গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
জিতেছিলেন ৪৪ জন। সিপিএমের সঙ্গে আসন সমঝোতা ছিল বটে। কিন্তু সিপিএম-কে ছাপিয়ে গিয়েছিল কংগ্রেস। দেড় দশক পরে রাজ্যে প্রধান বিরোধী দলের তকমা ফিরে পেয়েছিল কংগ্রেস।
২০১৬-র সেই বিধানসভা নির্বাচনের পরে মাত্র বছর দুয়েক কেটেছে। এর মধ্যেই ‘প্রধান বিরোধী’ তকমা যায় যায়। একের পর এক বিধায়ক ‘হাত’ ছেড়ে সামিল ‘জোড়াফুলে’। সে কথা দলত্যাগীরা বিধানসভায় স্বীকার করছেন না। কিন্তু নিজের নিজের এলাকায় তৃণমূলই করছেন। ফলে বেনজির পরিস্থিতিতে বাংলার কংগ্রেস। পরবর্তী ভোট পর্যন্ত ক’জন বিধায়ক পড়ে থাকবেন, নিশ্চিত নয় বিধান ভবন।
গত বিধানসভা নির্বাচনে যে ৪৪টি আসনে কংগ্রেস জিতেছিল, তার মধ্যে ২টি বৈধ ভাবেই দখল করেছে তৃণমূল। উত্তর চব্বিশ পরগনার নোয়াপাড়ার বিধায়ক মধুসূদন ঘোষ প্রয়াত হওয়ায় সেই আসনে উপনির্বাচন হয়। জয়ী হয় তৃণমূল। পশ্চিম মেদিনীপুরে সবং কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া দল ছেড়ে তৃণমূলে যান। বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন। উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জিতে আসেন মানসবাবুর স্ত্রী। এতেই ৪২-এ নেমে গিয়েছিল কংগ্রেস।
ওই ৪২ জন বিধায়ক হাতে থাকলেও বামেদের চেয়ে এগিয়েই থাকত কংগ্রেস। কিন্তু এ রাজ্যের কংগ্রেস পরিষদীয় দল স্পষ্ট করে বুঝতেই পারছে না, ঠিক কত জনকে এখনও কংগ্রেস বিধায়ক হিসেবে ধরা যেতে পারে। নোয়াপাড়া এবং সবং হাতছাড়া হওয়ার পরে আরও অন্তত ১৭ জন কংগ্রেস বিধায়ক তৃণমূলে সামিল হয়ে গিয়েছেন।
আইন অনুযায়ী, দলত্যাগে বিধায়ক পদ খারিজ হওয়ার কথা। কিন্তু কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া এই বিধায়কদের কেউই বিধানসভায় বলছেন না যে, তাঁরা দল ছেড়েছেন। কংগ্রেসের অভিযোগের ভিত্তিতে স্পিকার তাঁদের অবস্থান জানতে চাইলেই এঁরা বলছেন যে, কংগ্রেসেই রয়েছেন।
অর্থাৎ ২টি আসন উপনির্বাচনে খুইয়েছে কংগ্রেস। আর ১৭টি আসন কার্যত হাতছাড়া বিধায়কদের ‘দলবদলের’ জেরে। অধীর চৌধুরী-আব্দুল মান্নানদের হাতে তা হলে রইলেন ক’জন বিধায়ক? সাকুল্যে ২৫ জন।
এই ২৫ বিধায়ক এখনও জোড়াফুলের পতাকা হাতে তুলে নেননি বটে। কিন্তু ফরাক্কার মইনুল হকের গতিবিধি নিয়ে অনেক দিন ধরেই সংশয়ে রয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস সাংসদ তথা গনি খান চৌধুরীর ভাই ডালুকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকেও সম্প্রতি ঘুরে এসেছেন মইনুল। মুর্শিদাবাদ এবং মালদহের আরও বেশ কয়েক জন বিধায়ককে দলে টানতে তৃণমূল সক্রিয় হয়েছে বলেও জল্পনা।
দলের এই ভাঙন নিয়ে প্রদেশ নেতৃত্ব উদ্বিগ্ন তো বটেই। উদ্বেগে দিল্লিও। সদ্য ৪ বিধায়ক একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে হাজির হয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন। কিন্তু বিধানসভায় অবস্থান স্পষ্ট করতে বলা হলেই এই ৪ বিধায়কও সম্ভবত অন্যদের মতোই বলবেন যে, তাঁরা কংগ্রেসে রয়েছেন। ফলে দলত্যাগ বিরোধী আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারবে না কংগ্রেস। ঠিক যেমন পারেনি বাকিদের বিরুদ্ধেও।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী নিজে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের সঙ্গে। মান্নান রাহুলকে নিজের অসহায়তার কথা ছাড়া আর কিছু বলতে পারেননি বলেই জানা গিয়েছে।
প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র ওমপ্রকাশ মিশ্র অবশ্য ভাঙন রোধে নিজেদের ব্যর্থতার কথা মানলেন না। তিনি বললেন, ‘‘এটা তৃণমূলের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা। বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিধায়কদের। খুনের মামলা দেওয়া হচ্ছে। ভয় দেখিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। তার পরে মামলা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’’ কংগ্রেস থেকে মানস ভুঁইয়া, রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে বা ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে উদয়ন গুহকে ওই ভাবেই তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে ওমপ্রকাশ দাবি করেন। ওমপ্রকাশের কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নর্দমার রাজনীতি করছেন। গত ২০ বছর ধরে কংগ্রেস ভাঙানোটাই তাঁর একমাত্র কাজ। কংগ্রেস এ রাজ্যে এর পরেও তাঁর সঙ্গে জোট করবে, এমনটা না ভাবলেই তিনি ভাল করবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy