Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
বিষবৃক্ষ /২

খারাপ ব্যবহার, ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে যেতে অনীহা

সারদা-রোজ ভ্যালির পরেও ছোটখাটো অর্থলগ্নি সংস্থায় ভরসা কমেনি। কেন? অনুসন্ধানের শেষ পর্ব৪টি ক্ষেত্রে চার্জশিটও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতেও ভয় নেই সাধারণ মানুষের। নিয়মিত দৈনিক হিসেবে বেসরকারি সংস্থায় টাকা রাখছেন তাঁরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৮ ০৩:০৯
Share: Save:

সারদা ও রোজ ভ্যালির মতো বেআইনি ভাবে টাকা তোলার অভিযোগে এই মুহূর্তে রাজ্যে ২৪টি সংস্থার নামে তদন্ত করছে রাজ্যের অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখা। ৪টি ক্ষেত্রে চার্জশিটও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতেও ভয় নেই সাধারণ মানুষের। নিয়মিত দৈনিক হিসেবে বেসরকারি সংস্থায় টাকা রাখছেন তাঁরা। দিনমজুর থেকে চাষি, রিকশাওয়ালা থেকে ছোট ব্যবসায়ী— অনেকেই ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে যান না।

অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখার ডিরেক্টর বিভূতিভূষণ দাস বলেন, ‘‘বেসরকারি সংস্থায় টাকা জমানোর প্রবণতা ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গিয়েছে। আমরা খবর পাচ্ছি, এখনও বহু মানুষ এ ভাবে টাকা রাখছেন।’’ তাঁর সতর্কবার্তা, কোনও সংস্থা ১০ শতাংশের বেশি সুদ দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলে অবিলম্বে তাঁদের জানাতে হবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের জিএম সুরজিৎ বসু বলেন, ‘‘আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আইন ২০১৫ সালে বলবৎ হয়েছে। যদি এ ভাবে কেউ মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলেন, যদি তিনি অপরাধী বলে প্রমাণিত হন, তা হলে যাবজ্জীবন পর্যন্ত হতে পারে।’’

কিন্তু ক’জন তা জানেন? আর সারদা-কাণ্ডের পরেও কেন তাঁরা ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে যান না? অভিযোগ, ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে গেলে ভাল ব্যবহার পাওয়া যায় না। ছোট আমানতকারীদের হেয় করা হয়। যে কাজটা আধঘণ্টায় হয়ে যেতে পারে, তার জন্য তিন দিন ঘুরতে হয়। এক ওষুধ ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘ডাকঘরে আমার মায়ের কিস্তিতে জমানো টাকার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে তুলতে গিয়েছিলাম। সাত দিন ঘুরিয়েছে।’’ দিনে ১০ টাকা তো আলাদা করে সরিয়ে রেখে মাসে ৩০০ টাকা ব্যাঙ্কে বা ডাকঘরে জমা দিতে পারেন। সেটা করেন না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে শুনতে হয়, ‘‘ব্যাঙ্কে বা ডাকঘরে গেলে সময় নষ্ট হয়।’’ তা ছাড়া দিনে ১০ টাকা করে সরিয়ে রাখলেও মাসের মাঝামাঝি আচমকা দরকারে ওই টাকাটা খরচ হয়ে যেতে পারে, এমনও জানিয়েছেন কেউ। তাঁর কথায়, ‘‘টাকা তো আমার কাছেই থাকছে।’’

এক রিকশাচালকের কথায়, ‘‘আমরা গরিব মানুষ। মাঝেমধ্যেই টাকার প্রয়োজন হয়। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে গেলে কত জায়গায় সই-সাবুদ করতে হয়। কত কাগজ দিতে হয়। আমাদের এত কিছু আছে নাকি! আর এদের কাছে টাকা চাইলে বাড়ি এসে নগদ টাকা দিয়ে যায়। একটা জায়গায় সই করলেই হল। কেন যাব ব্যাঙ্কে?’’

সমস্যা আরও রয়েছে। রাজ্যের বহু প্রত্যন্ত জায়গায় ব্যাঙ্কের শাখা নেই। ডাকঘরও অনেক দূরে। বাড়ি বয়ে এসে টাকা নিয়ে যাওয়া, ঋণ দিয়ে যাওয়া— এই ব্যবস্থায় অভ্যস্থ হয়ে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।

চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল অরূন্ধতী ঘোষ জানিয়েছেন, ডাকঘরের কর্মীরা যাতে গ্রাহকদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেন, তার প্রশিক্ষণ চলছে। নির্দিষ্ট ভাবে কেউ কোনও কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তবে, গ্রাহকদের বাড়ি গিয়ে টাকা নিয়ে আসা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।

স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, গ্রাম-গঞ্জে গ্রাহকদের সুবিধার কথা ভেবে শুধু তারাই নয়, সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কই কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট বা শাখা খুলছে। স্থানীয় গ্রামের শিক্ষিত ছেলেকে সেই শাখা চালানোর কাজ দেওয়া হচ্ছে। তবে, বাড়ি গিয়ে টাকা তোলা তাদের পক্ষেও সম্ভব নয়।

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Chit Funds Saradha Scam Illegal Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE