Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ছয় হাসপাতাল ঘুরে গলা থেকে বেরোল কয়েন

পরিবার সূত্রের খবর, রানাঘাটের গাঙনাপুরের বাসিন্দা বছর চারেকের অর্ঘ্য বিশ্বাস শনিবার সকালে দাদার সঙ্গে ঘরে খেলছিল। তাদের মা মারা গিয়েছেন বছর তিনেক আগে। বাবা কাজের জন্য বেশিরভাগ সময়ে বাইরে থাকেন। ঠাকুরমাও কাজ করায় দুই নাতির দেখভালের দায়িত্ব থাকে তাঁর বৃদ্ধা মায়ের উপরে। শনিবার হঠাৎই ওই বৃদ্ধা দেখেন, ছোট্ট অর্ঘ্য খেলতে খেলতে একটি কয়েন মুখে পুরে ফেলেছে। তিনি দৌড়ে এসে কয়েনটি আঙুল দিয়ে বার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেটি গলার এমন জায়গায় আটকে ছিল যে বার করা যায়নি।

বিপত্তি: অস্ত্রোপচারের পরে অর্ঘ্য বিশ্বাস। (ডান দিকে) তার এক্স-রে প্লেটে দেখা যাচ্ছে, গলায় আটকে কয়েন। নিজস্ব চিত্র।

বিপত্তি: অস্ত্রোপচারের পরে অর্ঘ্য বিশ্বাস। (ডান দিকে) তার এক্স-রে প্লেটে দেখা যাচ্ছে, গলায় আটকে কয়েন। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০৩:১৪
Share: Save:

শিশুর গলা থেকে কয়েন বার করতে ঘুরতে হল চার-চারটি সরকারি এবং দু’টি বেসরকারি হাসপাতাল!

শনিবার বেলা ১২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত গলায় কয়েন আটকে থাকা অবস্থাতেই বছর চারেকের শিশুটিকে নিয়ে রানাঘাট মহকুমা, কল্যাণী জেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে বেড়ালেন বাড়ির লোকেরা। সেখান থেকে তাঁরা যান দক্ষিণ কলকাতা এবং ইএম বাইপাসের দুই বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু অভিযোগ, কোথাও বলা হয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই। কোথাও আবার সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করতে রাজি হলেও জানিয়ে দিয়েছে, দু’দিনের আগে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। শেষমেশ রাত সাড়ে ১২টার পরে এসএসকেএমে অস্ত্রোপচার হয়। ‘রেফার’ করার রোগ যে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে মজ্জাগত হয়ে গিয়েছে, তা আরও এক বার প্রমাণ গিয়েছে এই ঘটনায়।

পরিবার সূত্রের খবর, রানাঘাটের গাঙনাপুরের বাসিন্দা বছর চারেকের অর্ঘ্য বিশ্বাস শনিবার সকালে দাদার সঙ্গে ঘরে খেলছিল। তাদের মা মারা গিয়েছেন বছর তিনেক আগে। বাবা কাজের জন্য বেশিরভাগ সময়ে বাইরে থাকেন। ঠাকুরমাও কাজ করায় দুই নাতির দেখভালের দায়িত্ব থাকে তাঁর বৃদ্ধা মায়ের উপরে। শনিবার হঠাৎই ওই বৃদ্ধা দেখেন, ছোট্ট অর্ঘ্য খেলতে খেলতে একটি কয়েন মুখে পুরে ফেলেছে। তিনি দৌড়ে এসে কয়েনটি আঙুল দিয়ে বার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেটি গলার এমন জায়গায় আটকে ছিল যে বার করা যায়নি।

বাড়ির লোকেরা অর্ঘ্যকে নিয়ে প্রথমে ছোটেন রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা সম্ভব নয় জানিয়ে তারা তাকে কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে রেফার করে। ওই হাসপাতালে এক্স-রে করার পরে চিকিৎসকেরা জানান, কয়েনটি গলার ডান দিকে আটকে আছে। ‘এন্ডোস্কপিক রিমুভাল’-এর মাধ্যমে বার করতে হবে। অর্ঘ্যর পরিবারের অভিযোগ, যন্ত্রটি তাঁদের কাছে নেই বলে জানিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শিশুটিকে কলকাতার কোনও সরকারি হাসপাতালে দেখানোর জন্য লিখে দেন তাঁরা।

পরিজনেদের দাবি, কল্যাণী থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ট্রেন ধরে অর্ঘ্যকে নিয়ে তাঁরা প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল এবং সেখান থেকে এনআরএসে যান। কিন্তু দুই হাসপাতালই শিশুটিকে ভর্তি করতে রাজি থাকলেও জানিয়ে দেয়, সোমবারের আগে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। অর্ঘ্যর দাদু দীনেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘কল্যাণী থেকেই নাতির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বার বার বমিও করছিল।’’ কোথাও চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ির লোকজন পৌঁছন দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তখন রাত প্রায় ১২টা। কিন্তু তারা শিশুটিকে ভর্তি করতে রাজি হয়নি। এর পরে অর্ঘ্যকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে। পরিবারের দাবি, ওই হাসপাতাল ভর্তি করাতে রাজি হলেও জানায়, অস্ত্রোপচার হবে রবিবার সকালে। তত ক্ষণে শিশুটি কাহিল হয়ে পড়েছে। অবশেষে তার ত্রাতা হয় এসএসকেএম। রাত আড়াইটে নাগাদ সেখানকার ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে শিশুটির গলা থেকে কয়েন বার করেন। রবিবার হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, শিশুটি এখন সুস্থ। আপাতত তাকে তরল খাবার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘রেফার করার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কী লিখছেন, আমরা এখন খুঁটিয়ে দেখছি। এ ক্ষেত্রেও তা খতিয়ে দেখা হবে।’’

Tag: distm

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kid Coin Throat Operation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE