Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

তোলাবাজের দাপটে হচ্ছে না কারখানা, নালিশ শিল্পোদ্যোগীর

সে শিল্পেই হোক বা কৃষিতে, তোলাবাজি যে তিনি কোনও মতেই বরদাস্ত করবেন না— পুলিশ-প্রশাসন ও দলের নেতা-কর্মীদের এ দিনও সেই বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত মঙ্গলবার ব্যারাকপুরে উত্তর ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে টিটাগড় জাহাজ কারখানার রাস্তায় কেন এখনও জবরদখল রয়ে গিয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলে তুলোধোনা করেছিলেন পুলিশকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য
তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৭ ০৪:৫৫
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীকে হাতের কাছে পেয়ে এক রকম মরিয়া হয়েই কথাটা বলে ফেললেন তিনি। আর তাঁর এই কথা থেকে বেরিয়ে এল, কী ভাবে তোলাবাজদের খপ্পরে পড়ে কারবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীরা। আর সেই তোলাবাজদের আশ্রয় দিচ্ছেন শাসক দলের নেতাদেরই একাংশ।

বৃহস্পতিবারের হুগলির প্রশাসনিক বৈঠকে পোলবার ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগী রফিকুল হাসান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেন, ‘‘ম্যাডাম, আমি কারখানা করতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে গিয়েছি।’’ মঞ্চে বসা মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি-র সামনে এমন কথা শুনে খানিকটা হতচকিত হয়ে মুখমন্ত্রী জানতে চান, ‘‘কী বলছেন?’’ রফিকুল আবারও বলেন, ‘‘তোলাবাজদের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছি। ওদের বাধায় আজ পর্যন্ত কারখানা করতে পারলাম না।’’ রফিকুলের কথায় কিছুটা হলেও তাল কাটে বৈঠকের। মুখ্যমন্ত্রী রফিকুলের কাছে জানতে চান, ‘‘সরকারকে জানিয়েছেন?’’ জবাব মেলে, ‘‘অনেক বার জানিয়েছি। কিন্তু কিছুই হয়নি।’’ এ বার মমতা সুর চড়িয়ে বলেন, ‘‘কেন তোলাবাজদের টাকা দেবেন?’’ তার পরে জেলার পুলিশ সুপার সুকেশ জৈনকে বলেন, ‘‘পোলবা থেকে আমি অনেক অভিযোগ পেয়েছি। ওখানকার চাষিরা এসেছিলেন আমার কাছে। বলেছেন জেল থেকে কিছু লোক ওদের ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে। কিছু লোক বাইক নিয়ে গিয়ে তোলা চাইছে। এ সব কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না।’’ অভিযোগ পাওয়ার পরেই যে তিনি গোটা বিষয়টি ডিজি-কে তদন্ত করে দেখতে বলেছিলেন, এ দিন সে কথাও মনে করিয়ে দেন মমতা।

সে শিল্পেই হোক বা কৃষিতে, তোলাবাজি যে তিনি কোনও মতেই বরদাস্ত করবেন না— পুলিশ-প্রশাসন ও দলের নেতা-কর্মীদের এ দিনও সেই বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত মঙ্গলবার ব্যারাকপুরে উত্তর ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে টিটাগড় জাহাজ কারখানার রাস্তায় কেন এখনও জবরদখল রয়ে গিয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলে তুলোধোনা করেছিলেন পুলিশকে। বলেছিলেন, ‘‘শিল্পের প্রসারে আমি কোনও বাধা বরদাস্ত করব না। তোলাবাজির অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড়ব না।’’ পাশাপাশি জার্সির রং না দেখেই গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশ কর্তাদের। রফিকুলের কথার খেই ধরে এ দিনও সেই পুলিশকেই কাঠগড়ায় তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশের কাজে যে তিনি অসন্তুষ্ট, হুগলির বৈঠকেও সেই বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

রফিকুলের অভিযোগ একটা উদাহরণ মাত্র। তাঁর মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের যে তোলা দিতে দিতে নাভিশ্বাস উঠছে এবং তার জেরে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন, তা বিলক্ষণ জানে পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ। কিন্তু জেনেও যে বহু ক্ষেত্রেই সুরাহা মিলছে না, রফিকুল তার বড় প্রমাণ। রফিকু‌ল বলেন, ‘‘বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানার জন্য ২০১০-এ পোলবার রাজহাটে তিন বিঘে ১৭ কাঠা জমি কিনেছিলাম। ২০১১-তে পালাবদলের পরে এলাকার কিছু তৃণমূল নেতা ৬ ‌লক্ষ টাকা তোলা চায়। আমি দু’লক্ষ টাকা দিই।’’ কিন্তু তার পরেও রফিকুল কারখানা দাঁড় করাতে পারেননি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তোলার চার লক্ষ টাকা বকেয়া থাকার পরে পঞ্চায়েত ৪ বছর ধরে আমার ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ আটকে রেখেছি‌ল। অবশেষে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের হস্তক্ষেপে সেটা পেয়েছি। কিন্তু পেয়ে কী হবে? কারখানাই তো করতে পারলাম না।’’

রফিকুল এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে তোলাবাজির কথা বলতে পারলেও অনেকেই সাহস করে বলতে পারছেন না, তা বুঝেই হুগলির দুই প্রভাবশালী নেতা, কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত ও চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত (তপন) মজুমদারকে কড়া ভাষায় বলেছেন, ‘‘তোলাবাজদের প্রোটেকশন দেওয়া যাবে না। আমি যেন আর না শুনি।’’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কোন্নগরের পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়কেও, ‘‘তোমার বিরুদ্ধেও অনেক কমপ্লেন!’’

ঘাড় নেড়ে সায় দেন তিন জনেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE