টাকা ৮২ পয়সা ও রাজ্য সরকার ৯৪ পয়সা দেয়। উচ্চ প্রাথমিক স্তরের ছাত্রদের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ ৫ টাকা ৬৪ পয়সা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ৪ টাকা ২৩ পয়সা ও রাজ্য সরকার ১ টাকা ৪১ পয়সা দেয়। এই টাকায় যে মানের খাবার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র (প্রাথমিকে ৪৫০ ক্যালোরির সঙ্গে ১২ গ্রাম প্রোটিন, উচ্চ প্রাথমিকে ৭০০ ক্যালোরির সঙ্গে ২০ গ্রাম প্রোটিন), বাস্তবে তা দেওয়া সম্ভব নয় বলেই দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। তাই গুণগত মান নিয়ে কড়াকড়ি করার বদলে পড়ুয়া পিছু বরাদ্দ বাড়ালে ভাল হত বলে দাবি স্কুলগুলির।

নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, কোনও কারণে সাময়িক ভাবে মিড- ডে মিলের খাদ্যসামগ্রী ও রান্নার খরচ না এলে স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিজেদের তহবিলের টাকা খরচ করে প্রকল্প চালিয়ে যেতে হবে। স্কুলের যে কোনও তহবিলের টাকা মিড ডে মিলের জন্য ব্যবহার করার অধিকার দেওয়া হয়েছে প্রধানশিক্ষক বা প্রধানশিক্ষিকাকে। পরে প্রকল্পের টাকা এলে তা তহবিলে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই নির্দেশিকার প্রেক্ষিতে শিক্ষকদের বক্তব্য, বাস্তবে তহবিলের টাকা এদিক-ওদিক করেই মিড-ডে চালাতে হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকার এক প্রাথমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষক বলেন, ‘‘স্কুলের তহবিলে আর কতটুকু টাকা থাকে। এদিক-ওদিক করেও হয় না। স্থানীয় মুদি দোকানের কাছে ধার করে চালাতে হয়। কখনও-কখনও মিড-ডে মিলের বকেয়া ছ’মাস ছাড়িয়ে যায়। তখন মুদি দোকানির হাতে-পায়ে ধরতে হয়।’’ ওই শিক্ষকের কথায়, ‘‘অন্য তহবিলের টাকা খরচ করার সুবিধা না দিয়ে মিড-ডে মিলের বকেয়া টাকাটুকু সময়ে দিয়ে দিলে ভাল হত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE