প্রতীকী ছবি।
দু’জন করে বিধায়কের হাতে জোড়া ফুলের পতাকা ধরানো হচ্ছে। আর তৃণমূলের নেতৃত্ব দাবি করছেন, কংগ্রেস আরও ভাঙবে! প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতিও হারাবে কংগ্রেস। কিন্তু পরিস্থিতি কি সত্যিই তা-ই? দাবি ও পাল্টা দাবিতে তেতে উঠছে বির্তক!
গত বছর বিধানসভা ভোটে বামেদের সমর্থনে কংগ্রেসের ৪৪ জন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত ৮ জন বিধায়ক ‘হাত’ ছেড়ে শাসক দলে যোগদানের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। রাজ্য বিধানসভায় মোট বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ন্যূনতম ৩০ জন বিধায়ক থাকতে হয়। তৃণমূল নেতৃত্বের যুক্তি, ভাঙতে ভাঙতে কংগ্রেস থেকে আরও ৬-৭ জন বেরিয়ে এলেই আব্দুল মান্নানের বিরোধী দলনেতার পদ চলে যাবে! কিন্তু সংবিধান সম্পর্কে অবহিত বা প্রাক্তন স্পিকারের মতো ব্যক্তিত্বেরা বলছেন, তৃণমূল যে পথ নিয়ে এখনও চলছে, তাতে এমনকী ১০ জন বিধায়ক নিয়েও কংগ্রেস প্রধান বিরোধী দল থেকে যেতে পারে!
তৃণমূল ভবনে শাসক দলের পতাকা হাতে নিলেও বিধানসভায় কংগ্রেসের নোটিসের জবাবে দলত্যাগী সব বিধায়কই লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, তাঁরা কংগ্রেস ছা়ড়েননি। বিধানসভার এক বর্ষীয়ান আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘দলত্যাগীরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে নিজেরা না জানালে বা ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলের হয়ে উপনির্বাচনে না দাঁড়ালে বিধানসভায় কংগ্রেসের সংখ্যা পরিবর্তন হবে না। একের পর এক বিধায়ক চলে গিয়ে কার্যক্ষেত্রে কংগ্রেসের বেঞ্চে যদি ১৫ বা ১০ জন বিধায়কও থাকেন, প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি আইনত কেড়ে নেওয়া যাবে না।’’
শাসক শিবির সূত্রে অবশ্য পাল্টা যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, বাইরে কী হচ্ছে, সেটা বিধানসভার বিবেচ্য নয়। দু-তিন জন করে দল ছাড়তে ছাড়তে যখন সংখ্যাটা বড় হয়ে যাবে, তখন ওই বিধায়কেরা একসঙ্গে জানাবেন যে, তাঁরা তৃণমূলে গিয়েছেন। তা হলেই কংগ্রেসের স্বীকৃতি থাকবে না। এখানে আবার পাল্টা যুক্তি আছে কংগ্রেস নেতৃত্বের। সংবিধানের দশম তফসিলের দলত্যাগ সংক্রান্ত বিষয়ের ১০২ (২) এবং ১৯১ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য একসঙ্গে দল ছাড়লে তবেই দলত্যাগ-বিরোধী আইন প্রযোজ্য হবে না। সেই হিসাবে কংগ্রেসের ৪৪ জনের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ২৮ জনকে একসঙ্গে তৃণমূলে যেতে হবে। আলাদা আলাদা সময়ে আলাদা আলাদা বিধায়ক দল ছেড়ে পরে ‘একসঙ্গে’ দলত্যাগের কথা বললে তা গ্রাহ্য হয় না বলেই তাঁদের দাবি। বিরোধী দলনেতার মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল বলছে, তাদের এখন ২২১ জন বিধায়ক। তাঁদের নামের তালিকা লিখে স্পিকারকে জানিয়ে দিন না! তা হলেই বোঝা যাবে!’’ আর তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘এমনও হতে পারে, দলত্যাগীরা আলাদা ব্লক হিসাবে কাজ চালিয়ে গেলেন।’’
লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার তথা আইনজীবী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, যা চলছে, তা ‘অগণতান্ত্রিক ও বেআইনি’। তাঁর কথায়, ‘‘আইন খুব পরিষ্কার। এই ভাবে দলত্যাগের আইন থেকে বাঁচা যায় না। স্পিকারকে নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু চোখের সামনে গণতন্ত্রকে হত্যা এবং নির্বাচকদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা দেখা দুর্ভাগ্যজনক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy