Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঘুরে দাঁড়াতে সেনাপতি বদল চাই, দিল্লির দরবারে বাংলার কংগ্রেস

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর ডাকে দিল্লি গিয়ে জোট নিয়ে মতামত জানিয়ে এসেছেন দলের চার সাংসদ, ২১ জন বিধায়ক, তিন শাখা সংগঠনের প্রদেশ নেতৃত্ব এবং আরও চার জন প্রদেশ স্তরের নেতা।

অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০৩:১৭
Share: Save:

লোকসভা ভোটে কার সঙ্গে জোট করা উচিত, সেই প্রশ্নে বিতর্ক আছে। কিন্তু তার আড়ালে বাংলার কংগ্রেসে পাকিয়ে উঠছে নেতৃত্ব বদলের দাবি ঘিরে বিরোধও।

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর ডাকে দিল্লি গিয়ে জোট নিয়ে মতামত জানিয়ে এসেছেন দলের চার সাংসদ, ২১ জন বিধায়ক, তিন শাখা সংগঠনের প্রদেশ নেতৃত্ব এবং আরও চার জন প্রদেশ স্তরের নেতা। রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে মত দেওয়ার ফাঁকেই এঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন প্রদেশ সভাপতি পদে মুখ বদলের আর্জি পেশ করেছেন রাহুলের কাছে। পরিবর্তনপন্থীদের যুক্তি, রাজ্যে ভাঙনবিধ্বস্ত কংগ্রেসকে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করতে হলে সেনাপতি বদলানো উচিত।

বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতারা বলছেন, তাঁদের দলে নেতা বদলের জন্য দিল্লিতে দরবার নতুন নয়। যখন যিনি দায়িত্বে থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে কোনও না কোনও গোষ্ঠীর নেতারা জনপথ বা আকবর রোডে হাজির হয়ে যান! কিন্তু অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে দলের এত জন নেতা-বিধায়কের তরফে নেতৃত্ব বদলের দাবি ওঠা বিরল।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী যে তৃণমূলের সঙ্গে আপসের পক্ষপাতী নন, রাজনৈতিক শিবিরে তা একেবারেই অজানা নয়। দলের এক প্রবীণ সাংসদের মতে, জাতীয় স্তরে বিজেপির মোকাবিলা এবং রাজ্যে কংগ্রেসের লোকসভা আসন ধরে রাখতে হলে তৃণমূলের হাত ধরতে হবে। বর্তমান প্রদেশ সভাপতিকে সামনে রেখে তৃণমূলের সঙ্গে সেতুবন্ধন সম্ভব নয়। অধীরবাবু যদিও মনে করেন, ‘‘কেউ তো এখনও আমাদের জোটের প্রস্তাব দেয়নি। আমাদেরই কেউ কেউ একটু বেশি উতলা হচ্ছেন।’’

আবার অধীরবাবুর সঙ্গে রাজনৈতিক অবস্থানে কোনও ফারাক নেই, এমন কিছু নেতা-নেত্রীও সভাপতি বদলের পক্ষে। তাঁদের অভিযোগ, প্রদেশ সভাপতি সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারেননি গত চার বছরে। বহু সময়েই দলীয় বৈঠকের খবর পর্যন্ত প্রদেশের সব নেতা-নেত্রীরা পাননি। মাত্র দু’বছরে ১৫ জন বিধায়ক দল ছেড়েছেন, আরও ছাড়বেন! রাজ্য কংগ্রেসের এক পদাধিকারী রাহুলের কাছে এমনও বলে এসেছেন, প্রয়োজনে তাঁরা পদত্যাগ করবেন। রাজ্য নেতৃত্বকে ঢেলে সাজা হোক। কিন্তু কাকে দায়িত্ব দিলে কংগ্রেস আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে, এমন কোনও নাম তাঁরা করতে পারছেন না!

সহকর্মীদের বড় অংশের এমন মনোভাবের কথা বিলক্ষণ জানেন অধীরবাবু। তাঁর তরফে যুক্তি— তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পরে বাংলায় কংগ্রেস চার জন সাংসদ এবং বিধানসভায় ৪৪ জন বিধায়ক পেয়েছে, এটা রেকর্ডে থাকবে। তৃণমূলের ‘গাজর ও ডান্ডা’ নীতির জন্য বিধায়কেরা দল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন, সেটা পরের প্রশ্ন। অধীরবাবু বলছেন, ‘‘প্রদেশ তো দূরের কথা! মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের দায়িত্ব পাওয়ার জন্যও আমি কখনও সনিয়া বা রাহুল গাঁধীর কাছে দরবার করিনি। আমাকে দায়িত্ব ওঁরা দিয়েছিলেন। রাহুলজি’কে আমিও বলেছি, সংগঠনের স্বার্থে উচিত মনে করলে আমাকে সরিয়ে দিয়ে যোগ্যতর ব্যক্তির খোঁজ করুন।’’ আর এ সব নিয়ে সরসারি মন্তব্যে না গিয়ে পর্যবেক্ষক গৌরবের বক্তব্য, বাংলায় তাঁদের সামনে প্রধান লক্ষ্য এখন সংগঠনকে শক্তিশালী করা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Adhir Ranjan Chowdhury Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE