Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Education

প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণির অন্তর্ভুক্তি: পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন

জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, জেলার ৩২টি চক্রের চিহ্নিত স্কুলগুলির একটা অংশের শিক্ষকেরা আপত্তি জানিয়েছেন। তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের পরে যে স্কুলে ছেলেমেয়েরা পড়তো, সেই স্কুলেই থাকবে নাকি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করব, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন অনেক অভিভাবকরাও।

প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি শুরু করার নির্দেশ থাকলেও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। (প্রতীকী চিত্র: পিটিআই)

প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি শুরু করার নির্দেশ থাকলেও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। (প্রতীকী চিত্র: পিটিআই)

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৪৩
Share: Save:

আর কয়েক’টা দিন। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি থেকে জেলার ৬১৯টি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু, ভর্তি প্রক্রিয়া কী ভাবে হবে? পড়ুয়াদের বই কখন আসবে? পর্যাপ্ত শিক্ষক, শিক্ষিকা পরিকাঠামো না থাকলে বিকল্প কী ব্যবস্থা? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া এখনও বাকি। শিক্ষক, শিক্ষিকাদের কথায়, প্রতি চক্রে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক এই বিষয়ে বৈঠক করলেও সব কিছু স্পষ্ট নয়। তাই প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি শুরু করার নির্দেশ থাকলেও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।

জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, জেলার ৩২টি চক্রের চিহ্নিত স্কুলগুলির একটা অংশের শিক্ষকেরা আপত্তি জানিয়েছেন। তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের পরে যে স্কুলে ছেলেমেয়েরা পড়তো, সেই স্কুলেই থাকবে নাকি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করব, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন অনেক অভিভাবকরাও। তবে জেলা শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, ভাবনার কিছু নেই। শিক্ষাবর্ষ শুরু এবং ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর আগেই সমস্ত নির্দেশিকা ও গাইডলাইন স্কুলগুলিতে পৌঁছে যাবে।

প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করার ব্যাপারে চলতি বছরের গোড়া থেকেই উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই পরিকল্পনা মতো প্রাথমিকের পরিকাঠামো, শিক্ষক, পড়ুয়া সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানানোর জন্য জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল স্কুল শিক্ষা দফতর। দফতর সূত্রের খবর, ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীর হিসেব শিক্ষা দফতরে জমা দিতে বলা হয়। যে-সব স্কুলে বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে, তাদেরও তথ্য চাওয়া হয়েছিল।

গত মাসে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, যে-সব প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন চালানোর মতো পরিকাঠামো আছে, সেই সব স্কুলে ওই শ্রেণির পাঠ দেওয়া হবে আসন্ন শিক্ষাবর্ষেই। তার পরে পর্যায়ক্রমে এটা চালু হবে সব প্রাথমিক স্কুলে। রাজ্যের মোট ৫৮ হাজার প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে ১৭৯৯৬টি স্কুলে চালু হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন। জেলায় মোট প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ২৪০২টি। তার মধ্যে ৬১৯টি স্কুলকে পঞ্চম শ্রেণিতে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।

সেই নির্দেশিকা নিয়েই কিন্তু রয়েছে। জেলার শিক্ষক মহলের একটা অংশ জানাচ্ছেন, চিহ্নিত বেশ কিছু স্কুলেই পরিকাঠামো গত খামতি রয়েছে। প্রথমত, অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। রয়েছে শিক্ষক শিক্ষিকার সমস্যা। শিশুশ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি, চারটি ক্লাসের জন্য পাঁচ জন শিক্ষক হাতেগোনা কিছু স্কুলে রয়েছে। বাকিগুলিতে শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যা চার জন। অতিরিক্ত পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের পাঠদান ঠিক ভাবে করতে হলে শিক্ষক, শিক্ষিকার সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। তা ছাড়া এত দিন চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের রেজাল্ট ও টিসি দিয়ে দেওয়া হত। এখন সেই সব পড়ুয়াদের মার্কশিট পোর্টালে আপলোড করার পরে নতুন রেজিস্ট্রার তৈরি করে ভর্তি করতে হবে কি না কিছুই বলা হয়নি।

আরও একটি বিষয় হল বই। এত দিন যে ভাবে উচ্চ বিদ্যালয়গুলিতে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের বই দেওয়া হত, সেটা দেওয়া হয়েছে। চিহ্নিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বই কী ভাবে দেওয়া হবে সেটা বলা হয়নি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি প্রলয় নায়েক বলছেন, ‘‘গাইডলাইন পৌঁছে যাবে ২ জানুয়ারির আগেই। কিছু স্কুলে শ্রেণিকক্ষের সমস্যা রয়েছে। সেটাও মেটানো হবে। শিক্ষক, শিক্ষিকার সংখ্যা কম থাকলে যে সব স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষক রয়েছেন সেখান থেকে শিক্ষকের ব্যবস্থা করা হবে। ২ জানুয়ারি বুক ডে। এ দিন নতুন ক্লাসে উত্তীর্ণ পড়ুয়াদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া হয়। সে দিনই বই পাবে পড়ুয়ারা।’’

জেলা শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, এ বার প্রতিটি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি হবে। শুধুমাত্র নির্বাচিত স্কুলগুলির পড়ুয়াদের বাদ দিয়ে। আগামী দিনে পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটিয়ে পর্যায় ক্রমে পঞ্চম শ্রেণি শুরু হবে অন্য স্কুলেও। অধিকাংশ স্কুলই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। তাঁদের অনেকের কথায়, ‘‘দূরের মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে গিয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার চেয়ে নিজের স্কুলে আরও একটা বছর পড়াশোনা করতে পারলে স্কুলছুট কমবে।’’ বামপন্থী শিক্ষক সংগঠনের জেলা সম্পাদক ভারত পালও সহমত। তিনি বলছেন, ‘‘উদ্দেশ্য ভাল। তবে সবার আগে প্রয়োজন পর্যাপ্ত শিক্ষক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Primary Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE