প্রতীকী ছবি।
পঞ্চায়েত সদস্য তিনি। অতএব, তাঁর স্কুলপড়ুয়া, নাবালিকা মেয়ের বিয়েতে ছাড় দিতে হবে—শুক্রবার বাঁকুড়ার বড়জোড়ার হাটআশুরিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় মেয়ের বাবার মুখে এমনই দাবি শুনে চোখ কপালে ওঠে ‘চাইল্ড লাইন’-এর কর্মীদের। তবে তাঁরা জানিয়ে দেন, আইনের চোখে সবাই সমান। বাল্যবিবাহ দিলে জেল পর্যন্ত হতে পারে। জোঁকের মুখে নুন পড়ে তাতে। আটকায় গায়ে হলুদ হওয়া চোদ্দো বছরের কিশোরীর বিয়ে।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘নাবালিকা বিয়ের বিরুদ্ধে সচেতনা তৈরিতে যাঁদের উপরে ভরসা রাখে প্রশাসন, তাঁদেরই এক জন এমন করলে খুবই চিন্তার।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, সিপিএমের টিকিটে জিতেছিলেন পেশায় দিনমজুর ওই ছাত্রীর বাবা। পরে তৃণমূলে যোগ দেন। বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের কাজল পোড়েল বলেন, ‘‘আমাদের বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য কেন এটা করলেন, জানতে চাইব।” ‘চাইল্ড লাইন’ সূত্রে খবর, সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে শুক্রবার তাদের ‘১০৯৮’ (টোল ফ্রি) নম্বরে ফোন আসে। ‘চাইল্ড লাইন’-এর কর্মী সব্যসাচী তিওয়ারি ও রুমা মণ্ডল পুলিশ নিয়ে কিশোরীর বাড়িতে পৌঁছন। রুমাদেবীর দাবি, “বিয়ে বন্ধের কথা বলতেই সবাই ‘রে-রে’ করে ওঠেন। মেয়ের বাবা রাজনৈতিক কর্মীদের ডাকেন। নেতাদেরও ফোন করেন। কেউ পাশে না দাঁড়ানোয় উনি আমাদের বলেন, ‘আমি পঞ্চায়েত সদস্য। আমার জন্য তো এ ব্যাপারে ছাড় থাকবে’। আমরা ওঁকে বলি, নাবালিকার বিয়ে দিলে জেলও হতে পারে।’’ কিশোরীর বাবা শনিবার ফোন ধরতে চাননি। তবে ফোনে তাঁর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এক জন বলেন, ‘‘উনি দিনমজুরি করেন। দুই মেয়ে, এক ছেলের বাবা। সুপাত্রের সন্ধান পেয়ে বড় মেয়েটির বিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পঞ্চায়েত সদস্য বলেও ছাড় পেলেন না। তাই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন।’’
‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প চালুর পরেও বাঁকুড়ায় নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়নি। ‘চাইল্ড লাইন’ সূত্রের খবর, ২০১৬-তে জেলায় ১২১, ২০১৭-তে ১২২ এবং চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত ৩০টি বাল্যবিবাহ রোখা হয়েছে। কিন্তু সেগুলিই বন্ধ করা গিয়েছে, যেগুলির খবর মিলেছে। খবর মেলেনি, এমন ঘটনাও আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy