Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষক নিয়োগে ছাড়, স্বস্তি মমতার

ব্যাপারটা কতটা কাকতালীয় বা আদৌ সে-রকম কি না, জল্পনা চলতেই পারে। তবে ঘটনা হল, কেন্দ্রের জমি বিলের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে-দিন পথে নামলেন, ঠিক সেই দিনই প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের স্কুলশিক্ষক হিসেবে নিয়োগে ছাড় দিয়ে তাঁকে কিছুটা স্বস্তি দিল কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৭
Share: Save:

ব্যাপারটা কতটা কাকতালীয় বা আদৌ সে-রকম কি না, জল্পনা চলতেই পারে। তবে ঘটনা হল, কেন্দ্রের জমি বিলের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে-দিন পথে নামলেন, ঠিক সেই দিনই প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের স্কুলশিক্ষক হিসেবে নিয়োগে ছাড় দিয়ে তাঁকে কিছুটা স্বস্তি দিল কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।

রাজ্যের তরফে দীর্ঘদিন ধরে আবেদন-নিবেদন, চিঠিচাপাটির পরে বুধবার গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দিয়েছে, ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্কুলে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা যাবে। তবে নিয়োগের দু’বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ সাঙ্গ করতে হবে ওই প্রার্থীদের। এই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে অপেক্ষমাণ প্রার্থীরা আশ্বস্ত হবেন নিশ্চয়ই। তার থেকেও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ফেলে এটাকে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের নতুন রসায়ন হিসেবে দেখতে চাইছেন অনেকে।

মমতা অবশ্য এটাকে রাজ্যের তরফে রীতিমতো লড়ে আদায় করা সুযোগ হিসেবেই দেখতে ও দেখাতে চাইছেন। কেন্দ্রীয় ছাড়ের খবর পেয়ে এ দিন ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানান, অন্যান্য রাজ্যকে তো আগেই এই ছাড় দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গকে সেটা লড়াই করে আদায় করতে হল।

সুযোগটা যে-ভাবেই আসুক, পুরভোটের আগে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত রাজ্যে শাসক দলের পালে কিছুটা বাড়তি হাওয়ার জোগান দিল বলে অনেকে মনে করছেন। বিশেষত, এই ছাড় আদায় করার পিছনে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সক্রিয় ভূমিকা আছে। কারণ, রাজ্যের শিক্ষাকর্তারা তো বটেই, খোদ রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের স্কুলশিক্ষক হিসেবে নিয়োগে ছাড় দেওয়ার জন্য অনেক বার তদ্বির-তদারক করেছিলেন কেন্দ্রের কাছে। কিন্তু দিল্লির দিক থেকে কোনও রকম ইতিবাচক সাড়া মিলছিল না। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর চিঠিতেই বরফ গলেছে বলে কেন্দ্রীয় সূত্রের ইঙ্গিত।

গত ২৩ মার্চ কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে চিঠি লিখে মমতা জানান, রাজ্যে বহু শিক্ষক-পদ খালি। শুধু প্রশিক্ষিত প্রার্থীর আশায় বসে থাকলে পঠনপাঠনের ক্ষতি হতে থাকবে। পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এক লক্ষ ২০ হাজার প্রশিক্ষিত প্রার্থী হলে রাজ্যে শিক্ষকের সঙ্কট মিটতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে অত বেশি প্রশিক্ষিত প্রার্থীই যে নেই! চিঠিতে মমতা লিখেছিলেন, শিক্ষক নিয়োগে অন্য অনেক রাজ্যকে যেমন ছাড় দেওয়া হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গকেও সেই সুযোগ দিক কেন্দ্র। চিঠি পাঠানোর দিনেই ফোনেও স্মৃতিকে ফের এই আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী।

এ রাজ্যেও স্কুলশিক্ষক-পদে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থী নিয়োগের ক্ষেত্রে ছাড় ছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু গত বছর ৩১ মার্চের পরে আর প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগ করা যাবে না বলে নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। সময়সীমা যাতে পেরিয়ে না-যায়, সে-দিকে লক্ষ রেখে গত বছর ২৯ মার্চ স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) এবং ৩০ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লোকসভা ভোটের জন্য সেই সময় প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা আটকে যায়। আর নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গেই আদালতের স্থগিতাদেশের জেরে থমকে যায় এসএসসি-র পরীক্ষা। তার পরে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগের সময়সীমায় আর ছাড় না-মেলায় এখনও পর্যন্ত ওই সব পরীক্ষা আর নেওয়া হয়নি। অথচ ইতিমধ্যে খালি হয়েছে আরও অনেক শিক্ষক-পদ।

এই পরিস্থিতিতে পঠনপাঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভীষণ ভাবে। গত মাসে মমতার চিঠি পেয়ে সেই বিষয়টিও মন্ত্রকের কর্তাদের ভাবিয়ে তোলে বলে কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর। বস্তুত, গত মাসের গোড়াতেও ছাড়ের ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা নেই বলে জানায় কেন্দ্র। তবে মুখ্যমন্ত্রী চিঠি লেখার পরে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, ইতিমধ্যে উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যকে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এককালীন ছাড় দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গকেও সেটা দেওয়া যায় কি না, দেওয়া গেলে কী ভাবে তা দেওয়া যায়— খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্মৃতি কিন্তু বরাবরই রাজ্যকে আর ছাড় না-দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে এসেছেন। গত বছর অগস্টে কলকাতায় এসেও তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, আর কোনও মতেই ছাড় দেওয়া যাবে না। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রের খবর, রাজ্যে প্রশিক্ষিত প্রার্থীর অভাব আছে বলে মনেই করেন না স্মৃতি। তাই ছাড়েরও প্রশ্ন নেই। তার পর থেকে রাজ্যের তরফে বারবার আবেদন জানানো হয়েছে। দিল্লি গিয়েও দরবার করেছেন রাজ্যের শিক্ষাকর্তারা। বাংলার পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিক্ষক নিয়োগে প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগের মেয়াদ আরও একটু বাড়ানোর জন্য খোদ রাজ্যপাল ত্রিপাঠীও দিল্লিকে অনুরোধ করেছেন বলে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু চিঁড়ে কিছুতেই ভিজছিল না।

মমতা সম্প্রতি মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীকে চিঠি লেখার পরে শেষ পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবেই অনড় অবস্থান বদলানো হয়েছে বলে ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রক সূত্রের খবর। যদিও গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মমতার বৈঠকের পরে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের মধ্যে আন্তরিকতার নতুন উষ্ণতা সঞ্চারিত হয়েছে এবং এই ছাড় তারই ফল বলে ব্যাখ্যা দিচ্ছে তৃণমূলের একাংশ।

মমতার দাবি, তাঁদের লড়াইয়ের ফল এটা। তাঁর দলের একটি অংশের মতে, এটি কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের প্রতিফলন। শিক্ষামন্ত্রী কী বলেন?

বারবার ফোন এবং এসএমএস করেও রাত পর্যন্ত পার্থবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE