Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কলেজ ভোটে কই দলবাজি রোখার চাড়

আগের মতো এ বারও। রাজনীতির ছোঁয়া বাঁচিয়ে ছাত্র ভোটকে নিয়মের শৃঙ্খলায় বাঁধার জন্য ফের বার্তা এল। এবং আগে যেমন রাজ্যের শিক্ষা প্রশাসনে এ নিয়ে বিশেষ তাপ-উত্তাপ দেখা যায়নি, এ বারও তা-ই। ফলে পুরো উদ্যোগটা ফের মাঠে মারা যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।

মধুরিমা দত্ত ও সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০৪:১৭
Share: Save:

আগের মতো এ বারও। রাজনীতির ছোঁয়া বাঁচিয়ে ছাত্র ভোটকে নিয়মের শৃঙ্খলায় বাঁধার জন্য ফের বার্তা এল। এবং আগে যেমন রাজ্যের শিক্ষা প্রশাসনে এ নিয়ে বিশেষ তাপ-উত্তাপ দেখা যায়নি, এ বারও তা-ই। ফলে পুরো উদ্যোগটা ফের মাঠে মারা যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।

চলতি মাসে রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। তার মুখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে চিঠি পাঠিয়ে ইউজিসি বলেছে, লিংডো সুপারিশ মেনে যেন নির্বাচন হয়। ছাত্র ভোটে অশান্তি এড়াতে ২০০৬-এ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গড়া হয়েছিল লিংডো কমিশন। রাজনীতির ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে কী ভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, সে সম্পর্কে কমিশন ১৫ দফা সুপারিশ পেশ করে। যা কার্যকর করতে ইউজিসি-কে নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

তার পরে রাজ্যে চার বার চিঠি দিয়েছে ইউজিসি। ২০০৭-এ দু’বার, ২০১৪-য় ও ২০১৫-য়। কিন্তু আলিমুদ্দিন স্ট্রিট বা নবান্নের সায় না-থাকায় কোনও বিশ্ববিদ্যালয় তাতে কর্ণপাত করেনি। এমতাবস্থায় গত ২৭ মে তারা ফের চিঠি দিয়েছে। তবে চিঠি পেলেও নির্দেশ মানা হবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। বরং রাজ্যের শিক্ষা প্রশাসনের হাবে-ভাবে উল্টো ইঙ্গিতই স্পষ্ট। কী রকম?

বিকাশ ভবন সূত্রের ব্যাখ্যা: সিপিএম হোক বা তৃণমূল— ছাত্র ভোটে রাজনৈতিক সংশ্রব এড়ানোর প্রস্তাব কারও পক্ষে মানা সম্ভব নয়। ‘‘শিক্ষাঙ্গণে আধিপত্য কায়েম রাখাটা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বাধ্যবাধকতায় দাঁড়িয়েছে।’’— মন্তব্য এক আধিকারিকের। উপরন্তু ৭৫% উপস্থিতি না-থাকলে, ফেল করলে কিংবা ফৌজদারি বা বিশ্ববিদ্যালয়-আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রার্থিপদ খারিজের মতো সুপারিশ নিয়েও ছাত্রনেতাদের বিলক্ষণ আপত্তি। সূত্রটির কথায়, ‘‘দেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয় লিংডো সুপারিশ মানেনি।
কারও বিরুদ্ধে ইউজিসি ব্যবস্থাও নেয়নি।’’

সরগরম ছাত্র-রাজনীতিও। এসএফআইয়ের নেত্রী মধুজা সেন রায় যেমন বলেন, ‘‘এসএফআই রাজনৈতিক দল নয়। আমাদের আলাদা সংবিধান।’’ টিএমসিপি’র সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য সভাপতি জয়া দত্ত বলেছেন, ‘‘ব্যাপারটা জানি না। নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।’’ তৃণমূলের সহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকার এখনও কিছু জানে না।’’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কী বক্তব্য?

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুগত মারজিত জানিয়েছেন, ইউজিসি’র চিঠি পেলে ভেবে দেখবেন। ‘‘তবে ছাত্রদের স্বার্থে, পঠনপাঠনের স্বার্থে কথা বলা রাজনীতিকে সমর্থন করি।’’— বলছেন তিনি। যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস চিঠি না-পাওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করতে নারাজ।
কল্যাণীর উপাচার্য মলয়েন্দু সাহার প্রতিক্রিয়া, ‘‘লিংডো সুপারিশ সম্বন্ধে কিছু জানি না।’’

দ্বিধাবিভক্ত শিক্ষাবিদ মহলও। ‘‘পড়ুয়া হলে রাজনীতি করা যাবে না কেন?’’— প্রশ্ন যাদবপুরের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসুর। রবীন্দ্রভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য
পবিত্র সরকারের আপত্তি ক্লাসে উপস্থিতির শর্তে। বিদ্যাসাগরের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় সুপারিশের বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই সংশয়ে। প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় অবশ্য অবিলম্বে সুপারিশ কার্যকরের পক্ষপাতী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

College vote group-ism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE