Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কে ঢুকছে পাড়ায়, খোঁজ দেবে গোয়েন্দা-বন্ধু

ওই ‘বন্ধুদের’ কাজ হবে এলাকার যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য গোয়েন্দাদের নজরে আনা। এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় উস্কানির তথ্য যথাসময়ে গোয়েন্দাদের কাছে পৌঁছে দেবেন তাঁরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৭ ০৪:২৩
Share: Save:

গোয়েন্দা পুলিশের বড় হাতিয়ার ‘সোর্স’। তাঁরা তো আছেনই। থাকছেন সিভিক ভলান্টিয়ারেরাও। তারই সঙ্গে এ বার পাড়ায় পাড়ায় ‘বন্ধু’ নিয়োগ করতে চলেছে সিআইডি।

ওই ‘বন্ধুদের’ কাজ হবে এলাকার যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য গোয়েন্দাদের নজরে আনা। এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় উস্কানির তথ্য যথাসময়ে গোয়েন্দাদের কাছে পৌঁছে দেবেন তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে তথ্য আদানপ্রদানের জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে সিআইডি।

ভবানী ভবনের গোয়েন্দাকর্তাদের বক্তব্য, রাজনৈতিক হাঙ্গামায় উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা হলে ওই বন্ধুদের মাধ্যমেই সেই খবর দ্রুত জানতে পারবে পুলিশ। বাদুড়িয়া-বসিরহাটে সম্প্রতি যে-গোলমাল হয়েছে, নতুন গোয়েন্দা-বন্ধুরা আগাম খবর দিলে সেই ধরনের ঘটনা ঠেকানো যাবে। জুলাইয়ে বহিরাগতদের মদতেই বাদুড়িয়া-বসিরহাটে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুন: বিচারপতি চেয়ে বিক্ষোভ

কারা হবেন ওই গোয়েন্দা-বন্ধু? কী ভাবে নিয়োগ করা হবে তাঁদের?

ভবানী ভবনের খবর, বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন লোকেদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া এলাকা-ভিত্তিক তথ্য এবং অপরাধীদের নামের একটি ডেটাবেস তৈরি করা হবে সিস্টেমের মধ্যে। কোন এলাকায় কী ধরনের হাঙ্গামার ঘটনা ঘটে, কারা গোলমাল পাকায়— সবই পৃথক ভাবে রাখা থাকবে ওই ডেটাবেসে। কোনও ঘটনা ঘটলে ওই ডেটাবেস দেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সিআইডি।

সিআইডি জানাচ্ছে, ‘বন্ধুদের’ পরিচয় গোপন রাখা হবে। তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবেন সিআইডি-র অফিসারেরা। এত দিন গোয়েন্দাদের নিজস্ব ‘সোর্স’ থাকলেও তা ছিল একান্ত ব্যক্তিগত। নতুন ‘বন্ধুরা’ হবেন সামগ্রিক ভাবে গোয়েন্দা বিভাগেরই সহায়ক।

রাজ্যের সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্য সিআইডি-র কাছে ‘টাস্ক ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি অ্যাপ রয়েছে। তার মাধ্যমে রাজ্যের প্রায় ৪০ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার নিজেদের এলাকার গোপন তথ্য পুলিশকর্তাদের কাছে পাঠিয়ে থাকেন। নতুন ‘সাসপেক্টেড ইনফর্মেশন সিস্টেম’-এ সিভিক ভলান্টিয়ারদের ওই অ্যাপ-কেও যুক্ত করা হবে বলে জানাচ্ছে ভবানী ভবন।

বসিরহাটের গোলমালের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাড়ায় পাড়ায় শান্তি বাহিনী গঠন করতে বলেছিলেন। সিআইডি জানিয়েছে, থানা স্তরের ওই বাহিনী গড়ার পরে তাদের ‘সাসপেক্টেড ইনফর্মেশন সিস্টেম’-এর অধীনে আনা হবে। সিআইডি-র এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বন্ধুদের পাঠানো তালিকা ধরে ধরে সন্দেহভাজনদের উপরে নজর রাখতে পারবেন সিভিক ভলান্টিয়ারেরা।’’

বন্ধু নিয়োগের উদ্যোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই অবশ্য কিছু প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের একাংশ বলছেন, সাধারণত পুলিশের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলেন শাসক দলের নেতা-কর্মীরাই। ফলে ‘বন্ধু’ হিসেবে তাঁদেরই নিয়োগ করার কথা। সে-ক্ষেত্রে ওই ‘বন্ধুদের’ মূল কাজ হবে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের কাজকর্মের উপরে নজর রাখা। সেই বন্ধুদের তথ্য-সংবাদ কতটা নিরপেক্ষ হবে, প্রশ্ন থাকছেই।

গোয়েন্দা সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, প্রাথমিক ভাবে পুলিশের বন্ধুদের এই পরিকল্পনায় যুক্ত করা হলেও পরে ওই কাজে লাগানো হবে সাধারণ নাগরিকদেরও। তাঁদের কাছ থেকে আবেদন জমা পড়লে সেগুলি খুঁটিয়ে দেখে তবেই নিয়োগ করা হবে৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE