শপথের পরে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী।ছবি: রণজিৎ নন্দী।
অপেক্ষাতে কেটে গিয়েছে প্রায় চার দশক। শহরে মন্ত্রীর বাড়ি বলতে সুনীতি রোড বাইলেনের সেই বাড়িটাকেই এখনও চেনে কোচবিহার। যেখানে একসময় থাকতেন সন্তোষ রায়। যার কথা এখনও ঘুরে বেড়ায় কংগ্রেস থেকে তৃণমূল, প্রায় সব নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। তারপর আর শিকে ছেঁড়েনি শহরের ভাগ্যে।
বাম আমল চলে গিয়েছে। চলে গিয়েছে তৃণমূলের পাঁচ বছরের শাসনকালও। কিন্তু কোচবিহার শহরের বাসিন্দা কেউই এতদিন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার সুযোগ পাননি। শেষ পর্যন্ত এবারে তৃণমূলের নতুন সরকারের শপথের পর শহরের পরিচয়ে জুড়ল আরও এক মন্ত্রীর ঠিকানা। নতুনপল্লিতে বাড়ি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের। শুক্রবার বেলা ১টা নাগাদ যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন।
শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই বললেন, “এ বারে আর একটা মন্ত্রীর বাড়ি নয়, দু’জন মন্ত্রীর বাড়ি কোচবিহার শহরে। যার মধ্যে একজন মন্ত্রী হিসেবে তাঁর ইনিংস সবে শুরু করলেন।” পারিবারিক সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, রবীন্দ্রনাথবাবুর আদি বাড়ি শহরের উপকণ্ঠে ডাওয়াগুড়িতে। সেখানেই ভোটার তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। কিন্তু পঁচিশ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি নতুনপল্লিতে থাকায় গোটা জেলার মানুষ তাঁকে এখানকার বাসিন্দা হিসেবেই চেনেন। রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য বলেন, “ঠিকানা বড় কথা নয়। বড় কথা কাজ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আমরা গত পাঁচ বছর ধরে জেলায় উন্নয়নের কাজ করেছি। এবারে তিনি যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালনে কোনও ত্রুটি রাখব না। উন্নয়নই আমার মূল লক্ষ্য।”
কংগ্রেস আমলে কোচবিহারে দাপুটে নেতা ছিলেন সন্তোষ রায়। ধারে ও ভারে তাঁর কাছাকাছি ছিলেন না কেউ। এখনকার নেতা-কর্মীদেরও অনেকে সন্তোষবাবুকে রাজনৈতিক গুরু হিসেবে মানেন। ১৯৭২ সালে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় সন্তোষবাবু ছিলেন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী। পাঁচ বছর তিনি মন্ত্রী ছিলেন।
এরপর বাম আমলে কোচবিহার থেকে কমল গুহ, শিবেন চৌধুরী, দীনেশ ডাকুয়া, অনন্ত রায় মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তাঁরা কেউই কোচবিহার শহরের বাসিন্দা ছিলেন না। তৃণমূল সরকারের আমলে কোচবিহারের হিতেন বর্মন, বিনয়কৃষ্ণ বর্মন মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা দুজনেই মাথাভাঙার বাসিন্দা। এবারেও বিনয়বাবু মন্ত্রী হয়েছেন। সেটা যেন সবাই ধরে নিয়েছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথবাবু মন্ত্রী হবেন কি না তা নিয়ে সংশয় ছিলেন শহরবাসী।
এ দিন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান চলাকালীনই আবির খেলায় মেতে ওঠেন দলের কর্মী সমর্থকরা। কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন, “রবীন্দ্রনাথবাবু ও বিনয়বাবু কোচবিহার থেকে দু’জন মন্ত্রী হয়েছেন। তাতে আমরা খুব খুশি হয়েছি। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই কীভাবে জেলায় উন্নয়ন করা যায় সে কাজে আমরা সবাই মিলে সহযোগিতা করব।”
শুধু তৃণমূল নেতা-কর্মীরাই নন। খুশি হয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী সন্তোষবাবুর মেয়ে সঙ্ঘমিত্রা রায় সহ তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। সঙ্ঘমিত্রাদেবী বলেন, “শহরের বাসিন্দা হওয়ায় নানা সুবিধে রয়েছে। এখান থেকে যেমন গোটা জেলার দিকে লক্ষ্য রাখা যায় আবার শহরের উন্নয়নেও নানা কাজ করা যায়। বাবাকে দেখেছি সেরকম ভাবেই কাজ করতে।”
আর রবীন্দ্রনাথবাবুর বাড়ি নতুনপল্লিতে তো এ দিন উৎসবে সামিল হয়েছেন সবাই। রবীন্দ্রনাথবাবুর বড় মেয়ে পাপিয়া ঘোষ নিজের হাতে মিষ্টি বিলি করেছেন। তাঁর সঙ্গে সামিল হয়েছেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও। পাপিয়া ঘোষ বলেন, “খুব ভাল লাগছে। এই আনন্দটা অন্যরকমের। বাবার হয়ে ভোটের প্রচারে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি সাধারণ মানুষ বাবাকে একবার মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়ে আশীর্বাদ করছেন। তাঁদের কথা ভেবে ভাল লাগছে।”
এ দিকে কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী হওয়ায় ডান-বাম-বিজেপি সব পক্ষই খুশি। জেলার সব নেতারাই তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন। কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক কেশব রায় বলেন, “রাজনৈতিক ভাবে আমরা আলাদা মতাদর্শের হতে পারি। কিন্তু রবি আমার বন্ধু। আশা করছি উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষে তিনি কাজ করবেন।” ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা বাম আমলের মন্ত্রী পরেশ অধিকারী বলেন, “রবীন্দ্রনাথবাবু নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন। আলাদা রাজনৈতিক দলের হলেও তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী হওয়ায় আমাদের ভাল লেগেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy