তিন বছরে তিন বার! রাজ্য বিধানসভায় সংশোধনী-সহ ফের আসতে চলেছে বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থায় আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষা সংক্রান্ত বিল! ওই বিলে ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতির সম্মতি মিলেছে বলে গত ১১ মে তারিখের বিধানসভার বুলেটিনে জানানো হয়েছিল। কিন্তু চলতি অধিবেশনেই চার দফা সংশোধনী-সহ বিলটি আবার পেশ করা হবে, এমনই খবর সরকারি সূত্রে!
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাওয়ায় বিলটি এখন আইনে পরিণত হয়েছে। যদিও পরবর্তী ধাপ হিসেবে বিধি প্রণয়ন না হওয়ায় তা এখনও কার্যকরী হয়নি। এখন কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শ মেনে নেওয়ার জন্য ফের সংশোধনী বিল পাশ করাতে হবে বিধানসভায়। যার অর্থ আইন বাস্তবে কার্যকর হওয়ার আগেই ফের সংশোধন করতে হচ্ছে অর্থলগ্নি সংস্থা সম্পর্কিত বিল। এবং এই গোটা ঘটনাপ্রবাহে বিরোধীদের প্রশ্ন, তা হলে বিলে রাষ্ট্রপতির সম্মতি মিলেছে বলে রাজ্য সরকারের দাবি কি আদৌ যুক্তিগ্রাহ্য ছিল? কারণ, সংশোধনী বিল বিধানসভায় পাশ হওয়ার পরে রীতিমাফিক তা আবার দিল্লি পাঠাতে হবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য!
বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থায় আমানতকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে তৈরি এই বিলটির দিল্লি থেকে ফেরত আসার ইতিহাস অবশ্য সুবিদিত। বাম জমানায় এক বার বিলটি ফেরত এসেছিল। পরের বার ২০০৯ সালে পাশ হওয়া বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায় পড়েই ছিল। সারদা-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ২০১৩ সালের এপ্রিলে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে বাম জমানার বিলটি প্রত্যাহার করে নিয়ে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোটেকশন অব ইন্টারেস্ট অব ডিপোজিটর্স ইন ফিনান্সিয়াল এস্টাব্লিশমেন্ট বিল, ২০১৩’ পাশ করায়। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী তড়িঘড়ি তদানীন্তন রাজ্যপালের সই আদায় করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুমোদনের জন্য বিলটি পাঠিয়ে দিলেও দিল্লি বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে তা আবার ফেরত পাঠায়। রাজ্য সরকার ২০১৪ সালের এপ্রিলে আবার বিধানসভার অধিবেশনে সংশোধনী-সহ বিলটি পাশ করে। কিন্তু সেই বিলের উপরেও বেশ কিছু সুপারিশ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং যার জেরে তৃতীয় বছরে তৃতীয় বার বিলটি পেশ করতে হচ্ছে বিধানসভায়!
রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘দিল্লি থেকে ৫টি সংশোধনের প্রস্তাব ছিল। আমরা চারটি মেনে নিয়েছি। শুধু একটার ক্ষেত্রে আমাদের আপত্তি আছে। আর্থিক জরিমানা দিয়ে কারাদণ্ড লাঘব করার সংস্থান আমরা রাখতে চাই না। আমরা যথাসম্ভব কড়া শাস্তি চাই।’’ বিল পাশের পরে তা যে আবার রাষ্ট্রপতির কাছে সই করার জন্য পাঠাতে হবে, তা-ও জানিয়েছেন মন্ত্রী। সংশোধনী বিল আসছে বলেই এ বারের অধিবেশনে বেসরকারি লগ্নিসংস্থা নিয়ে বেসরকারি প্রস্তাব এনে আলোচনায় রাজি হয়নি বিরোধী বামেরা। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, ‘‘সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়ে মন্ত্রী, সাংসদ জেলে আছেন। আরও কয়েকটি কেলেঙ্কারির তদন্ত চলছে। এর মধ্যে যখন ওই বিষয়ে বিল পাশ করেও আইন কার্যকরী হয়নি, তার পরে আর বেসরকারি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার কি যুক্তি আছে?’’
কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবের প্রশ্ন শুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা সম্প্রতি বিধানসভায় বলেছিলেন, বেসরকারি লগ্নিসংস্থা নিয়ে আলোচনায় তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফের বিল আনারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কেন্দ্রের কোন চারটি সুপারিশ রাজ্য মেনে নিচ্ছে, তার ব্যাখ্যা অবশ্য এখনও মেলেনি। কেন্দ্রের সুপারিশ বা রাষ্ট্রপতির সম্মতি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী সংশোধনী বিল পেশ করবেন। এর বেশি কিছু এখন বলতে পারব না।’’ বিল পেশের দিন ক্ষণ এখনও ঠিক না হলেও এ দিন বিধানসভার কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী শুক্রবার কেন্দ্রের জমি অর্ডিন্যান্স (অধ্যাদেশ) প্রত্যাহার এবং হলদিয়ার সার কারখানা খোলার দাবিতে দু’টি বেসরকারি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy