রাতদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। কিন্তু গ্রাহকদের থেকে আদায় হয় যৎসামান্য। তার উপরে দেদার হুকিং-ট্যাপিং করে বিদ্যুৎ চুরি তো আছেই। এ বার সেই সব এলাকা থেকে রাজস্ব আদায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার কার্যত পুরোটাই বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চাইছে রাজ্য সরকার।
নবান্ন সূত্রে খবর, প্রথম দফায় উস্তি, ভাঙড়, মুরারই, কীর্ণাহার, নলহাটি, পটাশপুর, আমলাগোড়া, আনন্দপুর, পাঁচথুপি ও নবগ্রাম— এই ১০টি এলাকায় বিদ্যুৎ বিল আদায় এবং প্রয়োজনে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ার ভার বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে। যা রাজস্ব আদায় হবে, তা বণ্টন সংস্থা ও সংস্থার মধ্যে ভাগাভাগি হবে। সংস্থা নিয়োগে শীঘ্রই দরপত্র চাওয়া হচ্ছে।
কিন্তু সরকারই যেখানে বিদ্যুৎ চুরি রুখতে এবং বিলের টাকা আদায়ে ব্যর্থ, সেখানে বেসরকারি সংস্থাগুলি কী ভাবে সফল হবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। নবান্ন সূত্রই বলছে, যে সব এলাকা বেসরকারি হাতে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, সেখানে গড়ে ৮০% বিদ্যুৎ চুরি হয়ে যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরেই চুরি ঠেকাতে অভিযান শুরু হয়েছিল। কিন্তু মগরাহাটে এমনই এক অভিযানের সময় স্থানীয়দের রোষের মুখে পড়েন বিদ্যুৎকর্মীরা। তাঁদের উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশ গুলি চালালে কয়েক জনের মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই অভিযানে ভাটা পড়ে।
আরও পড়ুন: দশতলায় পড়ে দেহ, যুবকের মৃত্যু ঘিরে রহস্য সল্টলেকে
বণ্টন সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, যে বেসরকারি সংস্থা ভার নিতে চাইবে, তারা সব জেনেবুঝেই আসবে। তাদের রোজগার করার চাড়ও বেশি হবে। বিহার এই পথে হেঁটেই সুফল পেয়েছে বলেও বিদ্যুৎ কর্তাদের দাবি। এক কর্তা বলেন, ‘‘তিন বছরের জন্য সংস্থা নিয়োগ হবে। প্রথম দু’বছরে ২০% করে এবং শেষ বছরে ১৫% চুরি কমাতে হবে।’’ বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই পরিকল্পনা সফল হলে মানুষ লো-ভোল্টেজের হাত থেকে মুক্তি পাবে আবার বণ্টন সংস্থার আয়ও বাড়বে।’’
যদিও বিরোধীদের একাংশের আশঙ্কা, বিলের টাকা আদায় করতে স্থানীয় মস্তান বাহিনীকে মদত দেবে বেসরকারি সংস্থাগুলি। ফলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা বাড়বে। শাসক দলের মদতে পুষ্ট দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্তের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।
বণ্টন সংস্থার সিদ্ধান্তে কর্মী মহলে আবার অন্য আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মিটার রিডিং, খুঁটি পোতা, নতুন সংযোগ দেওয়া, অভিযোগ সামলানোর ভার ইতিমধ্যেই ঠিকাদার সংস্থার হাতে দেওয়া হয়েছে। এ বার এলাকা ধরে বেসরকারিকরণ হলে স্থায়ী কর্মীদের চাকরিতে হাত প়ড়ার ভয় পাচ্ছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy