সিইএসসি-র পাঠানো বিলের স্বচ্ছতা নিয়ে বারবার আঙুল তুলছেন গ্রাহকদের একাংশ। অভিযোগ, বিদ্যুতের যে খরচ দেখিয়ে দামের হিসেব হয়েছে, তা অযৌক্তিক। এই অবস্থায় বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞদের একাংশ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের প্রাক্তন আমলাদের অনেকেই মনে করছেন, গলদ হিসেবের পদ্ধতিতে। তাঁদের মতে, এপ্রিল ও মে মাসে লকডাউনের জন্য মিটার রিডিং যখন নেওয়া গেল না, তখন গ্রাহকদের আগের বছরের ওই দু’মাসের বিল পাঠালে ভাল হত। এ বছর যেটুকু কম বা বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে, তার হিসেব করা যেত মিটার রিডিং শুরুর পরে তৈরি বিলে। তাতে জটিলতা এড়ানো যেত।
সিইএসসি লকডাউনের সময় মিটার রিডিং নিতে না-পারায় প্রভিশনাল বিল পাঠানোর বন্দোবস্ত করেছিল। যা তৈরি হয়েছিল তার আগের ছ’মাসের গড় বিদ্যুৎ খরচ ধরে। সংস্থার দাবি, সেই টাকা কম ছিল। মিটার রিডিং নেওয়ার পরে জুনের বিলে যোগ হয়েছে এপ্রিল-মে মাসে বিদ্যুৎ খরচের অনাদায়ী অংশ। ফলে তা বেশি। কিন্তু বহু গ্রাহকের মাথায় বাজ পড়েছে তাতে অস্বাভাবিক চড়া টাকার অঙ্ক দেখে। চাপে পড়ে সিইএসসি জানায়, এপ্রিল-মে’র বাড়তি ইউনিটের বিল তারা এখন নেবে না।
রাজ্যের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংগঠন অ্যাবেকার সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যুৎ চৌধুরীর বক্তব্য, গড় বিলের জটিলতার কারণেই এপ্রিল, মে মাসে বিদ্যুৎ খরচের অনাদায়ী ইউনিট মকুবের দাবি তুলেছেন তাঁরা। অ্যাবেকারও দাবি, গত বছরে এপ্রিল, মে-র রিডিং অনুযায়ী এ বছর বিল পাঠালে হিসেব স্বচ্ছ ও সরল হত। গ্রাহকেরাও সহজে বুঝতে পারতেন। একমত যুব সংগঠন ইয়ং বেঙ্গলের সভাপতি প্রসেনজিৎ বসু। তাঁর দাবি, ‘‘ওই দু’মাসের অনাদায়ীর হিসেবটাই গোলমেলে।’’
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নির্দেশিকা মেনে লকডাউনের সময় ছ’মাসের গড় বিল করেছিল সিইএসসি। যদিও নিয়ন্ত্রণ কমিশন সূত্রের খবর, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে দু’টি পদ্ধতিতেই বিল করার বিধি রয়েছে। এক, যে মাসের রিডিং নেওয়া যাচ্ছে না, তার আগের ছ’মাসের গড় বিল করে। দুই, তার আগের বছরের ওই একই মাসের রিডিং অনুযায়ী। সিইএসসি-র দাবি, লকডাউনের সময় মানুষের আর্থিক অবস্থার কথা ভেবেই গড় বিল করা হয়। যাতে চাপ কম পড়ে।
বিভিন্ন সূত্রে খবর, লকডাউনে যেহেতু মিটার রিডিং নেওয়া যাচ্ছিল না, তাই কী করে বণ্টন সংস্থাগুলি বিল করবে তা নিয়ে রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের অন্দরে এপ্রিল থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছিল। আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে খাবি খাওয়া সাধারণ মানুষের উপরে যাতে বিদ্যুৎ বিলের চাপ এসে না-পড়ে, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখে কমিশন। শেষে বিভিন্ন দিক ভেবে ৬ মে গড় বিল তৈরির অনুমতি দেয়। তবে সূত্রের দাবি, বর্তমানে বিল নিয়ে গ্রাহকের ক্ষোভ-বিক্ষোভের অভিযোগ কমিশনের কানে গিয়েছে।
বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান সুতীর্থ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ আইনের ৪২তম ধারা অনুযায়ী বিল নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগ থাকলে, তা দূর করার দায়িত্ব বণ্টন সংস্থারই। তবে তাতে সমাধান না-হলে, দ্বারস্থ হওয়া যায় কমিশনের অম্বুডসম্যানের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy