Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জোটসঙ্গী বাছা নিয়ে সংশয়েই সনিয়া ও রাহুল

বাম না তৃণমূল? পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে কার হাত ধরবে কংগ্রেস? এ ব্যাপারে এখনও সংশয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এবং সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী। কয়েক দিন ধরে এ ব্যাপারে ওয়ার্কিং কমিটির অন্তত আধ ডজন বর্ষীয়ান নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন সনিয়া এবং তাঁর পুত্র।

শঙ্খদীপ দাস
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৬
Share: Save:

বাম না তৃণমূল? পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে কার হাত ধরবে কংগ্রেস? এ ব্যাপারে এখনও সংশয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এবং সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী। কয়েক দিন ধরে এ ব্যাপারে ওয়ার্কিং কমিটির অন্তত আধ ডজন বর্ষীয়ান নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন সনিয়া এবং তাঁর পুত্র। কিন্তু তাতেও সংশয় কাটেনি। তবে রাহুল বেশি দিন বিষটি ঝুলিয়ে রাখার পক্ষপাতী নন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে রাজ্য নেতাদের সঙ্গে আর এক বার আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে চান তিনি।

প্রদেশ কংগ্রেসের সিংহভাগ নেতা বামেদের সঙ্গে জোটের পক্ষে। সে কথা কিছু দিন আগে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র নেতা সি পি জোশীর সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা জানিয়েছেন। হাইকম্যান্ডের সঙ্গে কথার জন্য আজই দিল্লি পৌঁছেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তার আগে আজ প্রাক্তন তৃণমূল নেতা পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি। পঙ্কজবাবু তৃণমূলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন বলে অধীর জানান।

বামেদের সঙ্গে জোট হলেই যে কংগ্রেসের লাভ, তা বুঝিয়ে আজই সনিয়াকে চিঠি দেন ওমপ্রকাশ মিশ্র। জোট-পথ খুলতে বুধবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর কিছু সদস্যের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনাও করেছেন কিছু প্রদেশ কংগ্রেস নেতা। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু প্রকাশ্যে বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্য সম্পাদক যে বার্তা দিয়েছিলেন, তার পরে কংগ্রেসের থেকে সাড়া আসেনি।’’

কংগ্রেস সূত্রের খবর, ইউরোপ থেকে িফরে রাহুল পশ্চিমবঙ্গের ভোট নিয়ে আহমেদ পটেল, শাকিল আহমেদ, গুলাম নবি আজাদ প্রমুখের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু ওই নেতাদের মধ্যে বামেদের সঙ্গে জোট গড়ার ব্যাপারে মতভেদ থাকাতেই হাইকম্যান্ড সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। দলীয় সূত্রের খবর, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক প্রবীণ সদস্য রাহুলকে বলেন, বঙ্গে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। পুরভোটের ফলে তা বোঝা যাবে না। তখন ভোটে শাসকদল গা-জোয়ারি করেছে। কিন্তু বিধানসভা ভোটে সেটা করা তৃণমূলের পক্ষে মুশকিল। তাই বাম-কংগ্রেস জোট হলে তৃণমূল ধাক্কা খাবে। তাতে রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতাও টিকে থাকবে। দলীয় সূত্রের খবর, রাহুল তাঁকে প্রশ্ন করেন, বাম-কংগ্রেস জোট হলে একে অপরের ভোট কি পাবে? ওই নেতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা কংগ্রেসকে ভোট দেন, তাঁদের কাছে এখন বড় শত্রু তৃণমূল। আর বিহার দেখিয়ে দিয়েছে, জোটের আবহ তৈরি করতে পারলে এগুলি আর কোনও বাধা হয় না। জোটের ব্যাপারে কংগ্রেস নেতৃত্বের উপর চাপ রাখছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতারাও।

তবে এ বিষয়ে রাহুলকে নিজেদের অমতের কথা স্পষ্ট জানান কংগ্রেসের দুই শীর্ষ নেতা। রাহুলকে তাঁরা বলেন, রাজ্য স্তরে জোট হলেও জাতীয় স্তরে সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে থাকবে কি না, সংশয় আছে। আর ওই জোট হলে বিজেপি পরোক্ষে তৃণমূলকে সুবিধা করে দেবে। ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেও কাজে ঢিলে দেবে। তাই কংগ্রেসের উচিত তৃণমূলের সঙ্গে জোটের চেষ্টা করা। কারণ তাতে বিধানসভায় ৫০ জন বা তার বেশি বিধায়ক জিতিয়ে আনা যাবে এবং এই সমীকরণ পরবর্তী লোকসভা ভোটের সময়েও কাজে আসতে পারে। দলীয় সূত্রের খবর, বিধানসভায় কংগ্রেসের আসন বাড়ার সম্ভাবনার কথা শুনে উৎসাহ প্রকাশ করেন রাহুল। তবে এই মতের বিরোধী এআইসিসি-র অন্য এক নেতা সনিয়া ও রাহুলকে বলেন, প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা তৃণমূলের সঙ্গে জোটে অরাজি। অধীরই বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কংগ্রেসের মধ্যে মৌলবাদী। মমতাও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট চান না। কারণ, তাতে কংগ্রেসের আসন বাড়তে পারে। আর বিজেপিও মমতার উপর চটবে। ভোটের আগে কেন্দ্রের ৪ জন মন্ত্রীর বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে অংশ নেওয়া বা সাগরে গভীর সমুদ্র বন্দরের শিলান্যাস করতে নরেন্দ্র মোদীর রাজি হওয়া তাৎপর্যপূর্ণ। দলের ওই নেতার কথায়, ‘‘আসলে তৃণমূল চায়, কংগ্রেস একা লড়ুক। কারণ, চতুর্মুখী লড়াই হলে তৃণমূল অনায়াসে ২০০ আসন পাবে। কিন্তু কংগ্রেস ১০টির বেশি পাবে না।’’

জোশী বলেন, ‘‘জোটের ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির যাতে সুবিধা না হয়, সেটা মাথায় রেখেই সূত্র নির্ধারিত হবে।’’ এর অর্থ ভাঙতে চাননি জোশী। কিন্তু কংগ্রেসের একটি সূত্রের মতে, জোশীর এই কথাতেও বামেদের সঙ্গে জোটের ইন্ধন রয়েছে।

(তথ্য সহায়তা: কলকাতা ব্যুরো)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

congress alliance bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE