সিউড়ি আদালতে অনুব্রত। — নিজস্ব চিত্র।
৫ মিনিটে জামিন মিলেছিল, চার্জ গঠনের দিনও তাঁর আদালতে উপস্থিতি ৭ মিনিট!
পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক মুখে প্রকাশ্য সভা থেকে পুলিশকে বোমা মারার ও বিরোধীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এবার সেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে চলছে সিউড়ির সিজেএম আদালতে। কিন্তু যেমন রটেছিল, ঘটল ঠিক তেমনটাই। ৭ মিনিটেই সওয়াল-জবাবের পালা সাঙ্গ করে তিনি আদালত থেকে বেরিয়ে পড়লেন। তিনি তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
বৃহস্পতিবার অনুব্রতর বিরুদ্ধে ১৮৯, ৫০৫/১বি এবং ৫০৬ ধারায় মামলার চার্জ গঠিত হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণপর্ব আগামী মাসের ২২ এবং ২৩ তারিখ। মামলার সরাকারি আইনজীবী কুন্তোল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মোট চার জন পুলিশ কর্মী ওই দু’দিনে সাক্ষ্য দেবেন।’’
কি ঘটেছিল সেদিন পঞ্চায়েত ভোটের আগে?
২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক মুখে পাড়ুইয়ের কসবায় প্রকাশ্য সভায় পুলিশের উপরে ‘বোম’ মারা এবং নির্দল প্রার্থীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন অনুব্রত। ওই বক্তৃতার পরেই কসবা অঞ্চলে একাধিক নির্দল প্রার্থীর (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) বাড়িতে হামলা, বোমাবাজি হয়। নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বৃদ্ধ বাবা সাগরচন্দ্র ঘোষকে বাড়িতেই গুলি করে মারা হয়। অনুব্রত-সহ ৪১ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন নিহতের পুত্রবধূ।
ঘটনা হল, উস্কানিমূলক বক্তৃতা এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতে অনুব্রতর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে লঘু ধারায় মামলা করলেও বীরভূমের তৎকালীন মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) রাজেশ চক্রবর্তী পাড়ুই থানাকে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করার নির্দেশ দেন। অনুব্রতর বিরুদ্ধে মামলায় পুলিশের যে গাফিলতি রয়েছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে পুলিশ সুপারকে পাঠানো লিখিতে নির্দেশে বিচারক বলেছিলেন, ‘এটি পুলিশের দিক থেকে নিষ্ক্রিয়তা। যা হাল্কা ভাবে নেওয়া উচিত নয়।’
পুলিশ অবশ্য দু’বছর পর গত ২৪ জুনে পেশ করা চূড়ান্ত রিপোর্টে জামিন-অযোগ্য সেই সব ধারা আদৌ প্রয়োগ করেনি। গোটা তিনেক জামিনযোগ্য ধারা দিয়েছিল মাত্র। রিপোর্ট পাওয়ার পর বিচারক ৭ জুলাই তাঁর এজলাসে অনুব্রতকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও ২৯ জুন মাত্র লোকচক্ষুর অন্তরালে আত্মসমর্পণ করে পাঁচ মিনিটে জামিন পেয়ে যান অনুব্রত! তবে গত ৭ জুলাই অনুব্রত আদালতে আসেননি। আদালতের নির্দেশ ছিল এ দিনই হাজির হওয়ার। বৃহস্পতিবার সেই অনুযায়ী সিউড়ি সিজেএম আদালতে আসেন অনুব্রত।
ঘড়িতে তখন বেলা ১টা ১৫ মিনিট। সঙ্গে ছিলেন দেহরক্ষী। মুখ্যবিচারবিভাগীয় ম্যাজিষ্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে ঢোকার পরও শাসকদলের হেভিওয়েট নেতাকে বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। আইনজীবীদের জন্য নির্ধারিত স্ট্যাণ্ড ফ্যানটিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় তাঁর দিকে। এরপরই অনুব্রতর আইনজীবী অনুব্রতর উপস্থিতিতি নিয়ে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘পুলিশ আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে তার প্রেক্ষিতে আপনার বক্তব্য কী। আপনি দোষী না নির্দোষ?’’
অনুব্রত উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘আমি নির্দোষ। এরপরই বিচারক চার্জ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন নির্দিষ্ট করেন। সম্পূর্ণ ঘটনাক্রম শেষ হয় সাত্র ৭ মিনিটেই!
তৃণমূল জেলা সভাপতি ১টা ১১মিনিটে আদালত ছাড়েন। আদালত থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন, ‘‘আমি আগেই বলেছি আমি নির্দোষ। আদালতকে শ্রদ্ধা করি। আদালতের নির্দেশ মানব।’’
কি বলছেন বিরোধীরা?
তাঁদের দাবি ‘‘ওর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সব রাস্তাই তো আগে থেকে বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ। সামনের মাসের দু’দিনও একই পদ্ধতি অবলম্বন করবে পুলিশ। সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।’’ জেলা পুলিশ অবশ্য এই নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy