গত দু’বছর বহুবার তাঁকে আদালত কক্ষে দেখা গিয়েছে। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে আর এক অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ অনর্গল কথা বলে চলেছেন। অথচ তাঁর কোনও হেলদোল নেই!
বৃহস্পতিবার, আইনজীবীদের কর্মবিরতি থাকায় প্রায় ফাঁকা এজলাসে দাঁড়িয়ে আচমকা মুখ খুললেন সুদীপ্ত সেন। ব্যাঙ্কশাল আদালতে বিচারক শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে সারদার কর্ণধার বললেন, ‘‘৭৬ কোটি টাকা খরচ করে যে চ্যানেল বানিয়েছিলাম, তা এখনও চলছে। আর আমার এখন এক টাকা খরচ করে সাবান কেনারও ক্ষমতা নেই।’’ তিনি যখন এ সব বলছেন, তখন কার্যত তাঁর আইনজীবীর ভূমিকা পালন করে সওয়াল করে চলেন কুণাল।
সিবিআই এবং ইডি সারদা-সহ একাধিক বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কাজকর্ম নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। সেই মামলায় সুদীপ্ত-কুণালদের আদালতে হাজির করা হলে এখনও ভিড় উপচে পড়ে আদালত কক্ষে। এ দিন একেবারে অন্য ছবি। কলকাতা পুলিশের হাতে থাকা একটি মামলায় দু’জনে হাজির হন ব্যাঙ্কশালের ৯ নম্বর আদালতে। কী সেই মামলা? পুলিসের খবর, সুদীপ্ত সেনের তৈরি ওই সংবাদ চ্যানেলের কর্মীরা পার্ক স্ট্রিট থানায় অভিযোগ করেছিলেন যে তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না। অভিযোগ, কর্মীদের ৩ লক্ষ টাকা বেতন মেটাননি মালিক-সুদীপ্তবাবু।
এ দিন ব্যাঙ্কশালে আইনজীবীরা না থাকায় তার পূর্ণ সুযোগ নেন কুণাল। বিচারককে বলেন, ‘‘আজ আমায় সওয়াল করার সুযোগ দিন।’’ বিচারকের সম্মতি পেয়ে কুণাল বলতে শুরু করেন। বিচারক মন দিয়ে শোনেন তাঁর বক্তব্য। কুণালের দীর্ঘ বক্তব্যের মাঝে-মধ্যে অবশ্য ছেদ টেনে সুদীপ্ত সেন বলেন, ‘‘স্যার। আমার অনেক সম্পত্তি রয়েছে। বার বার বলেছি, এর যে কোনও একটা বিক্রি করে কর্মীদের ওই বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হোক। কেউ আমার কথা শুনছে না।’’ সারদা-মালিকের দাবি, একটা সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর পাঁচটি খবরের কাগজ ও চ্যানেল চলছিল। আরও ৮টি খবরের কাগজ ও চ্যানেল করার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি, এত কিছু সামলাতে গিয়ে গভীর সমস্যায় পড়বেন তিনি।
একই মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন কুণালও। পরে তিনি জামিন পেয়ে গেলেও সুদীপ্ত পাননি। ঘটনাচক্রে, এ দিন একই মামলায় দু’জনের হাজিরা ছিল আদালতে। নিজেই সওয়াল করে বিচারককে কুণাল প্রশ্ন করেন, ‘‘কর্মীদের বকেয়া না মেটানোর অভিযোগে বিধাননগরের আদালত ইতিমধ্যে সুদীপ্ত সেনকে তিন বছরের জন্য কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। তা হলে কেন এক জন সাজাপ্রাপ্তর বিরুদ্ধে একই অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলাটি চলবে?’’
তাঁর কথায়, ‘‘আমি সেই সময়ে ওই চ্যানেলের সিইও থাকলেও অর্থনৈতিক কোনও লেনদেনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। আমি চ্যানেলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করেছি বা কোথাও সই করেছি — এমন দেখাতে পারেনি পুলিশ।’’ কুণালের পাল্টা অভিযোগ, ওই চ্যানেলের কর্মীদের বকেয়া না মেটানোর জন্য যদি সুদীপ্ত সেন দোষী হয়ে থাকেন, তা হলে সেই সময়ে ওই চ্যানেলের সঙ্গে চুক্তিতে থাকা একটি সংবাদপত্র গোষ্ঠীর কর্ণধারও একই কারণে দায়ী। কারণ, সেই গোষ্ঠীর কাছ থেকেও চ্যানেলের বকেয়া ছিল কয়েক লক্ষ টাকা। ওই টাকা পাওয়া গেলেও কর্মীদের বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়া যেত। বকেয়া মেটাতে ওই সংবাদপত্রের মালিককে তিন মাস সুযোগ দেওয়া হলেও কেন সুদীপ্তবাবুকে সেই সুয়োগ দেওয়া হল না, সেই প্রশ্নও তোলেন কুণাল।
প্রায় এক ঘণ্টা সওয়াল শুনে জুলাই মাসে পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন বিচারক। শুনে কুণাল হেসে বলেন, ‘‘স্যার আপনারা ডাকলে ভালই লাগে। জেলের বাইরের আকাশটা তো দেখতে পাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy