বলরামপুরের সুপুরডি গ্রামের প্রান্তে একটি বটগাছে ত্রিলোচনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন গ্রামবাসীরা। ইনসেটে ত্রিলোচন। ফাইল চিত্র।
পুরুলিয়া জেলার বলরামপুরে বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতো খুনের ঘটনায় সুপুরডি গ্রামেরই এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করল সিআইডি। সিআইডি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ জেরার পর পাঞ্জাবি মাহাতো নামে ওই ব্যাক্তি খুনের সঙ্গে তাঁর যোগ স্বীকার করে নিয়েছেন। তার পরই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে।
মে মাসের ৩০ তারিখ বলরামপুরের সুপুরডি গ্রামের প্রান্তে একটি বটগাছে ১৯ বছরের ত্রিলোচনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন গ্রামবাসীরা। তার আগের দিন রাত থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তরুণ এই বিজেপি কর্মী।
ঝুলন্ত ত্রিলোচনের পরনের টি-সার্টে লেখা ছিল— “বিজেপি করা! এবার বোঝ”। ত্রিলোচনের মৃত্যু ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। বিজেপি সরাসরি শাসক তৃণমূলকেই দায়ী করে এই খুনের ঘটনায়। তারা সিবিআই তদন্ত দাবি করে। পালা করে বিজেপি রাজ্য নেতারা বলরামপুর এবং পুরুলিয়াতে শিবির করে রয়েছেন ওই ঘটনার পর থেকেই। এ সপ্তাহেই সেই মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর পুরুলিয়া সফর।
রাজ্য সিআইডির দাবি, সেই বিতর্কিত এবং রাজনৈতিক ভাবে স্পর্শকাতর হত্যাকাণ্ডের কিনারা তাঁরা অনেকটাই করে ফেলেছেন।
কিন্তু কে এই পাঞ্জাবি মাহাতো? যাকে সিআইডি গ্রেফতার করল খুনের ঘটনায়?
আরও পড়ুন:
চালকের কেবিনে মানসিক রোগী, রানাঘাটে ট্রেনের ধাক্কা বাফারে
স্থানীয়দের দাবি, পাঞ্জাবি গ্রামের একজন রাখাল। অত্যন্ত নির্বিরোধী ব্যক্তি। রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগ নেই। সিআইডির তদন্তকারীরাও স্বীকার করেছেন, অভিযুক্তর পেশা গরু চরানো। কিন্তু সিআইডি কর্তারা এখনও নিশ্চিত নন, অভিযুক্ত কেন ত্রিলোচনকে খুন করেছে। এক শীর্ষ সিআইডি আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা বেশ কয়েক দিন ধরে সুপুরডি গ্রামে তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি, যে দিন ত্রিলোচন নিখোঁজ হয়ে যান, সে দিন এই পাঞ্জাবির আচরণ ছিল সন্দেহজনক। সে দিন ঘন ঘন তাকে ফোনে কথা বলতে দেখা যায়। সে দিন যখন গ্রামের সবাই ত্রিলোচনকে খোঁজাখুঁজি করছে, তখন সেই দলে ছিল না সে। সেই সন্দেহ থেকেই তাকে জেরার জন্য ডাকা হয়।”
অভিযুক্ত পাঞ্জাবি মাহাতো। নিজস্ব চিত্র।
সিআইডির দাবি, জেরার মুখে অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন তিনি। এক সিআইডি আধিকারিক বলেন, “অভিযুক্ত প্রথমে দাবি করেছিল তার কোনও ফোন নেই। অথচ আমরা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী পেয়েছি যারা দেখেছেন ওকে মোবাইলে কথা বলতে।” গোয়েন্দারা অভিযুক্তের বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালানোর সময় দু’টি ভাঙা মোবাইল ও সিমকার্ড উদ্ধার করেন। সিআইডির গোয়েন্দাদের দাবি, এর পরই নাকি জেরায় খুনের সঙ্গে নিজের যোগ স্বীকার করে নেন অভিযুক্ত। সিআইডির ডিআইজি অপারেশনস নিশাদ পারভেজ বলেন, “কেন খুন করা হয়েছে ত্রিলোচনকে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এটা জানা গিয়েছে আরও অনেকে এই খুনের সঙ্গে জড়িত। তাদের চিহ্নিত করছেন আধিকারিকরা। আমরা উদ্ধার হওয়া মোবাইল এবং সিমকার্ড ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি।”
ত্রিলোচনের বাড়ির সামনে প্রতিবেশীদের ভিড়। নিজস্ব চিত্র।
আগামি ২৮ জুন পুরুলিয়াতে যাচ্ছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তাঁর সফরের মূল ফোকাসই হল বিজেপি কর্মীদের ওপর ‘সন্ত্রাস’। সেই পরিস্থিতিতে এই গ্রেফতারি সিআইডির কিছুটা স্বস্তি। শনিবারই ভবানী ভবনে সিআইডি সদর দফতরে গিয়েছিলেন ডিজি বীরেন্দ্র। আর তার পরই এই তড়িঘড়ি গ্রেফতার নিয়ে সংশয়ে পুলিশেরই একাংশ। তাঁদের মন্তব্য, খুনের মোটিভ পরিষ্কার হওয়ার আগেই অপরাধী গ্রেফতার হয়ে গেল!
ত্রিলোচনের পরিবারের আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা তিবরেওয়ালের দাবি, ‘‘এ সপ্তাহে মামলার শুনানি রয়েছে। তাই আচমকা এক জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি তদন্তের অগ্রগতি প্রমাণের চেষ্টা করছে।’’
সিআইডি-র সূত্রে ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে, এফআইআরে নাম না থাকা মানেই যে কেউ ঘটনায় জড়িত নন, এমনটা নয়। পাঞ্জাবিকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করার পরেই গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘বিজেপি সিবিআই চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। তা খারিজ হয়েছে। দিলীপবাবুরা মাঝেমধ্যেই অর্থহীন আর উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলছেন।’’
আরও পড়ুন:
রেস্তরাঁ থেকে বের করে দেওয়া হল হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিবকে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy