বাগুইআটির জাল পাসপোর্ট কাণ্ডে পঠানকোটের নাম জুড়েছে আগেই। ওই ঘটনায় বৈষ্ণবঘাটা থেকে ধৃত শেখ হাফিজের সঙ্গে জঙ্গি-যোগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। এক তদন্তকারী অফিসার শুক্রবার জানান, বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন (হুজি)-এর সঙ্গে হাফিজের যোগসূত্রের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে পুরো ঘটনার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে সিআইডি-র হাতে।
ওই ঘটনায় এ-পর্যন্ত এক মহিলা সহ সাত জনকে গ্রেফতার করেছে বাগুইআটি থানা। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (বিমানবন্দর) শিবানী তিওয়ারি এ দিন জানান, হাফিজের কাছ থেকে ১১টি পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে আটটি পাসপোর্ট আসল। সেগুলি হয় চুরি গিয়েছিল অথবা হারিয়ে গিয়েছিল। এডিসিপি বলেন, ‘‘এত আসল পাসপোর্ট ওই ব্যক্তির কাছে কী করে এল, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ হাফিজের কাছে পাওয়া পাসপোর্টগুলির বেশির ভাগই উত্তর ভারতের ঠিকানার। তার মধ্যে একটি পাসপোর্টে সঞ্জীব কুমার নামে পঞ্জাবের পঠানকোটের এক বাসিন্দার উল্লেখ আছে। বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার সূত্রে যে-পঠানকোট এখন সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে।
তদন্তকারীদের সন্দেহ, উত্তর ভারতের কোনও বড় চক্রের সঙ্গে হাফিজের যোগাযোগ আছে। চক্রটি নকল পাসপোর্ট তৈরির জন্য আসল পাসপোর্ট পাচার করে। সেই সব আসল পাসপোর্ট দুষ্কৃতীদের হাতে কী ভাবে পৌঁছয়, হাফিজকে জেরা করে তার হদিস পেতে চাইছে সিআইডি। হাফিজকে জেরা করে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট জানতে পেরেছে, সে আদতে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাসিন্দা। সাত বছর আগে মুর্শিদাবাদ হয়ে প্রথমে উত্তর ২৪ পরগনার গেদেতে এসে বসবাস শুরু করে। তার পরে প্রথমে মধ্যমগ্রাম এবং পরে নেতাজিনগরের বৈষ্ণবঘাটা বাইলেনে উঠে আসে। তদন্তকারীরা জানান, হাফিজ মূলত বাংলাদেশ থেকে এ দেশে আসা লোকজনকে জাল পাসপোর্ট বানিয়ে দিয়ে তাদের বিদেশযাত্রার ভিসারও ব্যবস্থা করে দিত। নিজের ভ্রমণ সংস্থার অফিসের আড়ালে চালাত এই কারবার।
এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘হাফিজ বাংলাদেশিদের ভারতীয় পাসপোর্ট করে দিয়ে বিদেশে পাঠাত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ হাফিজ ধরা পড়ার পরেও জাল পাসপোর্ট তৈরির জন্য তার ফোনে বাংলাদেশ থেকে ফোন এসেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, হাফিজের ডানহাত হয়ে নকল পাসপোর্ট তৈরির কাজ করত কেষ্টপুরের আদর্শ পল্লির শিমুলতলার বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন রানা ওরফে মামা। শিমুলতলায় যার পরিচয় জ্যোতিষী ও হস্তরেখাবিদ হিসেবে। গেরুয়া রঙের ঝাঁ-চকচকে দোতলা বাড়ির বাসিন্দা, সত্তর বছরের চিত্তরঞ্জনকে ‘মামা’ নামে অবশ্য পাড়ার লোকজন চেনেন না। চিত্তরঞ্জন নিজের চক্রের মধ্যেই ওই নামে পরিচিত বলেই জেনেছে পুলিশ। সে-ও বাংলাদেশি। ২০০৫ সালেও জাল পাসপোর্ট তৈরির চক্রের পাণ্ডা হিসেবে জেল খেটেছিল মামা।
আসল পাসপোর্টে যে-অংশে পাসপোর্টধারীর নাম ও পরিচয় থাকে, দুষ্কৃতীরা মূলত সেই জায়গাটিই জাল করত বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। মামা এই কাজে সিদ্ধাহস্ত। মামার কাছ থেকে জাল পাসপোর্ট তৈরির বিদ্যা করায়ত্ত করেছিল তার শাগরেদ সুরজিৎ দত্ত ওরফে জালালুদ্দিন। সুরজিতের বাড়িতেও জাল পাসপোর্ট তৈরির সরঞ্জাম মিলেছে। কম্পিউটার থেকে অজস্র বাংলাদেশির ঠিকানা, ছবিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই সব ঠিকানা সত্যি না ভুয়ো, তা জানতে নম্বর ধরে ধরে ফোন করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy