Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
নাবালিকার বিয়ে, মৌলবীকে ধরল পুলিশ

পাত্রী ক্লাস সেভেন, পাত্র প্রাইমারি

নিকাহ্ পর্ব শেষ। কম দামি আতর, কড়া মাড় দেওয়া সাজপোশাক, রাতের খানাপিনা— একে একে মিটে গিয়েছে সে পর্বও। মুখে পান পুরে গুমোট প্যাণ্ডেল থেকে বেরিয়ে বরযাত্রীরা এলোমেলো ঘুরছিলেন।

সেই নাবালক-নাবালিকা। —নিজস্ব চিত্র

সেই নাবালক-নাবালিকা। —নিজস্ব চিত্র

সুজাউদ্দিন
রানিনগর  শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৬
Share: Save:

নিকাহ্ পর্ব শেষ।

কম দামি আতর, কড়া মাড় দেওয়া সাজপোশাক, রাতের খানাপিনা— একে একে মিটে গিয়েছে সে পর্বও।

মুখে পান পুরে গুমোট প্যাণ্ডেল থেকে বেরিয়ে বরযাত্রীরা এলোমেলো ঘুরছিলেন।

জিপটা এসে থামল তখনি।

ঝপাঝপ নেমে এলেন জনা পাঁচেক খাঁকি উর্দি। বেশি বাক্যব্যয় না করে নাবালিকা বিয়ে দেওয়ার অপরাধে হাতেনাতেই আটক করে জিপে তুলে নেওয়া হল কাজি সাহেবকে। সঙ্গে মেয়েটির বাবাও।

রানিনগর থানার মিনিট পনেরোর অপারেশনের মাঝেই অবশ্য তখন পান মুখেই পাততাড়ি গুটিয়েছেন বরযাত্রীরা। খেতে বসা নিমন্ত্রিতরা তখন পালাতে পারলে বাঁচেন।

মঙ্গলবার, পুলিশের এমনই অচেনা তৎপরতা দেখল কাতলামারির রামনগরপাড়া। পুলিশ জানিয়েছে পাত্রীর বয়স তেরো বছর। কাতলামারি হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সে। আর পাত্র? মেরেকেটে দশ। পাশের গ্রাম নটিয়ালের প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া।

আর এই বিয়ের পিছনে রয়েছে, স্থানীয় এক মৌলবীর তৎপরতা। যা নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীদেরও আপত্তি রয়েছে অনেকের। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘বহুবার নিষেধ করেছিলাম আমরা, ফাঁদে পা দিও না, শুনলে তো!’’

এমন নাবালিকা বিয়ে নিয়ে আপত্তি রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা ইমাম মোয়াজ্জিন সংগঠনের সহ-সম্পাদক মোজাফ্ফর খানেরও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এর বিরোধিতা করছি বহু দিন। এমন কাজ করা কখনও উচিত নয়। আমরা এর আগেও বাল্য বিয়ে নিয়ে অনেক সভা করেছি প্রয়োজনে আবারও বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা শিবির করব।’’

পাত্রীর বাবার দাবি, ‘‘নটিয়ালের সেলিম সেখ বেশ কিছু দিন থেকে আমাকে খুব করে ধরে ছিল জানেন, মেয়ের বিয়ের জন্য। শেষে তার পিড়াপিড়িতে রাজি হয় নগদ ২৩ হাজার টাকা অগ্রীম পণও দিয়েছিলাম।’’ ওই মোলবির দাবি ছিল, বিয়ে হবে নিছক খাতায় কলমে বিয়ে হবে। ছেলে মেয়েরা বড় হলে বছর তিনেক পরে শ্বশুরবাড়ি যাবে মেয়ে।

স্থানীয় এক ইমামের কথায়, ‘‘কিছু ফেরেপবাজ, মৌলবী পরিচয় দিয়ে টাকা নিয়ে এই সব ঘটকালি করে। এতে আমাদেরও মুখ পোড়ে।’’

নাবালক নাবালিকার বিয়ে নিয়ে রানিনগর থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছে। এমনকী থানার ওসি স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের নিজের ফোন নম্বরও দিয়ে এসেছেন— অসুবিধা হলেই যেন জানায় তারা।

সেই উদ্যোগী ওসি অরূপ রায় বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে প্রথম সভাটি আমরা কাতলামারি স্কুলে করেছিলাম। পরে অন্য স্কুল, মাদ্রাসায় ঘুরেছি একই আবেদন নিয়ে। তবে, এই খবরটা আগাম পেলে জল এত দূর গড়াতই না।’’

পাত্রের বাবা সেলিম মোল্লা পেষায় ছুতোর মিস্ত্রী। মোবাইল বন্ধ করে আপাতত সে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে, তার ঘনিষ্ঠেরা জানিয়েছেন, আদতে পণের টাকার লোভেই সে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।

রানিনগর ২ ব্লকের বিডিও আশিষ রায় বলেন, ‘‘আমরা নানাভাবে সচেতনতা চালানোর পরেও এমনটা হচ্ছে ভাবতে খারাপ লাগছে। আরও প্রচার চালাতে হবে।’’ আর রানিনগর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের আসরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘পাত্র ও পাত্রীর বয়স দেখে অবাক হয়েছি, এমনটা আগে কখনও দেখিনি। আমরা বুঝতে পারছি বাল্য বিবাহ নামক সামাজিক ব্যাধিটা আমাদের সমাজে থেকে গিয়েছে এখনও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police child marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE