নেত্রী: সমবায় সমিতি ও ব্যাঙ্কের উন্নয়ন নিয়ে একটি সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দ্ু অধিকারী। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। ছবি: সুমন বল্লভ।
ভারতের সমাজ-সংস্কৃতি-অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি গ্রাম। আর সমবায় সমিতিগুলিই গ্রামীণ অর্থনীতির মূল স্তম্ভ বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের গ্রামীণ সমবায় ব্যাঙ্ক ও সমবায় সমিতিগুলিকে আরও চাঙ্গা করে তুলতে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি।
মুখ্যসচিব মলয় দে-র নেতৃত্বে ওই কমিটি ব্যাঙ্কগুলির পরিচালনগত সমস্যা ও কর্মীদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া খতিয়ে দেখে আগামী ছ’মাসের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাদের সুপারিশ জমা দেবে। সরকার সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে বৃহস্পতিবার সমবায় দফতরের উদ্যোগে এক সভায় জানান মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যসচিব দায়িত্ব নিয়ে সকলের সঙ্গে কথা বলে, মতামত নিয়ে আমার কাছে কমিটির হয়ে সুপারিশ পাঠাবেন। ছ’মাসের মধ্যে সরকার যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।’’ তাঁর কথায়, ৮০ লক্ষ মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। কর্মীদের বেতন-কাঠামো নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে। ধাপে ধাপে সেগুলোর সমাধান সম্ভব। উৎসাহ দিতে সমবায় ব্যাঙ্কগুলির মোট আমানতের পরিমাণ বাড়িয়ে এক লক্ষ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়ার ‘টার্গেট’ বা লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দেন তিনি। তার জন্য কাজকর্মে পেশাদারি আনতে কর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ব্যাঙ্কগুলিতে কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়ানোর কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নানা কারণে রাজ্যের অনেক সমবায় ব্যাঙ্ক ও সমিতি দীর্ঘদিন ধরেই টলমল পায়ে চলছে। মূল রোগ আর্থিক শৃঙ্খলার অভাব। তার সঙ্গে আছে পেশাদারি মনোভাবের অভাবও। যথেষ্ট পেশাদারি দক্ষতায় ব্যাঙ্ক পরিচালনা করতে না-পারাতেই এই দুরবস্থা বলে মনে করছে সরকার।
‘‘এক সময়ে সমবায় ব্যাঙ্কগুলি নিজেদের ইচ্ছেমতো চলত। কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। কিন্তু টিকে থাকতে গেলে একটা নিয়ন্ত্রণ তো থাকা দরকার,’’ বলছেন মুখ্যমন্ত্রী।
শৃঙ্খলা প্রসঙ্গে যথাসময়ে ঋণশোধের উপরে জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘প্রয়োজনে ঋণ দিতে হবে নিশ্চয়ই। সময়মতো সেই ঋণ ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে। যাকে খুশি ঋণ দিয়ে দেব, এটা হতে পারে না।’’ লোকসান করে সরকারের কাছে এসে ৫০০ কোটি চাইলেই সরকার দিয়ে দেবে, এমন ভাবনা মাথায় না-আনাই ভাল বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন মমতা। তাঁর পরামর্শ, ব্যাঙ্কের ক্ষতি হয়, এমন কিছু না-করাই উচিত। বরং স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলেই ভিত শক্ত হবে। সেই কাজে সরকার সব রকম সহযোগিতা করবে।
সমবার ক্ষেত্রে সামগ্রিক পরিবর্তন আনতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি চান, রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলি এমন ভাবে পরিচালিত হোক, যাতে সারা দেশের কাছে বাংলা এ ক্ষেত্রেও মডেল বা আদর্শ হয়ে উঠতে পারে। তার জন্য তিনি এ দিন ব্যাঙ্কগুলিকে চারটি মূল মন্ত্র মেনে চলার পরামর্শ দেন। সেগুলো হল স্বচ্ছতা, আর্থিক শৃঙ্খলা, পেশাদারি এবং নিয়মিত আর্থিক লেনদেনের হিসেব পরীক্ষা। এই চার স্তম্ভের উপরে দাঁড়িয়েই রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলি এক দিন দেশের সেরা হয়ে উঠতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
‘আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমবায়’— এই স্লোগান নিয়েই রাজ্যের সব ধরনের সমবায় সমিতি, ব্যাঙ্ক ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে নিয়ে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সভা ডেকেছিল সমবায় দফতর। সারা রাজ্য থেকে মানুষ যোগ দেন তাতে। মুখ্যমন্ত্রীর আগে রাজ্যের উন্নয়নে সমবায় আন্দোলনের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়-সহ অনেকেই। অরূপবাবু জানান, গত কয়েক বছরে তাঁরা অনেক ব্যাঙ্ককেই স্বনির্ভর করে তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর গড়ে দেওয়া কমিটি সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে নতুন দিশা দেখাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy