Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Exam

নদী পেরিয়ে খাতা জমা কী করে, চিন্তা সুন্দরবনে 

ঝড়বৃষ্টি হলে ওই সব অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা অকেজো হয়ে যায়। তাই পড়ুয়ারা নির্বিঘ্নে পরীক্ষা শেষ করতে পারবেন কি না, সেই বিষয়ে সংশয় আছে তাঁর। 

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:১৫
Share: Save:

মে মাসের ঘূর্ণিঝড় আমপানের ধাক্কা সুন্দরবন-সাগরদ্বীপের ছাত্রছাত্রীরা এখনও সামলে উঠতে পারেননি। এর মধ্যে অক্টোবরে স্নাতক স্তরের চূড়ান্ত সিমেস্টার ও চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা। আমপান-বিধ্বস্ত অধিকাংশ পড়ুয়ার স্মার্টফোন নেই, দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবা নেই। এর মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাড়িতে বসে পরীক্ষা দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তরপত্র স্ক্যান করে উত্তরপত্র ই-মেল বা হোয়াটসঅ্যাপে কী ভাবে পাঠানো যাবে অথবা কলেজে গিয়ে কী করে তা হাতে হাতে জমা দেওয়া হবে, বুঝে উঠতে পারছেন না পরীক্ষার্থীরা। তাঁদের অসহায় দুর্ভাবনার শরিক বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষেরাও।

সাগর মহাবিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ প্রবীর খাটুয়া বৃহস্পতিবার জানান, ঘূর্ণিঝড়ে তাঁর কলেজের একটি ভবনের ছাদ উড়ে গিয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবার। কলেজে আগে যে-পরিষেবা দেওয়ার বন্দোবস্ত ছিল, ঝড়ের পরে ফের তা চালু করা যায়নি। কোনও মতে কাজ চালানো হচ্ছে। এই কলেজে মূলত পড়তে আসেন সাগরের বোটখালি, বঙ্কিমনগর, মুড়িগঙ্গা, গোবিন্দপুর অঞ্চলের তরুণ-তরুণীরা। আমপানের ধাক্কায় যাঁদের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। এই অবস্থায় পড়ুয়ারা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রশ্নপত্র কী করে দেখবেন, কী ভাবেই বা উত্তরপত্র আপলোড করে পাঠাবেন, তা নিয়ে চিন্তিত তিনি। ঝড়বৃষ্টি হলে ওই সব অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা অকেজো হয়ে যায়। তাই পড়ুয়ারা নির্বিঘ্নে পরীক্ষা শেষ করতে পারবেন কি না, সেই বিষয়ে সংশয় আছে তাঁর।

নামখানার শিবানী মণ্ডল মহাবিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ দয়ালচাঁদ সর্দার জানান, তাঁর কলেজে পড়েন নামখানা, মৌসুনি দ্বীপ, পাথরপ্রতিমার ছেলেমেয়েরা। তাঁরা ই-মেল বা হোয়াটসঅ্যাপে উত্তরপত্র কী ভাবে পাঠাবেন, সেটা বড় প্রশ্ন। তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষার দিনগুলিতে কলেজে কন্ট্রোল রুম খুলতে হবে। পরীক্ষার্থীরা যদি ফোনে জানায় যে, তারা প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করতে পারছে না, তা হলে ফোনেই বলতে হবে। এ ছাড়া পথ নেই। হয়তো শেষে গাড়ি নিয়ে গিয়ে আমাদেরই উত্তরপত্র সংগ্রহ করতে হবে।’’

কাকদ্বীপের সুন্দরবন মহাবিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ প্রবীর দাস বৃহস্পতিবার উপাচার্যের ডাকা বৈঠকে তাঁদের পড়ুয়াদের অসুবিধার কথা জানিয়েছিলেন। মৌসুনি দ্বীপ, জি প্লট, রাক্ষসখালির মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের পড়ুয়ারা তাঁর কলেজে পড়েন। অধ্যক্ষ জানান, নদী পেরিয়ে এসে কলেজে উত্তরপত্র জমা দিতে হলে সে-দিন পরীক্ষার্থীরা আর বাড়ি ফিরতে পারবেন না। কারণ, নৌকা চলাচল নির্ভর করে জোয়ার-ভাটার উপরে। তাই উত্তরপত্র জমা দিয়ে অনেক পড়ুয়াকেই হয়তো সে-দিন কাকদ্বীপে থেকে যেতে হবে। প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি না-থাকায় করোনা-কালে পরীক্ষার্থীদের কলেজ হস্টেলে রাখাও সম্ভব নয়।’’

পরীক্ষার্থীরা ৪০-৫০ পৃষ্ঠার উত্তরপত্র স্ক্যান করে কী করে ই-মেল বা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাবেন, উপাচার্যের বৈঠকে অনেক অধ্যক্ষ তা নিয়ে প্রশ্ন ও আপত্তি তোলেন। সেই সঙ্গে অতিমারির মধ্যে উত্তরপত্র ডাউনলোড করে তা গুছিয়ে পরীক্ষকদের হাতে তুলে দেওয়াটাও মুশকিল বলে মনে করছেন অধ্যক্ষেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Exam Sundarbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE