ফাঁদ: চিতাবাঘ ধরতে পাতা হয়েছে খাঁচা। নিজস্ব চিত্র
ডুয়ার্সে চিতাবাঘের হামলায় এক মহিলার মৃত্যুর ঘটনার আতঙ্কে দিনেদুপুরেই জনহীন হয়ে পড়েছে বেতগুড়ি চা বাগান এলাকা। পাশাপাশি, ওই ঘটনায় বুধবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এলাকায় বন্যপ্রাণীর উপর নজরদারির গাফিলতির কথা তুলে বন দফতরের আধিকারিকদের এ দিন ভর্ৎসনাও করেন তিনি। সেই সঙ্গে দফতরে কর্মী নিয়োগ নিয়ে তাঁর নির্দেশ কেন অমান্য করা হল, সে-ব্যাপারেও এ দিন আধিকারিকদের কাছে কৈফিয়ত চান তিনি।
‘মানুষখেকো’ চিতাবাঘটি ফের হামলা চালাতে পারে, এই আশঙ্কায় ভোরে বা রাতে বাড়ির বাইরে একা না বেরনোর কড়া নির্দেশ জারি করল বন দফতর। শিশুদেরও চোখে চোখে রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বনপাল (বন্যপ্রাণ) উজ্জ্বল ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘বনকর্মীদের চা বাগানে টহলদারি চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় একা চলাচল করতেও নিষেধ করা হয়েছে।’’ এহেন পরিস্থিতিতে জনহীন হয়ে পড়েছে বেতগুড়ি চা বাগান এলাকা। ভরা বর্ষার মরসুমে চা পাতা তুলতেও যেতে চাইছেন না আতঙ্কিত শ্রমিকেরা। শ্রমিকেরা চিতাবাঘের আতঙ্কে কাজে যোগ দিতে না চাওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে বাগানের মালিক সংস্থার মধ্যেও। ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অব ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়শনের সচিব সুমন্ত গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘আমরা ঘটনাটি শুনেছি। অত্যন্ত উদ্বেগজনক। চিতাবাঘটিকে দ্রুত ধরা হবে বলে আশা করছি।’’ চিতাবাঘটিকে ধরতে বেতগুড়িতে খাঁচা পেতেছে বন দফতর। তবে এখনও অধরা চিতাবাঘ।
এ দিন উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে বন আধিকারিকরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, ওই মহিলাকে চিতাবাঘেই আক্রমণ করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাঘ এবং হাতির আক্রমণ থেকে নজরদারি বাড়াতে আরও বনকর্মী নিয়োগ করার কথা ছিল রাজ্য জুড়ে। তার কী হল?’’ কার্যত ভৎর্সনার সুরে বনসচিব ইন্দিবর পাণ্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনাকে দু’বছর আগে তিনশো লোক নিয়োগ করতে বলেছিলাম। কেন এতদিনই করেননি?’’ সচিব জানান, ২৬৯ বনকর্মীর নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্ত উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে কেউই যেতে চাইছে না। তখন দু’টি প্রস্তাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সারতে দফতর পৃথক একটি নিয়োগ বোর্ড তৈরি করুক। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় ছেলেমেয়েদের বেশি করে সুযোগ দিক।’’ তিনি দফতরকে প্রস্তাব দেন, বন দফতর বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের অস্থায়ী ভাবে নিয়োগও করতে পারে। প্রশিক্ষণ চলাকালীন তাঁদের কিছুটা ভাতাও দিতে বলেন তিনি। একই সঙ্গে কাঠচুরি রুখতেও কর্মী নিয়োগ জরুরি বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার বেতগুড়ি চা বাগানের বাসিন্দা শুকুরমণি ওঁরাওয়ের খোবলানো মৃতদেহ উদ্ধার হয় বাগানেরই ২২ নম্বর সেকশন থেকে। দেহের বেশ কিছু অংশ চিতাবাঘটির পেটে গিয়েছে বলে মনে করেছেন বাসিন্দারা। চিতাবাঘের হামলায় ডুয়ার্স তথা উত্তরবঙ্গে শিশু-কিশোরদের প্রাণ গেলেও পরিণত মানুষকে মেরে ফেলার ঘটনা এই প্রথম। চিতাবাঘের এই আচরণ খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে বলেও বনপাল জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy