Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
আবাসন কেলেঙ্কারি

গৌতমের নামে চার্জ গঠন হয়নি সাতাশ মাসেও

চার্জশিট পেশ করার তবু একটা প্রারম্ভিক সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। ৯০ দিন। কিন্তু অভিযুক্তের নামে চার্জ গঠনের তেমন কোনও ন্যূনতম সময়সীমা নির্দিষ্ট করা নেই। সেই অনির্দিষ্টতার ফাঁকে অনেক মামলাতেই চার্জ গঠনের কাজে গড়িমসি করা হয় বলে অভিযোগ।

শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১৫
Share: Save:

চার্জশিট পেশ করার তবু একটা প্রারম্ভিক সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। ৯০ দিন। কিন্তু অভিযুক্তের নামে চার্জ গঠনের তেমন কোনও ন্যূনতম সময়সীমা নির্দিষ্ট করা নেই। সেই অনির্দিষ্টতার ফাঁকে অনেক মামলাতেই চার্জ গঠনের কাজে গড়িমসি করা হয় বলে অভিযোগ।

বামফ্রন্ট জমানার আবাসন কেলেঙ্কারির মামলায় চার্জশিট দেওয়ার ২৭ মাস পরেও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সিপিএম নেতা গৌতম দেবের নামে চার্জ গঠন করা যায়নি। এই দেরির জন্য অভিযুক্ত পক্ষ এবং তদন্তকারী সংস্থা পরস্পরকে দোষারোপ করছে। তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি বলছে, নানা ছুতোয় মূল অভিযুক্তের আইনজীবীই চার্জ গঠন আটকে দিচ্ছেন। আর অভিযুক্তের কৌঁসুলি চার্জ গড়তে না-পারার জন্য দায়ী করছেন সিআইডি-র অক্ষমতাকেই। এই টানাপড়েনে ওই কেলেঙ্কারি মামলার ভবিষ্যৎ নিয়েই বেজায় ধন্দে পড়ে গিয়েছে সিআইডি।

ধন্দ কীসের?

সিআইডি জানাচ্ছে, ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল বাম জমানার আবাসন কেলেঙ্কারি নিয়ে অভিযোগ করে তৃণমূল আমলের আবাসন দফতর। ওই বছরের সেপ্টেম্বরেই সিপিএম নেতা গৌতম দেব-সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে কলকাতা নগর দায়রা আদালতে চার্জশিট পেশ করা হয়েছিল। তদন্তকারীদের অভিযোগ, তখন থেকেই চার্জ গঠনে বাগড়া দেওয়া হচ্ছে নানা ভাবে। কখনও প্রয়োজনীয় নথি না-পাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে আবার কখনও বা নির্দেশের প্রতিলিপি মেলেনি বা মিললেও লেখা অস্পষ্ট— এই যুক্তি দেখিয়ে গৌতমবাবুর আইনজীবী চার্জ গঠন করতে দিচ্ছেন না। ‘‘মাঝেমধ্যে বিচারকের অসুস্থতার কারণেও চার্জ গঠনের শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে,’’ বলছেন এক সিআইডি-কর্তা।

আজ, শুক্রবার আবার শুনানির দিন পড়েছে ওই মামলার। সরকারি আইনজীবী তমাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দ্রুত চার্জ গঠনের জন্য আদালতে আবার আর্জি জানানো হবে।’’ গৌতমবাবুর আইনজীবী ইয়াসিন রহমান অবশ্য চার্জ গঠন করতে না-পারায় দায় সরকার পক্ষের ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘চার্জ গঠন করতে না-পারাটা সিআইডি-র অক্ষমতা।’’ ইয়াসিনের মন্তব্য, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। নির্বাচন আসছে বলেই সিআইডি জেগে উঠেছে। কিন্তু সব রকম নথি তারা উপযুক্ত সময়ে দিতেই পারছে না। অথচ মামলার শুনানি দ্রুত শেষ করার জন্য যথাযথ ভাবে সেই সব নথিপত্র পেশ করা আবশ্যিক।

মামলাটি ঠিক কী?

সিআইডি জানায়, ১৯৯৩ সালে রাজ্যের আবাসন দফতর নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের জন্য ফ্ল্যাট তৈরি করতে একটি বেসরকারি সংস্থাকে বিনা দরপত্রে ৪৫.৬৯ একর জমি লিজ দিয়েছিল। তাতে আবাসন দফতরের ক্ষতি হয় ১৭ কোটি টাকা। ওই বেসরকারি সংস্থা ফ্ল্যাট তৈরি না-করে ‘সল্টলেক এস্টেট ক্রেডিট প্রাইভেট লিমিটেড’ সংস্থাকে বেআইনি ভাবে জমিটি হস্তান্তর করে। সেই সংস্থাও ফ্ল্যাট তৈরি না-করে ২০০৪ সালে জমিটি ফের দিয়ে দেয় অন্য একটি সংস্থাকে, যার কর্ণধার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ছেলে চন্দন বসু। কিন্তু চন্দনবাবুর সংস্থাও ওই জমিতে ফ্ল্যাট তৈরি করেনি। বারবার জমি হাতবদল হয়েছে। কিন্তু আবাসনের ‘আ’ দেখা যায়নি।

সিআইডি-র অভিযোগ, দফায় দফায় ওই জমি হস্তান্তরের কাজটা হয়েছে দরপত্র না-ডেকেই। এবং জমির হাতবদলের জন্য সরকারের যে-‘ট্রান্সপার ফি’ প্রাপ্য, তা-ও পায়নি আবাসন দফতর। আবার নির্দিষ্ট সময়ে ফ্ল্যাট দিতে না-পারার জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ বেসরকারি সংস্থার যে-টাকা দেওয়ার কথা, তা-ও দেয়নি তারা। সব মিলিয়ে মোট ২০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে আবাসন দফতরের।

এ বিষয়ে তালতলা থানায় দায়ের করা অভিযোগে চন্দনবাবু এবং তাঁর স্ত্রীর নাম থাকলেও চার্জশিটে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনেনি সিআইডি। সেই সময় তদন্তের পদ্ধতি নিয়েও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির অভিযোগ উঠেছিল। কী ভাবে এই দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত দ্রুত শেষ করে চার্জশিট পেশ করা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। বিরোধীদের অনেকেই বলেন, ‘‘সিপিএমের প্রথম সারির নেতা গৌতমবাবুকে ফাঁসাতেই এই মামলায় জড়ানো হয়েছে।’’

সিআইডি-র এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলেছে বলেই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।’’ চার্জশিটে ৩৭ জন সাক্ষীর কথা আছে। রেকর্ড করা হয়েছে ২৩ জনের জবানবন্দি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE